ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব

লাইফস্টাইল ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
সহকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্ব

দিনের আট ঘণ্টা বা তার চেয়েও বেশি সময় আমরা কর্মক্ষেত্রে থাকি। এ দীর্ঘ সময় আমরা শুধু কাজই করি না, অনেক সময় সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলি, আড্ডা দেই।

এই কথা বলা আর আড্ডাটা যতটা না আমাদের সময় নষ্ট করায়, তারচেয়েও অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয় কাজের গতি। আসলে কাজের জায়গায় যদি সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি না হয়, তাহলে অফিসে থাকাটাই অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাই সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাটা খুব জরুরি। ।

যখনই সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা হয় হাসিমুখে কথা বলুন। তার দিনকাল কেমন যাচ্ছে খোঁজ নিন। কাজের ক্ষেত্রে সে কোনো সমস্যায় পড়লে তাকে আপনার সাধ্যমত সাহায্য করুন, তার পাশে দাঁড়ান।

আর এভাবেই সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। ভালো কাজ করার ক্ষেত্রে এটা খুব সহায়ক। বন্ধুত্ব তৈরি জীবনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। একজন বন্ধুহীন মানুষ কখনো সুখী হতে পারে না। যার প্রভাব তার কাজের ক্ষেত্রেও পড়ে।

কর্মক্ষেত্রে বেতন এবং পদবীর বিচারে নয়, এমনিতেই মানুষ হিসেবে সবাইকে শ্রদ্ধা করুন। সহকর্মীরা কেমন পরিবার থেকে এসেছে এটা বিবেচনা না করে, তার কাজের মূল্যায়ন করুন।

সহকর্মীর সঙ্গে আলোচনার সময় সতর্ক থাকুন, যাতে অন্য সহকর্মীর বিরুদ্ধে পরচর্চা করা না হয়। কেননা, পরচর্চার অনেক খারাপ দিক রয়েছে। আমরা যার সঙ্গে পরচর্চা করি, সে আমাকে কী ভাবছে এটাও বুঝতে হবে। আপনি আজ যার সঙ্গে বসে পরচর্চা করছেন, আগামীকাল সেই-ই হয়ত অন্যের সাথে আপনার বিরুদ্ধে বলতে পারে। নিশ্চয় এতে আপনার মন বিষাদগ্রস্ত হবে।

একা একা না খেয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে লাঞ্চ করুন। তাদের জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী নোট করে রাখুন, নির্দিষ্ট দিনে অভিনন্দন জানান। কখনো অন্যের স্পর্শকাতর বিষয়গুলো নিয়ে অতিউৎসাহ প্রকাশ করবেন না।

একই অফিসে কাজ করতে করতে হয়তো নারী-পুরুষ সহকর্মী কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে পারেন। দুইজনের মধ্যে নির্ভরতা এবং ভালো লাগা তৈরি হতে পারে। এই জাতীয় সম্পর্কে না জড়ানোই আপনার ক্যারিয়ারের জন্য ভালো। কেননা, কোনো কারণে আপনাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে এক অফিসে দুজনের জন্যই কাজ সঠিকভাবে চালিয়ে নেওয়া কঠিন হবে।

আপনার নির্ধারিত কাজ খুব সততার সাথে করুন। ভালো কাজের মাধ্যমেই আপনি সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠতে পারেন। কাজে অবহেলা আমাদের ক্যারিয়ার এবং প্রতিষ্ঠান দুটোই ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সুস্থ ও সুন্দর সম্পর্ক কর্মপ্রেরণা বাড়াতে সাহায্য করে।

সহকর্মীর সঙ্গে ব্যবহারেও মেনে চলতে হয় কিছু আদবকেতা। আসুন এ ব্যাপারে জেনে নেই।

সহকর্মীদের সঙ্গে সবসময় প্রফেশনাল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। তারা যতই আপনার আপন হোন না কেন, মন খুলে সবকিছু তাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করার প্রয়োজন নেই। কর্মক্ষেত্রে চিৎকার করা কিংবা খুব উচ্চস্বরে কথা বলার প্রয়োজন নেই। সেখানে ধীরে এবং স্পষ্টভাবে কথা বলুন।

নিজে বলার আগে শুনুন অন্য সহকর্মী কি বলতে চান। সহকর্মীর কথা শুনলে আপনি তার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাবেন। এতে আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে।

সহকর্মীর কোনো আচরণে কষ্ট পেলে বা বিরক্ত হলে তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করুন। প্রথমেই কর্তৃপক্ষের কাছে তার বিরুদ্ধে নালিশ করতে যাবেন না। তবে পরিস্থিতি যদি সামাল দেওয়ার মতো না হয় তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নিন।  

সহকর্মীকে বিব্রত বা বিরক্ত করা যাবে না। মনে রাখতে হবে একসঙ্গে দীর্ঘ দিন কাজ করলেও সহকর্মী কিন্তু বন্ধু নন। আরও কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখাও জরুরি। যেমন সহকর্মীর পাশে বসা বা দাঁড়ানোর সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখতে হবে। তার কথা বলা বা সাজ-পোশাক নিয়ে হাসি-ঠাট্টা না করা।

ধরা যাক আপনি খুব বড় কর্মকর্তা কিন্তু এক অফিসে যারা কাজ করেন সবাই সহকর্মী। মালিক আর কর্মচারীর সম্পর্ক যেমন হয়, সহকর্মীদের সম্পর্ক নিশ্চয় তেমন হওয়ার সুযোগ নেই। একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতিটি কর্মীই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে তার যোগ্য সম্মান দিলেই আপনিও আরও বেশি সম্মানিত হতে পারবেন সবার চোখে।  

সারাদিন একসঙ্গেই কাজ করা হয়, ছুটির পর বা ছুটির দিনে প্রয়োজনে তার সঙ্গে অবশ্যই যোগাযোগ করা যাবে।  অপ্রয়োজনে বার বার ফোন করা বা সামাজিকমাধ্যমে নক করলে তার ব্যক্তি জীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।  

হঠাৎ করেই সহকর্মী খুব গুরত্বপূর্ণ একটি কাজের দায়িত্ব পেলেন। তাকে হিংসা না করে বরং তার কাজে সহযোগিতা করুন। মনে রাখতে হবে কোনো অর্জন বা ব্যর্থতাই ব্যক্তিগত নয়। সবাই কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানের জন্য আর এখানে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ভালো-সুস্থ কাজের পরিবেশ ও চমৎকার টিমওয়ার্ক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।