ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবরারের বাবার আবেদন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবরারের বাবার আবেদন

ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেছেন তার বাবা বরকতউল্লাহ। 

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পৌনে ৫টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-২ শাখা বরাবর আবেদনটি ঢাকার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়।

আবরারের বাবার সঙ্গে এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যান ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আব্দুল্লাহ আবু, নিহত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজসহ তার স্বজনরা।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা আবেনদনটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেবে।

আবেদনে আবরারের বাবা বলেন, মামলাটির বিচারকার্য বিলম্বিত হলে সাক্ষীদের বৈরিতাসহ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করছি। মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে দ্রুততার সঙ্গে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে বলে আমি আশাবাদী।

এর আগে সোমবার সকালে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে অভিযোগ গঠন শুনানির দিন ধার্য ছিল। তখন আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ আদালতে বলেন, মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের জন্য আমরা আবেদন করবো। তাই সময় চাচ্ছি।

পরে আদালত অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য আগামী ১৮ মার্চ দিন ধার্য করেন।

আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, বাদীর হাজিরা দিতে আমরা আজ আদালতে এসেছিলাম। আমরা চাই মামলাটি দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হোক ও দ্রুত এর বিচারকার্য শেষ হোক। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আমরা আবেদন করেছি। আশা করছি, দ্রুততার ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনালে এ মামলার বিচার হবে এবং আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।

গত বছর ১৩ নভেম্বর এই মামলায় ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান। পরে ১৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র গ্রহণ করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। পরোয়ানা অনুযায়ী গ্রেফতার করতে না পারায় গত ৩ ডিসেম্বর তাদের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়। সে সময় ৫ জানুয়ারির মধ্যে ক্রোকী পরোয়ানা তামিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর ৫ জানুয়ারি পলাতক আসামিদের হাজিরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের একদিন আগে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামে পলাতক এক আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
 
এখন পলাতক আছেন তিন আসামি। তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও পলাতক বাকি আসামিরা হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরু হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী।

মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৯ জন এবং এজাহার বহির্ভূত ৬ জন। গ্রেফতারদের মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এদিকে তদন্ত চলাকালে মামলায় অভিযুক্ত ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু। ছাত্রলীগ হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছে।

গ্রেফতারদের মধ্যে ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

এর মধ্যে আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।

গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের কিছু উচ্ছৃঙ্খল কর্মীর হাতে নির্দয় পিটুনির শিকার হয়ে মারা যান বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২০
কেআই/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।