ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

বালিশকাণ্ড: জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থার প্রতিবেদন জমা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
বালিশকাণ্ড: জড়িতদের বিষয়ে ব্যবস্থার প্রতিবেদন জমা

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আসা জড়িতদের বিরুদ্ধে নেওয়া ব্যবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন দেন।  

প্রতিবেদন পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল ইসলাম বলেন, আজকে একটি প্রতিবেদন পেয়েছি।

এখনো খুলে দেখিনি।  

এর আগে গত ২১ জুলাই ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে উপস্থাপনের পর জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয় তা দেখবেন বলে পরবর্তী আদেশের জন্য ২০ অক্টোবর দিন রেখেছিলেন হাইকোর্ট।
 
২১ জুলাই আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রিট আবেদনকারী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন নিজেই শুনানি করেন।
 
শুনানিতে আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বলেন, প্রতিবেদনে দুর্নীতির বিষয়টি অ্যাডমিট করা হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িতদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে।
 
এসময় আদালত তার কাছে জানতে চান, এই তদন্তে তিনি সন্তুষ্ট কিনা? কোনো আপত্তি আছে কিনা? জবাবে সায়েদুল হক সুমন বলেন, সন্তুষ্ট। তবে প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।  

তিনি বলেন, এখানে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে শুধুই বিভাগীয় ব্যবস্থা নিলে হবে না। এটা স্পর্শকাতর বিষয়। তাই তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
 
এসময় আদালত বলেন, সরকার কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করতে চাই।
 
আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশ্যে বলেন, মন্ত্রণালয়ের তদন্তেই অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। প্রতিবেদন দিয়েছে; কিন্তু জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
 
জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মাত্র প্রতিবেদন পাওয়া গেল। এখন একটু অপেক্ষা করা দরকার, সরকার কী ব্যবস্থা নেয়। তাই সময় চাচ্ছি। দুই মাস সময় দেওয়া হোক। এর মধ্যে দেখি কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
 
এরপর আদালত আগামী ২০ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়ে আদেশ দেন।
 
কাণ্ডটি আলোচনায় আসার পর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন হাইকোর্টে রিট করলে ২০ মে শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দু’টি তদন্ত কমিটির কথা উল্লেখ করে বলেন, এরই মধ্যে দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তারা সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। এ প্রতিবেদনটা আগে আসুক। তারপর যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সে পর্যন্ত স্ট্যান্ডওভার রাখা যেতে পারে।  
 
এরপর বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর আদালত স্ট্যান্ডওভার রাখেন। এর ধারাবাহিকতায় গত ১ জুলাই রিট আবেদনটি কার্যতালিকায় ওঠে। ওইদিনের শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, কাজতো চলছে, কমিটির কাজ চলছে। ফেয়ার প্রতিবেদনের স্বার্থে আমাদের ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় দিন। কারণ ১২ জুলাই প্রতিবেদন দেওয়ার পর সেটা হলফনামা আকারে আদালতে জমা দিতে হবে আমাদের। এ কারণে আরও দু’দিন মিলিয়ে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সময় দিন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পরের দিন ২ জুলাই আদেশের জন্য রাখেন। ২ জুলাই আদালত রুল জারি করেন। একইসঙ্গে ওই ঘটনায় করা দু’টি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দাখিল এবং প্রতিবেদন অনুসারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে সেটা দুই সপ্তাহের মধ্যে জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে নির্দেশ দেন।  

এ আদেশ অনুসারেই তদন্তের পর কমিটির এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করার জন্য ১৫ জুলাই অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।

তদন্ত কমিটি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।
 
প্রতিবেদনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করে বলা হয়েছে, দায়ী কর্মকর্তাদের নিজ নিজ দায়িত্বের গুরুত্ব অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা/প্রচলিত আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
 
১৯ মে রিট করার পর ব্যারিস্টার সুমন জানান, গ্রিন সিটিতে অস্বাভাবিক মূল্য ধরা হয়েছে। এটা কয়েকটা পত্রিকায় এসেছে। তাই আমরা নিয়ে এসেছি। একটা বালিশের দাম ধরা হয়েছে প্রায় ছয় হাজার টাকা। কেটলি নিচ থেকে ওপরে নেওয়ার দাম ধরা হয়েছে প্রায় তিন হাজার টাকা। এটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। গণপূর্ত বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। গণপূর্ত বিভাগের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সুতরাং তারা নিজেরা তদন্ত করতে পারেন না। এটা জুডিশিয়াল ইনকোয়ারি থাকা দরকার। এজন্য রিট করেছি।   

এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মাণাধীন ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের দরপত্রের বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে বিষয়গুলো উঠে এসেছে তা তদন্তের জন্য দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

১৯ মে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. ইফতেখার হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ডেলিগেটেড ওয়ার্ক হিসেবে গণপূর্ত অধিদপ্তর নির্মাণাধীন ৬টি ভবনে আসবাবপত্রসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়নপূর্বক ৬টি প্যাকেজে ই-জিপিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্যাকেজগুলোর প্রতিটির ক্রয়মূল্য ৩০.০০ কোটি টাকার নিম্নে প্রাক্কলন করায় গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলন প্রণয়ন, অনুমোদন ও ঠিকাদার নিয়োগে মন্ত্রণালয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে একজন অতিরিক্ত সচিব এবং গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে আলাদা দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সব ধরনের পেমেন্ট বন্ধ রাখতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে এরইমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

‘আলোচ্য কাজের বিপরীতে এখনো ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধ করা হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে বাজারমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে বিল পরিশোধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১৯
ইএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।