ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইন ও আদালত

ক্রাইম পেট্রোল দেখে শিশু হত্যা, মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২১
ক্রাইম পেট্রোল দেখে শিশু হত্যা, মামলায় যুবকের যাবজ্জীবন

দিনাজপুর: অতি অল্প সময়ে ধনী হওয়ার জন্য টিভির ক্রাইম পেট্রোল সিরিয়াল দেখে  চার বছর বয়সী শিশু আবতাহী আল রশিদকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অপরাধে এক যুবককে যাবজ্জীবন ও দুইজনকে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতের বিচারক সিনিয়র জেলা জজ শরীফ উদ্দিন আহমেদ মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করেন।

এছাড়াও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের এবং বাকি দুই আসামিকে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাস করে কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে।

শিশু হত্যার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন- হাকিমপুর উপজেলার মুহাড়াপাড়া গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আব্দুস সালাম ওরফে সামিউল (২৫)। বাকি দুই আসামি হলেন- সামিউলের বাবা আমজাদ হোসেন (৫৫) ও মা ছানোয়ারা বেগম (৪৫)।  

মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২০১৬ সালের ১১ এপ্রিল হাকিমপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ও উপজেলার মুহাড়াপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ আজাদের চার বছর বয়সী ছেলে আবতাহী আল রশিদকে অপহরণ করে মোবাইলে এসএমএস’র মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে শিশুটির বাবা মামুনুর রশিদ আজাদ বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। অবহিত হওয়ার পর পুলিশ প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামি সামিউলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় সামিউল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে অল্প সময়ে বড়লোক হওয়ার জন্য শিশু আবতাহীকে অপহরণ করে মুক্তিপণের দাবি ও শিশুকে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি করে ঘরের ছাদের মাচাংয়ে গুম করে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পুলিশ আসামির বাড়ির ছাদ থেকে শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা বাদী হয়ে হাকিমপুর থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭/৮/৩০ ধারা তৎসহ দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন।

বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে আদালত আসামি সামিউলকে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধিত ২০০৩) এর ৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড, ৮ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড, দণ্ডবিধি ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাস কারাদণ্ড এবং ২০১ ধারায় ৭ বছরের কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডের রায় দেন। একইসঙ্গে সামিউলের বাবা ও মাকে ২০১ ধারায় তিন বছর করে কারাদণ্ড, তিন হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ডের রায় দেন।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশুটির বাবা মামুনুর রশিদ আজাদ। তিনি বলেন, এই রায়ে আমি খুশি। এমন রায়ের ফলে অন্য কেউ আর এমন অপরাধ করতে সাহস পাবে না।  

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তৈয়বা বেগম বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা হত্যার বিষয়টি প্রমাণে সমর্থ হয়েছি। আমাদের চেষ্টা স্বার্থক হয়েছে, এ রায়ে আমরা খুশি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।