ওইসব পণ্য সরানোর বিষয়ে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে প্রতিবেদন দাখিলের পর বৃহস্পতিবার (২৩ মে) শুনানিতে এমন মন্তব্য করেছেন বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। ভোক্তা অধিকারের পক্ষে ছিলেন কামরুজ্জামান কচি।
প্রাণ অ্যাগ্রো লিমিটেডের পক্ষে ছিলেন এম কে রহমান; এসিআই-এর পক্ষে ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ এবং সান চিপসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজীব উল আলম। আর বাঘাবাড়ী ঘিয়ের পক্ষে ছিলেন মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, হাইকোর্টের আদেশ দেওয়ার পরও আপনার কার্যালয়ের পাশের (ইস্কাটন) দোকান থেকে ১৭ জন মিলেও একটি মসলার প্যাকেট জব্দ করার সাহস নেই! এত ভয় কেন? বড় বড় কোম্পানিকে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে চাকরি করার দরকার কী? ঘরে গিয়ে রান্নাবান্না করুন। ব্যাংকে গিয়ে কেরানির চাকরি নিন। বসে বসে টাকা গুনবেন, টাকার হিসাব রাখবেন।
আদালত বলেন, আমাদের আদেশ পছন্দ না হলে আপিল বিভাগে যেতে পারেন। কিন্তু তা না করে আদেশ মানবেন না, তা হবে না। আমরা আদেশ দিয়েছি, তা মানতে হবে। এ নিয়ে কোনো আপস নয়। আদালত বলেন, আপনাদের শোডাউন করতে সমস্যা হচ্ছে না, টিভি ক্যামেরা নিয়ে লম্বা লম্বা বক্তব্য দিতে পারেন, কিন্তু একটি পণ্যও জব্দ করতে পারলেন না।
এসময় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমরা সব জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের চিঠি দিয়েছি। ৫২টি মামলা করেছি। আর সারাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিবেদন পাইনি। তাই এ মুহূর্তে আদালতে জানাতে পারিনি।
এই আদালত বলেন, ব্যবস্থা নিতে অন্যদের কাছে চিঠি দিতে আপনাদের কে বলেছে? আপনাদের প্রতি আমরা নির্দেশ দিলাম। আপনারা নিজেরা দায়িত্ব পালন না করে অন্যদের চিঠি দেন। আবার বলছেন, এখনও সারাদেশ থেকে প্রতিবেদন আসেনি। উল্টাপাল্টা বলবেন না। হাইকোর্টকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছেন? আপনারা সোজা পথে যান না কেন? আপনারা যা করেছেন তা আইওয়াশ মাত্র।
তবে নিম্নমানের ৫২টি পণ্য জব্দের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নেওয়া পদক্ষেপ আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবী। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিম্নমানের পণ্য জব্দের তথ্য তুলে ধরেন। এসময় আদালত তাদের কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি আপনারা আপনাদের কাজ অব্যাহত রাখবেন।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১২ মে বিএসটিআইয়ের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নিম্নমানের ৫২টি পণ্য বিক্রি বন্ধ ও বাজার থেকে জব্দ করতে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই আদেশ বাস্তবায়ন বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিবেদন দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। আদেশ অনুসারে প্রতিষ্ঠান দু’টি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে।
এদিকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হাইকোর্টের আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু আদালত তা আমলে নেননি।
সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রতিবেদন ১৬ তারিখের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে আদালতের আদেশ সংশোধন চেয়ে আবেদন করে ৫২ পণ্যের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আদালত তা আমলে নেওয়ার মতো কোনো যুক্তি খুঁজে পাননি। এসময় আদালতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিটেস্ট অলরেডি বিএসটিআই শুরু করেছে।
তবে ৫২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কেউ যদি তাদের পণ্য বাজারজাত করতে পুনরায় টেস্ট করাতে চায় তাহলে ১৩ জুনের মধ্যে তাদের পণ্য টেস্ট করতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
ইএস/এএ