ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

এগুলো সভ্যসমাজে হতে পারে না, পরীমনির রিমান্ড নিয়ে হাইকোর্ট

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
এগুলো সভ্যসমাজে হতে পারে না, পরীমনির রিমান্ড নিয়ে হাইকোর্ট

ঢাকা: মাদক মামলায় গ্রেফতার চিত্রনায়িকা পরীমনি ওরফে শামসুন নাহার স্মৃতিকে তিন দফায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর নিয়ে এক শুনানিতে হাইকোর্ট বলেছেন, কোনো উপাদান ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা প্রার্থনা দিল রিমান্ডের, আপনি (ম্যাজিস্ট্রেট) মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো কোনো সভ্যসমাজে হতে পারে না, বর্তমানে।

বুধবার (০১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।

গত ২২ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে তার জামিন আবেদন করা হয়। আদালত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন আবেদনের শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। পরদিন আবেদনটি দ্রুত শুনানির জন্য আরও একটি আবেদন দেন কিন্তু সেটিরও শুনানি হয়নি।

এরপর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদনের শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে ২৬ আগস্ট ওই আবেদন করেছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। এতে বিলম্বে দিন নির্ধারণ করার বৈধতা চ্যালেঞ্চ করা হয়েছিল। এরপর আদালত রুল জারি করেন এবং শুনানির জন্য ১ সেপ্টেম্বর দিন রাখেন।  

এর মধ্যে তিন দফায় সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বৈধতা নিয়ে ২৯ আগস্ট  স্বপ্রণোদিত রুল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ওই দিন আদালত বলেছেন, রুল রিটার্ন হয়ে আসুক, এরপর দেখব।

দুই দিন পর ৩১ আগস্ট মঙ্গলবার শুনানি করে পরীমনিকে জামিন দেন মহানগর দায়রা জজ আদালত। বুধবার তিনি জামিনে মু্ক্ত হন।

এদিকে ধার্য তারিখ অনুসারে বুধবার রুল শুনানির জন্য হাইকোর্ট মামলাটি কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান।

আসকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না। পরীমনির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মজিবুর রহমান।

শুনানিতে জেড আই খান পান্না বলেন, রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা আছে। নির্দেশনা অনুসরণ না করে পরীমনিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রিমান্ডের ক্ষেত্রে যাতে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনা নিম্ন আদালত অনুসরণ করেন। কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে নির্দেশনা ফলো করা হয়েছে। অন্য সিটিজেনদের বেলায় তা ফলো করা হয়নি। যাতে ফলো করে সেটাই হচ্ছে আমাদের প্রার্থনা।

আদালত বলেন, এটা তো হয়ে গেছে (জামিন)।

জেড আই খান পান্না বলেন, আমি তো বেইলের (জামিন) বিষয়ে বলছি না। রিমান্ডের বিষয়ে বলছি।

আদালত বলেন, এ বিষয়ে (রিমান্ড) সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন আছে। তারপরেও তা শুনছেন না।

পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমানের উদ্দেশে আদালত বলেন, তৃতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়ে কিছু বলতে চান কী?

তখন আইনজীবী মজিবুর রহমান বলেন, ‘তৃতীয় দফায় রিমান্ডের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারা ও আপিল বিভাগের যে গাইডলাইন আছে সেগুলো ফলো করা হয়নি। ’

মোট কত দফায় কত দিন রিমান্ডে নিয়েছে সে বিষয়ে আদালত জানতে চাইলে মজিবুর রহমান বলেন, প্রথম দফায় চার দিন, দ্বিতীয় দফায় দুই দিন এবং তৃতীয় দফায় এক দিন রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

এক পর্যায়ে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বলেন, রুলের জামিন সংক্রান্ত অংশটুকু নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।

আদালত বলেন, পরের অংশ নিয়ে আমরা একটা গাইডলাইন দেবো। কতদিনের মধ্যে আবেদন শুনানি করতে হবে।

মিজানুর রহমান বলেন, কিন্তু মাই লর্ড বেইলের বিষয় (পরীমনির জামিন) অকার্যকর হয়ে গেছে। আজকে রিমান্ড নেওয়া নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযুক্ত আবেদনকারীকে (পরীমনি) তিনবার রিমান্ডে নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে রিমান্ড শেষ হয়ে গেছে।

আদালত বলেন, ‘রিমান্ডে নাই, তবে রিমান্ডে নেওয়ার কী উপাদান ছিল, এর জবাব দেখতে চাই। আপনি পাওয়ারটা অ্যাবিউজ করলেন, কেন করলেন? ওই মামলায় প্রথম দফায় চার দিন রিমান্ডের পর দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডের প্রয়োজন ছিল কিনা, তদন্ত কর্মকর্তাকে সিডিসহ উপস্থিত হতে বলবো। দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে কী উপাদান ছিল, সে বিষয়ে জানাতে বলা হবে।

সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘ওই রিমান্ড বিচারাধীন নেই। ’

আদালত বলেন, ‘কোনো উপাদান ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা প্রার্থনা দিল রিমান্ডের, আপনি (ম্যাজিস্ট্রেট) মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো কোনো সভ্যসমাজে হতে পারে না, বর্তমানে। ’

পরে আদালত বেলা দুইটায় শুনানি করতে বলেন। এরপর দুইটার দিকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। ওনার সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি (অ্যাটর্নি জেনারেল) বলেছেন, নট টুডে (আজকে নয়) চাইতে। ’

এরপর আদালত ‘নট টু ডে’ আদেশ দেন।

গত ৪ আগস্ট বিকেল ৪টার পরপরই বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান পরিচালনা করে র‌্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়।

এরপর ৫ আগস্ট চারদিন এবং ১০ আগস্ট পরীমনির দুইদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১৩ আগস্ট রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ১৯ আগস্ট তৃতীয় দফায় একদিনের রিমান্ড হয়। রিমান্ড শেষে তাকে ২১ আগস্ট কারাগারে পাঠানো হয়।

সংশ্লিষ্ট নিউজ:
মুক্তি পেলেন পরীমনি
পরীমনির হাতের তালুর লেখা কার উদ্দেশে?

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২১
ইএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।