ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

জাপানি মায়ের দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের আবেদন

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
জাপানি মায়ের দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজিরের আবেদন

ঢাকা: বাবার কাছ থেকে সিআইডি নিয়ে আসার পর ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে থাকা জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকোর দুই মেয়েকে হাইকোর্টে হাজির করাতে আবেদন করার অনুমতি নিয়েছেন আইনজীবী।

সিআইডির হেফাজতে নেওয়ার বিষয় জানিয়ে সোমবার (২৩ আগস্ট) দুই শিশুকে হাজির করার এ আর্জি জানানো হয় বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে।

এরপর আদালত আবেদনের অনুমতি দিয়ে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।

আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। শিশুদের মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।

আরও পড়ুন: জাপানি নারীর দুই সন্তানকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ

শিশির মনির জানান, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি নাগরিক ডা. নাকানো এরিকো (৪৬) ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান (৫৮) জাপানি আইন অনুসারে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টোকিওতে বাসবাস শুরু করেন। ১২ বছরের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করে। তারা হচ্ছে জেসমিন মালিকা (১১), লাইলা লিনা (১০) এবং সানিয়া হেনা (৭)। এরিকো পেশায় একজন চিকিৎসক। তিন মেয়ে টোকিওর চফো সিটিতে অবস্থিত আমেরিকান স্কুল ইন জাপানের (এএসজেআই) শিক্ষার্থী ছিল।
 
২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি ইমরান তার স্ত্রী এরিকোর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের (ডিভোর্স) আবেদন করেন। এরপর ২১ জানুয়ারি ইমরান স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে তার মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন। কিন্তু তাতে এরিকোর সম্মতি না থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ তার প্রস্তাব নাকচ করে।
 
পরে স্কুলবাসে বাড়ি ফেরার পথে বাসস্টপেজ থেকে ইমরান তাদের বড় দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে অন্য একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে যান। চারদিন পর ২৫ জানুয়ারি ইমরান তার আইনজীবীর মাধ্যমে এরিকোর কাছে বাচ্চাদের পাসপোর্ট হস্তান্তরের আবেদন করেন। কিন্তু এরিকো তা প্রত্যাখ্যন করেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি এরিকো টোকিওর পারিবারিক আদালতে তার বাচ্চাদের জিম্মার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে মামলা করেন। আদালত ৭, ১১ ও ১৪ ফেব্রুয়ারি পারিবারিক সাক্ষাতের আদেশ দেন। ইমরান আদালতের আদেশ ভঙ্গ করে মাত্র একবার মায়ের সঙ্গে দুই মেয়ের সাক্ষাতের সুযোগ দেন।
 
এদিকে ৯ ফেব্রুয়ারি মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ইমরান তার মেয়েদের জন্য নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেন এবং ১৭ ফেব্রুয়ারি নতুন পাসপোর্ট গ্রহণ করেন। পরে ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি দুই মেয়ে জেসমিন ও লিনাকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন।
 
শিশির মনির আরও জানান, ৩১ মে টোকিওর পারিবারিক আদালত এরিকোর অনুকূলে জেসমিন ও লিনার জিম্মা হস্তান্তরের আদেশ দেন। ছোট মেয়ে সানিয়া হেনাকে মায়ের কাছে রেখে ১৮ জুলাই এরিকো শ্রীলংকা হয়ে বাংলাদেশে আসেন। কিন্তু ইমরান শ্রীলংকা থেকে এরিকোকে ফিরে যেতে বলেন। এরিকো বাংলাদেশে কোভিড পরীক্ষা করান এবং এর ফলাফল নেগেটিভ আসে। কিন্তু ইমরান কোভিডের ফলাফল অবিশ্বাস করে এরিকোর সঙ্গে সন্তানদের সাক্ষাতে অস্বীকৃতি জানান। অবশেষে ২৭ জুলাই মোবাইল সংযোগ বন্ধ ও চোখ বাঁধা অবস্থায় এরিকোকে তার মেয়েদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া হয় এবং একই অবস্থায় তাদের গাড়িতে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয়।
 
এ অবস্থায় এরিকো সন্তানদের নিজের জিম্মায় চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন বলে জানান আইনজীবী শিশির মনির।

এরপর শুনানি নিয়ে ১৯ আগস্ট হাইকোর্ট ৩১ আগস্ট ওই দুই শিশুকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে এক মাসের জন্য তাদের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন উচ্চ আদালত।

এর মধ্যে রোববার রাতে দুই শিশুকে হেফাজতে নেয় সিআইডি।

আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ আদালতে বলেন, মাই লর্ড আপনারা রুল ইস্যু করেছিলেন। আদেশে আপনারা আগামী ৩১ আগস্ট আদালতে শিশু দু’টিকে আদালতে হাজির করতে বলেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় সিআইডি বাসায় চলে যায়। সেখান থেকে বাচ্চা দু’টিকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যায়। সেখানে বাচ্চাদের জেরা করা হয়েছে। এভাবে চালানোর পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তেজগাঁওয়ের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্তান দু’টির বাবা সারা রাত ওই ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ছিলেন, এখনও আছেন। কিন্তু মা বাচ্চাদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রেখে চলে গেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি একটা সম্পূরক আবেদন নিয়ে আসতে চাচ্ছি, সেটা যদি দুপুর ২টায় শোনেন, তখন আদালত আবেদনের অনুমতি দেন।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, মাই লর্ড আপনাদের দু’টি আদেশ ছিল, তার মধ্যে একটি হলো বাচ্চা দু’টিকে হাজির করা। আর একটি হলো বাচ্চা দু’টিকে নিয়ে কেউ যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারে। আমাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে ফোন দিয়ে বলা হলো- বাচ্চার মাকে সিআইডি অফিসে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ বাচ্চাদের তারা সেখানে রেখেছেন। জোর করে নিয়ে এসেছেন, তারা কিন্তু সেটা বলেননি। পরে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে ৩০ মিনিট বাচ্চাদের সঙ্গে তাদের মায়ের কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়। আমি তখন সিআইডিকে বলেছি, তারিখ তো আরও পরে, এখনই বাচ্চাদের নিয়ে এসেছেন কেন? তখন তারা (সিআইডি) বললেন, হাইকোর্টের আরেকটি আদেশ আছে দেশ ত্যাগের বিষয়ে। সেই আদেশটা যেন শেষ পর্যন্ত প্রতিপালন করতে পারি, সেই কারণেই এ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমি বললাম, তাড়াতাড়ি এটা হাইকোর্টকে জানাতে হবে।

পরে আদালত আবেদন দাখিলের অনুমতি দিয়ে দুপুর ২টায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করে দেন। একইসঙ্গে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সিআইডির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২১
ইএস/এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।