মধ্যবিত্ত আটপৌরে নারীরা যেন ভুলতে বসেছে নিজেকে। কোনোমতে শরীরটা তো চলছে; কিন্তু মনের যত্ন নেওয়ার সময়-সুযোগ হয়ে ওঠে না বেশির ভাগ নারীর।
নিজেকে ভালোবাসার প্রসঙ্গটি অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। ব্যাপারটি কিন্তু বেশ সরল ও সহজ। অন্যকে ভালোবাসলে তার ভালো-মন্দ, প্রয়োজন-অপ্রয়োজন, পছন্দ-অপছন্দের বিষয় জানতে হয়। অন্যের প্রয়োজন বুঝে যত্ন নেন আপনি। ছোট ছোট ভুল ক্ষমা করেন। ঠিক একই কাজটি করতে হবে নিজের সঙ্গেও। নিজেকে ভালোবাসা মানে কিন্তু অন্যের প্রতি ভালোবাসা কমে যাওয়া নয়, বরং সামগ্রিক ভালোবাসার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। অন্যের পাশাপাশি নিজের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মাধ্যমে ভালোবাসা শুরু করতে পারেন।
খুব সামান্য হলেও দিনের কিছুটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে। ওই ব্যক্তিগত সময়টায় আপনি আপনার পছন্দের কাজ করবেন। কিছুই না করেও চুপচাপ বসে থাকতে পারেন। বই পড়তে পারেন, কিংবা বন্ধুকে ফোনকল দিয়ে কোনো সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন। সিনেমা দেখুন, ছাদে যান, আঁকাআঁকি বা সেলাই করুন; কিন্তু এই সময়ে এমন কিছু ভাববেন না যা আপনাকে কষ্ট দেয়।
দিনের শুরুতেই বা আগের দিন রাতেই আপনার নিজের কর্মতালিকা করে রাখুন। এতে মানসিক চাপ যেমন কমে যাবে, তেমনি সুষ্ঠুভাবে কাজ সম্পন্ন হবে। সময় বাঁচবে এবং সময়কে কাজে লাগানোর জন্য এই বুদ্ধি বেশ কার্যকর। তবে কোনো কাজে ভুল হলে, নিজের প্রতি ক্ষুব্ধ হবেন না। ভুল করা মানবিক। আপনার লক্ষ্য থাকবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুন্দরভাবে কাজ সম্পন্ন করে নিজের জন্য সময় বের করা।
কাজের সময় শুধু হাতে থাকা কাজটিই করুন। অন্য কোনো চিন্তা মাথায় আনবেন না। প্রয়োজনে দুশ্চিন্তা বা পরিকল্পনা করার জন্য আলাদা সময় বরাদ্দ রাখুন। কাজের সময় কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় এলে, নিজেকে বলবেন দুশ্চিন্তা করার জন্য অন্য সময় আছে। যেকোনো একটা কাজে মনোযোগ দিলে, কাজটিকে সর্বোচ্চ উপায়ে সুষ্ঠুভাবে শেষ করুন। এতে মন থাকবে চাপমুক্ত।
কাজের চাপে সবচেয়ে বেশি বিঘ্নিত হয় আমাদের খাবার রুটিন ও খাদ্যাভ্যাস। সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করা, সঠিক খাবার গ্রহণ না করার ফলে আপনি দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে শারীরিক সৌন্দর্য হারাবেন, বয়সের গতিশীলতা হারাচ্ছেন। ফলস্বরূপ আত্মবিশ্বাসেও খামতি হচ্ছে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন, পরিচ্ছন্ন থাকুন, বিশ্রাম নিন, মেডিটেশন করুন। নারী হিসেবে মনে রাখতে হবে, মাতৃত্ব কিংবা নানা হরমোনের হেরফেরের সময়টায় নিজের বিশেষ যত্ন নিজেকেই নিতে হবে।
দেশ বা বিশ্বের খোঁজ রাখতে, দিন শুরু করুন সংবাদপত্রে নজর বুলিয়ে। নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করুন। ইন্টারনেটের কল্যাণে, আজকাল যেকোনো কিছু শেখা কিন্তু ভীষণ সহজ। নতুন কিছু শেখার ব্যাপারটি যেমন আনন্দের, এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। পরিবার বা সমাজে আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। পছন্দের বিষয়ে পড়ুন। ডায়েরি লেখার অভ্যাস করুন।
আত্মীয়তা বা বন্ধুত্ব রক্ষার্থে আমরা প্রায়ই নেতিবাচক মানুষকে গুরুত্ব দিয়ে ফেলি। ব্যাপারটি আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ও বাস্তব জীবনের জন্য বিপজ্জনক। নেতিবাচক মানুষকে এড়িয়ে চলার কৌশল রপ্ত করুন। নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাথে। দেখা করুন, গল্প করুন, আলোচনা করুন, মন খুলে হাসুন তাদের সাথে। এতে একাকিত্ব, বিষাদ দূর হবে। আবার হতেও পারে, গল্পে গল্পে জীবনের কোনো সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবেন। হয়তো আপনার প্রয়োজনে কেউ না কেউ এগিয়ে আসবেন আর তার প্রয়োজনে আপনি পাশে দাঁড়াবেন।
জীবনের গল্পে আনন্দ যেমন থাকে, ছোট-বড় দুঃখ আর মন খারাপও থাকে, যা আপনি কাউকে বলতে পারেন না। কিছু স্বপ্ন বা অলীক কল্পনাও নিশ্চয় আছে, যা ভাবতে ভালো লাগে। ব্যস এ সবই লিখে ফেলুন।
দেহকে আমরা যেভাবে যত্ন করি মনের প্রতিও যত্নবান হওয়া জরুরি। শরীরের ব্যথা বা হাত কেটে যাওয়া, ক্ষত তার চেয়ে হয়তো কোনো কারণে মনের মধ্যে অনেক বেশি ব্যথায় আক্রান্ত, মনে হচ্ছে মনটা হয়তো কেটে গেছে। সেটাকে হয়তো আপনি শরীরের ক্ষতের মতো গুরুত্ব দিচ্ছেন না, অবহেলা করছেন। কাজেই, আপনার শরীরের ছোটখাটো কোনো সমস্যায় আপনি যেমন সাহায্য চান, বিশেষজ্ঞর কাছে যান ঠিক তেমনি মনের যেকোনো সমস্যা ফেলে রাখবেন না। প্রয়োজন অনুসারে মনোবিজ্ঞানীর কাছে যান এবং তাদের পরামর্শ নিন।
নিয়মিত ব্যয়াম করুন। এতে আপনার মনকে চাঙা থাকবে। কাজে মনোযোগ বাড়বে ও ঘুম ভালো হবে। ব্যায়াম হতাশা ও মানসিক চাপ কমায়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খান। দেহের পুষ্টি জোগাতে বাদাম, দুধ, ডিম ও ফল-শাকসবজি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
নিজেকে প্রশ্ন করুন? আপনি কী করতে ভালোবাসেন? বাইসাইকেল চালাতে, সিনেমা দেখতে- যা ভালো লাগে তাই করুন। এই ছোট ছোট পছন্দের কাজগুলো আপনার মনের শক্তি জোগাতে কাজ করবে, মনকে আনন্দে রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০২৪
এএটি