স্বজনদের ক্ষোভ, এমন নৃশংস কায়দায় একরামকে হত্যা করা হলেও মামলার ১৯ আসামি এই পাঁচ বছরেও ধরা পড়েনি। এদের মধ্যে ১৭ জনই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত।
একরামকে হত্যা করা পর রাতে তার বড় ভাই জসিম উদ্দিন বাদী হয়ে বিএনপি নেতা মাহাতাব উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মিনারকে প্রধান আসামি করে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ৫৯ জন সাক্ষীর মধ্যে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৫০ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে ১৬ জন বিচারিক আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। দীর্ঘ বিচারকাজ শেষে ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনীর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনুল হক রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে ৩৯ জনের ফাঁসিসহ ৫৫ জনকে সাজা দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ২২ জন রয়েছেন কারাগারে। আটজন জামিনে নিয়ে পলাতক হয়েছে এবং নয়জন শুরু থেকেই পলাতক।
মৃত্যুদণ্ডিত কারাবন্দি ২২ জন হলো হত্যার পরিকল্পনাকারী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী ওরফে সিফাত, আবু বক্কার সিদ্দিক ওরফে বক্কর, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।
মৃত্যুদণ্ডিত পলাতক ১৭ জন হলো ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম আবিদ, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আরমান হোসেন কাউসার, জাহেদুল হাসেম সৈকত, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, জসিম উদ্দিন নয়ন, এমরান হোসেন রাসেল ওরফে ইঞ্জি. রাসেল, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, একরাম হোসেন আকরাম, শফিকুর রহমান ময়না, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, মহিউদ্দিন আনিছ, বাবলু ও টিটু।
এদের মধ্যে জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় জাহিদ চৌধুরী, এমরান হোসেন রাসেল, জাহেদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মো. নাফিজ উদ্দিন অনিক, আবিদুল ইসলাম আবিদ, জিয়াউর রহমান বাপ্পি ও আরমান হোসেন কাউসার। আর গ্রেফতারই করা যায়নি ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মো. এরফান ওরফে আজাদ, শফিকুর রহমান ময়না, একরাম হোসেন আকরাম, মহি উদ্দিন আনিছ, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, টিটু, বাবলুকে।
মামলা থেকে খালাস ১৬ জন হলেন বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, একরামের একান্ত সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা ওরফে কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক। এর বাইরে রুটি সোহেল নামে এক আসামি র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়।
একরামের ভাই মোজাম্মেল হক বাংলানিউজকে বলেন, একরাম হত্যা মামলার ১৯ আসামি পাঁচ বছরেও ধরা পড়েনি, এদের মধ্যে ১৭ আসামিই ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত। বাকি দু’জনও সাজাপ্রাপ্ত।
তিনি বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা যেন কোনোভাবে রেহাই না পায় সেদিকে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে। একইসঙ্গে রায় দ্রুত কার্যকর করতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে।
ফেনী জেলা কারাগারের জেলার মো. দিদারুল আলম জানান, রায়ের পর আসামিদের ফেনী জেলা কারাগার থেকে ঢাকার কাশিমপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। তবে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ফেনী জেলা কারাগারে রয়েছে আসামি নুর উদ্দিন মিয়া, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ ও তোতা মানিক। দণ্ডপ্রাপ্ত এ তিন আসামি একাধিক মামলার আসামি হওয়ায় আদালতে হাজিরা দিতে কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে তাদের ফেনী কারাগারে আনা হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা জেলা কারাগারে রয়েছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির আদেল ও আবদুল্লাহ হিল মাহমুদ শিবলু।
এদিকে একরাম স্মরণে তার গ্রামের বাড়িতে পরিবারের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
এ উপলক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার (২১ মে) বাদ মাগরিব ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে দলীয় কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল ও শোকসভারও আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া একরামুল হক একরামের আত্মার শান্তি কামনায় ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এমপির উদ্যোগে মাস্টার পাড়ায় হাজারী বাড়ী জামে মসজিদ এতিমখানার প্রায় শতাধিক এতিমের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৭ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
এসএইচডি/এইচএ/