শিশুরা যখন সবে এক পা, দুই পা হাঁটতে শেখে, তার মুখে যখন আধো আধো বুলি ফোটে তখন এক আশ্চর্য মমতায় মন ভরে যায় বাবা-মায়ের।
শুধু কি বাবা মা! শিশু তার পবিত্র হাসি দিয়ে আদর কেড়ে নেয় সবার।
শিশুরা যখন সবে এক পা-দুই পা করে হাঁটতে শেখে, তখন সব বিষয়েই তারা খুব জেদ করে। দুর্বার ক্রোধের এ বিষয়টি খুবই সাধারণ এবং স্বাভাবিক। এ বয়সী শিশুদের এ স্বভাবের কারণেই একে ‘ভয়ানক দুই’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।
এ বয়সী শিশুদের মনোভাব খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়। যদিও তাদের আবেগ খুব তীব্র হয়, কিন্তু সে অনুভূতির ঝোঁক খুব স্বল্পস্থায়ী হয়। আপনি স্তব্ধ হয়ে দেখবেন যে কিভাবে আপনার সবে হাঁটতে শেখা সন্তান কিছুক্ষণ আগে তার প্রিয় টিভি শো তে দেখানো একটি খেলনার জন্য হিস্ট্রিয়াগ্রস্তের মতো চিৎকার করছে। তবে ভাবনার কিছু নেই, এটা ওই বয়সী শিশুদের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা।
এ বয়সী বাচ্চারা খুব অধিকার সুলভ। তাদের নিজেদের জিনিসগুলো তারা অন্য কারো সঙ্গে ভাগ করতে চায় না। যে কারণে কেউ তার প্রিয় কোনো খেলনা বা জামা-জুতো ধরলে কিংবা চাইলে শিশুটি হয়তো সে মানুষটিকেই অপছন্দ করতে শুরু করবে! তবে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে থেকে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে।
জন্মের কয়েক বছরের মধ্যেই আপনার শিশু পরিবার বা কাছের বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করবে। সেই সঙ্গে তার স্কুলের বা অন্য বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে, নতুন কিছু শিখতে বা খেলতে পছন্দ করবে। এমনকী গবেষকরা এও দেখেছেন যে আবেগজনিত অনুভূতিগুলো বাড়া এবং সামাজিক দক্ষতার বিষয়টি স্কুলের প্রস্তুতির জন্য কাজ করে।
শিশুকে শেখান সামাজিক হতে
আপনি হয়ত চিন্তায় আছেন কিভাবে সন্তানকে সামাজিক হতে শেখাবেন কিংবা কিভাবে শেখাবেন অন্যের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হয়। অন্যের আবেগে কিভাবেই বা সাড়া দিতে হয়! কেননা সামাজিক কর্মদক্ষতাই শুধু সঙ্গীকে সহায়তা করার একমাত্র ক্ষমতা নয়। সেই সঙ্গে এটা সহানুভূতি, অনুভূতি প্রকাশ, কিংবা উদারতার বিষয়ও বটে। তবে চিন্তার কিছু নেই, সৌভাগ্যবসত এমন অনেক বিষয়ই আছে যা আপনার সন্তানের সামাজিক এবং আবেগজনিত দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক হবে।
আপনার শিশু সবসময়ই আপনাকে অনুকরণ করে। বলতে পারেন সে আপনার কার্বন কপি। আপনি হাসলে সে হাসে, আপনি কাঁদার ভান করলে সে কাঁদে, আপনি ভেংচি কাটলে সেও ভেংচি কাটে। আর আপনে যদি দুষ্টুমি করে হলেও তার গালে হালকা এটি চাপড় দেন, তবে দেখবেন সে হয়ত ঠাস করে আপনার গালে এক চড় বসিয়ে দেবে। প্রথম এটাকে উপভোগ করলেও সে আর একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাকে আপনার বিরক্তি লাগতে শুরু করবে। কাজেই বেড়ে ওঠার বয়সে শিশুদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করুন।
