এ সাতজন হলেন মো. দেলোয়ার হোসেন, মো. মোরাদ হোসেন, মো. জাহিদুল ইসলাম, মো. শহীদুল ইসলাম, মো. কামাল হোসেন, মো. সামসাদ হোসেন ও মো. আনিছুল ইসলাম।
রোববার (২৯ সেপ্টেন্বর) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুল ইসলাম উভয়পক্ষের শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) চারদিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো. ফজলুল হক আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন জানান। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাবিবুর রহমান চৌধুরী তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এসময় আসামিদের পক্ষে তাদের আইনজীবী আবদুর রহমান হাওলাদার, শওকত ওসমান প্রমুখ জামিনের আবেদন করেন। আদালত আসামিদের কারাগারে পাঠিয়ে রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) শুনানির দিন ধার্য করেন।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর এই সাত আসামির বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং আইনে আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবদাস চন্দ্র অধিকারী এ আবেদন মঞ্জুর করেন।
গ্রেফতার দেখানোর আবেদনে মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি সিনিয়র পুলিশ সুপার আবু সাইদ উল্লেখ করেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর গুলশানের নিকেতনে নিজ কার্যালয় থেকে রিমান্ডে থাকা আসামি জি কে শামীমসহ সাত দেহরক্ষীকে আটকের সময় নগদ ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুর ডলার, জি কে শামীমের মায়ের নামে ট্রাস্ট ব্যাংকের নারায়ণগঞ্জ শাখায় ২৫ কোটি টাকা করে চারটি ও ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকার একটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের মহাখালী শাখায় ১০ কোটি টাকা করে চারটি এফডিআর, শামীমের নামে ট্রাস্ট ব্যাংক কেরানীগঞ্জ শাখায় ২৫ কোটি টাকার একটি এফডিআর জব্দ করা হয়। এছাড়া ৩৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেকবই উদ্ধারও হয়।
আসামিদের গ্রেফতারের সময় বিপুল পরিমাণ অর্থের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা কোনো সদুত্তর দেওয়া বা বৈধ কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচারের জন্য মজুদ রেখেছিল বলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বীকার করায় তাদের বিরুদ্ধে নায়েক সুবেদার মো. মিজানুর রহমান মামলাটি দায়ের করেন। তাই এজাহারনামীয় এ আসামিদের গ্রেফতার দেখানো প্রয়োজন।
অন্যদিকে, অস্ত্র মামলায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুল হক সাত দেহরক্ষীকে আদালতে হাজির করে ফেরত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে আসামিদের মামলার ঘটনা বিষয়ে সুনিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মামলা সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যাদি মামলার তদন্তকাজে যথেষ্ট সহায়ক হবে। তাদের দেওয়া তথ্যাদি ও নাম-ঠিকানা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আসামিরা জামিনে মুক্তি পেলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এর আগে, গত ২১ সেপ্টেম্বর এ সাত আসামির চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই দিন জি কে শামীমের অস্ত্র ও মাদকের দু’টি মামলায় পাঁচদিন করে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তার।
গত ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে জি কে শামীম ও তার সাত দেহরক্ষীকে রাজধানীর গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র্যাব। গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আব্দুল আহাদ বাংলানিউজকে জানান, গুলশান থানায় জি কে শামীমের বিরুদ্ধে অস্ত্র, মাদক ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে, সেদিন গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মাদক ও অস্ত্র মামলায়।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর নিকেতনে ৫ নম্বর সড়কের ১৪৪ নম্বর ভবনে শামীমের কার্যালয়ে অভিযান চালায় র্যাব। কার্যালয়ের ভেতর থেকে বিদেশি মুদ্রা, মদ, একটি আগ্নেয়াস্ত্র, মাদক, নগদ অর্থ, ২০০ কোটি টাকার এফডিআর চেক উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় সাত দেহরক্ষীকেও।
অভিযানের পর র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, শামীমের অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ ছিল। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এখানে তার ও তার মায়ের নামে বিপুল পরিমাণ এফডিআর পাওয়া গেছে। শামীমের অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও তা অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ ছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৯
এমএআর/একে