জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১১ জুন) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রুল জারি করেন।
রুলে ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুকে পুনর্বাসন করতে ক্ষতিপূরণ স্কিম (রূপরেখা প্রকল্প) গঠন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে নারী-শিশুদের সুরক্ষায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন নজরদারিতে আনতে ও যৌন হয়রানি বা যৌন সন্ত্রাস থেকে তাদের পর্যাপ্ত নিরাপদ রাখতে এবং সুরক্ষা দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
এছাড়াও নরসিংদীতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণের শিকার হয়ে নিহত নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়া ও আত্মহননকারী রাজশাহীর নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তারের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইনগত সহায়তাকারী সংগঠনের চেয়ারম্যান, পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানা ও রাজশাহীর মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গত ১৬ মে শ্লীলতাহানির গ্লানিতে রাজশাহীর মোহনপুরে বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা (১৪) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
ওইদিন রাজশাহীর মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হোসেন বাংলানিউজকে জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৩ এপ্রিল প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সুমাইয়া। বিকেল হয়ে গেলেও বাড়ি না ফেরায় পরিবার লোকজন প্রাইভেট সেন্টারে গিয়ে খোঁজ নেন। সেসময় তানোর লালপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক গোলাম মোস্তফা স্কুল শিক্ষার্থীর বাবাকে মোবাইল ফোনে জানান- তার মেয়ে মোহনপুর-কালিগঞ্জমুখী পাকা রাস্তার উত্তর পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে। খবর পেয়ে বর্ষাকে উদ্ধার করে প্রথমে মোহনপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রামেক ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার (ওসিসি) ভর্তি করেন আব্দুল মান্নান।
পরে এ ঘটনায় আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গত ২৭ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তিনজনকে আসামি করে অপহরণ ও শ্লীলতাহানির মামলা করেন। পরে পুলিশ একজনকে আটকও করে।
ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের নার্স শাহিনুর আক্তার ওরফে তানিয়ার ৬ মে রাতে ঢাকা থেকে স্বর্ণলতা বাসে করে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর যাচ্ছিলেন। পথে উপজেলার গজারিয়া-জামতলী এলাকায় ওই তরুণী ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় বাসের চালক নূরুজ্জামান ও হেলপার (সহকারী) লালন মিয়াসহ মোট পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ। নিহত তানিয়া উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে।
পাঁচ আসামি আটকের পর ৮ মে তাদের ৫ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন আদালত। পাঁচ আসামি হলেন-গাজীরপুর জেলার কাপাসিয়া উপজেলার সালুয়াটেকি গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে বাসচালক নূরুজ্জামান নূরু (৩৯), একই উপজেলার বীরউজলী গ্রামের মৃত আব্দুল হামিদের ছেলে বাসের হেলপার লালন মিয়া (৩২), একই উপজেলার লোহাদী গ্রামের নজর আলীর ছেলে রফিকুল ইসলাম রফিক (৩০), কটিয়াদী উপজেলার ভোগপাড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩৮) এবং বাজিতপুর উপজেলার নীলাক্ষি গ্রামের মৃত আব্দুস শহীদ ভূঁইয়ার ছেলে বকুল মিয়া ওরফে ল্যাংড়া বকুল (৫০)।
পত্রিকায় প্রকাশিত এই দুই ঘটনার প্রতিবেদন যুক্ত করে ক্ষতিগ্রস্ত দুই পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৬ মে রিটটি করা হয়।
চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (সিসিবি) পক্ষে চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম এ রিট করেন।
পরে আব্দুল হালিম জানান, আদালত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৯
ইএস/এএ