এ বয়সে শিশুদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার তাদের নতুন অনেক বিষয় জানতে এবং শিখতে সাহায্য করবে। আপনার শিশু যেহেতু সব কিছুতেই আপনাকে লক্ষ করে, সেহেতু আপনাকে যখন সে অন্যের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে দেখবে, ভালো কিছু শেয়ার করতে দেখবে, কিংবা অন্যকে সাহায্য করতে দেখবে তখন আপনার শিশুকেও বিষয়টি প্রভাবিত করবে। তার ভালো কোনো আচরণ কাজের জন্য সবসময়ই ‘please’ এবং ‘thanks’ বলার চেষ্টা করুন। আপনার আচরণই আপনার সন্তানের পথ প্রদর্শক।
আপনার সন্তান যখন কোনো ভালো কাজ করবে তখন অবশ্যই তাকে সেটার জন্য ধন্যবাদ জানান। পারলে পুরস্কৃত করুন। এতে সে ভবিষ্যতেও ভালো কাজ করার উৎসাহ বোধ করবে। আর এ বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে মনে রাখবেন। এটা শুধু আপনার শিশুকে তার নিজের সম্পর্কে ভালো বোধ করাবে তাই নয়, সেই সঙ্গে অপরের সঙ্গে কেন ভালো আচরণ করা উচিত সে বোধটাও জাগ্রত করবে। ভবিষ্যতে অন্যের প্রতি সহযোগিতা এবং সহমর্মীতা দেখানোর ক্ষেত্রে এ বিষটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
শিশুরা যাতে তাদের অনুভূতিগুলো বা তাদের কথাগুলো পরিবারের এবং কাছের সদস্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে সে ধরনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। যা শিশুদের আরও উদার এবং চিন্তাশীল হতে সাহায্য করবে।
সহযোগিতা ও সহমর্মীতায় উৎসাহিত করুন
শিশুদের শুধু আদর করে তার সব আবদার চোখ বুজে পূরণ করলেই মা-বাবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না কিংবা ভালো বাবা-মা হওয়া যায় না। বরং তার সঙ্গে বন্ধত্ব গড়ে তুলুন। তার অনুভূতি, গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলো সম্পর্কে জানতে শুরু করে দিন ছোট থেকেই। তার কাছে জানতে চান যখন তোমার খেলনা হারিয়ে যায় তখন তোমার কেমন লাগে? অথবা একটু আগে যে গল্পটা শুনলে তা তোমার মনে কেমন অনুভূতির জন্ম দিয়েছে? শিশুরা এভাবেই নিজেদের মানসিক প্রতিক্রিয়া প্রকাশে দক্ষ হয়ে উঠবে।
এবার অন্য মানুষের অনুভূতি সম্পর্কে আপনি তাকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। ধরুন আপনার সন্তানের বান্ধবীর নাম নাদিয়া। তাকে জিজ্ঞেস করুন, ‘যখন তুমি নাদিয়ার সঙ্গে খেলছিলে তখন যে তুমি তার খেলনাটা নিয়ে নিয়েছো তাতে তার কেমন লেগেছে!’ এ ধরনের প্রশ্নে শিশুরা বুঝতে শেখে কিভাবে তাদের নিজস্ব ক্রিয়াকলাপ বা আচরণ অন্য মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে বা কষ্ট দিতে পারে।
সহযোগিতা এমন একটি দক্ষতা যা সরাসরি অভিজ্ঞতার মাধ্যমে অর্জন করা যায়। কাজেই আপনার সন্তানকে অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলার সুযোগ করে দিন। যাতে সে ধীর ধীরে সামাজিক হয়ে ওঠে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যাতে সে অভিজ্ঞ হয়ে ওঠে। যখন সে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলবে তখন তাদের মধ্যে যোগাযোগের একটা মাধ্যম সৃষ্টি হয়ে যাবে, ফলে সামাজিক অসুবিধাগুলো মোকাবেলার দক্ষতা গড়ে উঠবে। এতে প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইবোন কিংবা সহপাঠীদের সঙ্গে প্রচুর বিতর্ক এবং দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যেতে পারে সে। কিন্তু আদতে এতে করে সে শিখে ফেলে কিভাবে অন্য শিশুদের সঙ্গে মধ্যস্ততা কিংবা আপোস করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মে ১২, ২০২৪
এসআই