ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা রোধে উচ্চ আদালতের ৭ নির্দেশনা

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০২০
ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা রোধে উচ্চ আদালতের ৭ নির্দেশনা

ঢাকা: ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, কারা মহাপরিদর্শক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ রায় ও আদেশ প্রত্যেক দায়রা জজ ও মেট্রোপলিটন দায়রা জজ, সব ট্রাইব্যুনাল, বিশেষ আদালতের বিচারক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটদের জানাতে হবে।

একের পর এক গ্রেফতারি পরোয়ানাপ্রাপ্ত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কৃষি বিভাগের প্রোগ্রাম অফিসার মো. আওলাদ হোসেনের স্ত্রীর করা রিটের রায়ে এমন নির্দেশনা দেন আদালত।

১৪ অক্টোবর দেওয়া বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চের রায় রোববার (০৮ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

রায়ে আদালত বলেন, স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিদের দ্বারা ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা  তৈরি করে দরখাস্তকারীর স্বামী মো. আওলাদ হোসেনকে একের পর এক গ্রেফতার দেখানো দুঃখজনক, অমানবিক এবং আইনের শাসনের পরিপন্থি।

‘ইদানীং প্রায়ই গণমাধমে ভুয়া ওয়ারেন্টের মাধমে নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানির সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। আদালত বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়ে ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিন্মোক্ত নির্দেশ প্রদান করছে-

এক. গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর সময় গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৭৫ এর বিধানমতে নির্ধারিত ফরমে উল্লেখিত চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ও সুস্পষ্টভাবে তথ্যাদি পূরণ করতে হবে।

যেমন: (ক) ব্যক্তি বা যে সকল ব্যক্তি পরোয়ানা কার্যকর করবেন, তার বা তাদের নাম এবং পদবী ও ঠিকানা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

(খ) যার  প্রতি  পরোয়ানা  ইস্যু করা  হচ্ছে অর্থাৎ অভিযুক্তের নাম ও ঠিকানা এজাহার/নালিশী মামলা কিংবা অভিযোগপত্রে বর্ণিতমতে সংশ্লিষ্ট মামলার নম্বর  ও ধারা (এ ক্ষেত্রে জি আর/নালিশী মামলার নম্বর) এবং ক্ষেত্রমত আদালতের  মামলার নম্বর ও ধারা সুনির্দিষ্ট ও সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

(গ) সংশ্লিষ্ট জজ (বিচারক)/ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষরের নিচে নাম ও পদবীর সিল  এবং ক্ষেত্রমত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারকের নাম ও পদবীর সিলসহ বামপাশে বর্ণিত  সংশ্লিষ্ট আদালতের সুস্পষ্ট সিল ব্যবহার করতে হবে।  

(ঘ) গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রস্তুতকারী ব্যক্তির (অফিস স্টাফ) নাম, পদবী ও  মোবাইল ফোন নম্বরসহ সিল ও তার সংক্ষিপ্ত স্বাক্ষর ব্যবহার করতে  হবে যাতে  পরোয়ানা কার্যকারী ব্যক্তির পরোয়ানার সঠিকতা সম্পর্কে  কোন সন্দেহের   উদ্রেগ হলে পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে তার সঠিকতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।

দুই. গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রস্তুত করা হলে স্থানীয় অধিক্ষেত্রে কার্যকর করণের  জন্য সংশ্লিষ্ট পিয়নবহিতে এন্ট্রি করে বার্তাবাহকের মাধ্যমে তা পুলিশ সুপারের কার্যালয় কিংবা সংশ্লিষ্ট থানায় প্রেরণ করতে হবে এবং পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের/থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা উক্ত পিয়নবহিতে সই করে তা বুঝে নিতে  হবে। গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রেরণে ও কার্যকর করার জন্য পর্যায়ক্রমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার কাজে লাগানো যেতে পারে।  

তিন. স্থানীয় অধিক্ষেত্রের বাইরের জেলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার ক্ষেত্রে পরোয়ানা ইস্যুকারী কর্তৃপক্ষ গ্রেফতারি পরোয়ানা সিলগালা করে এবং অফিসের সিলমোহরের ছাপ দিয়ে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন।

চার. সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিল মোহরকৃত  খাম খুলে প্রাপ্ত গ্রেফতারি পরোয়ানা পরীক্ষা করে উহার সঠিকতা নিশ্চিত করে পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য ব্যবস্থা নেবেন। তবে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানার  ক্ষেত্রে সন্দেহের উদ্রেক হলে পরোয়ানায় উল্লেখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে উহার সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন।

পাঁচ. গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করনের জন্য পরোয়ানা গ্রহণকারী কর্মকর্তা  গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়ার পর তা কার্যকরকরণের আগে পুনরায় পরীক্ষা করে যদি কোনরূপ সন্দেহের উদ্রেক হয় সেক্ষেত্রে পরোয়ানায় উল্লেখিত পরোয়ানা প্রস্তুতকারীর মোবাইল ফোন নম্বরে ফোন করে তার সঠিকতা নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।

ছয়. গ্রেফতারি পরোয়ানা অনুসারে আসামিকে/আসামিদের গ্রেফতারের পর সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে উক্ত আসামি/আসামিদের আইন নির্ধারিত সময়ের  মধ্যে নিকটস্থ ম্যাজিস্ট্রেট/জজ আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানাসহ উপস্থাপন করতে হবে এবং ম্যাজিস্ট্রেট/জজ গ্রেফতারকৃত আসামি/আসামিদের জামিন না দিলে আদেশের কপি সহ হেফাজতি পরোয়ানা মুলে আসামি/আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণসহ ক্ষেত্রমত সম্পূরক নথি তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুকারী জজ/ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবর প্রেরণ করবেন।

সাত. সংশ্লিষ্ট জেল সুপার কিংবা অন্য কেউ কোন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  হেফাজতি পরোয়ানামূলে প্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট আসামি/আসামিদের গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুকারী আদালতকে এই মর্মে অবিলম্বে অবহিত করবেন যে, কোন থানার কোন মামলার সূত্রে কিংবা কোন আদালতের কোন মামলায় বর্ণিত আসামিদের উক্ত আদালতের ইস্যুকৃত পরোয়ানামূলে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং  পরবর্তীতে আসামিদের নতুন কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা পেলে জেল সুপার  ওই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালত হতে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে পরোয়ানা কার্যকর করবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০২০
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।