ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

কারাবাসের বদলে সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে হবে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫১ ঘণ্টা, মার্চ ৪, ২০২০
কারাবাসের বদলে সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে হবে

মাগুরা: মাগুরায় পারিবারিক বিরোধের জের ধরে সৃষ্ট সহিংসতার একটি মামলায় দোষী প্রমাণিত হলেও কারাগারে যেতে হচ্ছে না এক আসামিকে। কারাবাসের বদলে তাকে বই বড়তে, সিনেমা দেখতে ও গাছ লাগাতে হবে। সংশোধনের সুবিধার্থে শর্ত সাপেক্ষে এক প্রবেশন কর্মকর্তার নিয়ন্ত্রণে থাকার রায় দিয়েছেন আদালত।

মঙ্গলবার (০৩ মার্চ) বিকেলে মাগুরা চিফ জুড়িশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াউর রহমান এ রায় দেন।

সাজা পাওয়া ওই আসামির নাম ইব্রাহিম হোসেন।

তিনি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ আমীর আলী বলেন, ২০১৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি পারিবারিক বিরোধের জের ধরে হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের মোসাস্মাত সায়লা আক্তার নামে এক নারী আহত হন। এ ঘটনায় সায়লার ছেলে মোহাম্মদ রকি মহম্মদপুর থানায় একই গ্রামের  ইব্রাহিম, কামাল ও চায়না বেগমকে আসামি করে মামলা করেন। ওই মামলায় চায়না বেগম নির্দোষ প্রমাণিত হন। মামলায় তদন্তকালে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় অপর আসামি কামাল হোসেনকে অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহিত দেয় পুলিশ।

অপরদিকে হামলার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ছয় মাসের কারাদণ্ডের পরিবর্তে সংশোধনের জন্য ইব্রাহিমকে প্রবেশন কর্মকাতার তত্ত্বাবধানে এক বছর সময়কালের জন্য  সাতটি শর্তে প্রবেশন মঞ্জুর করেন বিচারক মো. জিয়াউর রহমান।

শর্তগুলো হলো- প্রবেশনকালীন সময় দোষী সাব্যস্ত আসামি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না, শান্তি বজায় রাখবেন এবং ভালো ব্যবহার করবেন, আদালত ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তলব করলে যথাসময়ে উপস্থিত হবেন, কোনো ধরনের মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করবেন না, কোনো খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে আর মিশবেন না, প্রবেশনকালীন সময়ে আসামি মুক্তিযুদ্ধের ওপর দু’টি বই (জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলো ও রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা একাত্তরের চিঠি), ইসলাম ও নৈতিকতার ওপর আরও দু’টি বই পড়বেন এবং আগুনের পরশমণি সিনেমাটি দেখবেন, পরিবেশের প্রতি দায়িত্বশীল হিসেবে দু’টি বনজ ও তিনটি ফলদ পাঁচটি গাছ লাগাতে হবে।
 
রাষ্টপক্ষের আইনজীবী বলেন, ইব্রাহিম শর্ত ভঙ্গ করলে বা তার আচরণ সন্তোষজনক না হলে তার প্রবেশন আদেশ বাতিল করা হবে। অপরাধের জন্য নির্ধারিত দণ্ডাদেশ ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করবেন।
 
মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, পারিবারিক বিরোধের এক পর্যায়ে ইব্রাহিম এমন অপরাধ করেছে বলে প্রতীয়মান হয়। ক্ষণিকের উত্তেজনায় করা এ অপরাধে তাকে শাস্তি ভোগের জন্য কারাগারে পাঠালে সংশোধন হওয়ার পরিবর্তে অভ্যাসগত অপরাধীদের সঙ্গে মিশে পুরো অপরাধী হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাকে এ অপরাধে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠালে হয়তো কৃত অপরাধের জন্য প্রতিশোধ নেওয়া হবে। কিন্তু একজন সম্ভাবনাময় তরুণের স্বপ্ন ও জীবন ধ্বংস হবে। দণ্ডের উদ্দেশ্য প্রতিশোধ নয়, বরং সংশোধন হওয়ার পথ করে দিয়ে সমাজে ও রাষ্ট্রে একজন সুনাগরিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ দেওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।