ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

সেই ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থার নির্দেশ

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৯
সেই ওসি সাকিলের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থার নির্দেশ

ঢাকা: রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। যা দণ্ডবিধির ১৬৬ ও ১৬৭ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

আদালত বলেছেন, দণ্ডবিধির ওই ধারা দুটি দুদক আইন ২০০৪ এর তফসিলভুক্ত। তাই রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং এ সংক্রান্ত নথি দুদকে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হলো।

দুদক উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর দুদককে আইন ও বিধি অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেন আদালত।

এছাড়া সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলামের মেয়ে, তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্য ও তার শাশুড়ির দেওয়া অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

পুঠিয়া উপজেলার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার এজাহার বদলে দেওয়ার অভিযোগের ঘটনায় রিটের রায়ে রোববার (০১ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন।

এর আগে শুনানি শেষে ২৭ নভেম্বর হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ঠিক করেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।     

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ ও অমিত তালুকদার। দুদকের পক্ষে ছিলেন শাহীন আহমেদ।

আদালত বলেছেন, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অনুসন্ধান প্রতিবেদন ও সাক্ষীদের সাক্ষ্য হতে এটি প্রাথমিকভাবে সুস্পষ্ট যে পুঠিয়া থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাকিল উদ্দিন আহমেদ শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় তার মেয়ে নিগার সুলতানা আট জনকে অভিযুক্ত করে পাঠানো এজাহারটি গ্রহণ না করে পরবর্তীতে থানায় ডেকে জব্দ তালিকা, সুরতহাল প্রতিবেদনসহ কিছু সাদা কাগজের ওপর সই করিয়ে নেওয়া হয়। এবং পরবর্তীতে ওই সাদা কাগজে এজাহার টাইপ করে তা রেকর্ডভুক্ত করা হয়। নিগার সুলতানার (সংবাদদাতা) পাঠানো এজাহারের বর্ণনার সঙ্গে দায়েরকৃত এজাহারের বর্ণনার মধ্যে অসঙ্গতি বিদ্যামান। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার মতো একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ নিঃসন্দেহে গুরুতর। যা দণ্ডবিধির ১৬৬ ও ১৬৭ ধারা অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

দণ্ডবিধির ওই ধারা দুটি দুদক আইন ২০০৪ এর তফসিলভুক্ত। তাই রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং এ সংক্রান্ত নথি দুদকে প্রেরণের নির্দেশ দেওয়া হলো। দুদক উক্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর দুদক আইন ও বিধি অনুসারে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হলো।

আদালত আরও বলেন, সাকিল উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে নুরুল ইসলামের মেয়ে, তার অধীনস্থ পুলিশ সদস্যসহ একাধিক ব্যক্তি, এমনকি তার শাশুড়িও বিভিন্ন অভিযোগ উপস্থাপন করে প্রতিকার চেয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। সাকিল উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো দ্রুত তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেওয়া হলো।

গত ২২ জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে ‘এজাহার বদলে দিলেন ওসি’ শীর্ষক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিকের প্রতিবেদন যুক্ত করে এ রিট করা হয়।

নুরুল ইসলামের মেয়ে নিগার সুলতানার ওই রিটের পর ১৬ সেপ্টেম্বর ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদের এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রুলও জারি করেন।

ওই আদেশের পর রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ঘটনা তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। ২৭ নভেম্বর বুধবার ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হয়।

প্রতিবেদনে এজাহার বদলে দেওয়ার ঘটনায় ওসি সাকিল উদ্দিনসহ ৫ পুলিশ কর্মকর্তা দায় এড়াতে পারে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৯
ইএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।