আলস্যটা ঝেড়ে ফেলা যাচ্ছে না কিছুতেই। সকালে চোখ খুলে আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতেই যেন ক্লান্তিটা ফিরে আসে।
এখনকার ব্যস্ত সময়ে দু’দণ্ড জিরোবার জো নেই। তার মধ্যেই শরীর, মনজুড়ে পাহাড়প্রমাণ ক্লান্তি। মনোবিদেরা জানাচ্ছেন, আপনার অবচেতন মন কাজের ব্যাপারে উদ্যমী হতে দিচ্ছে না। এর কারণ হলো অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা, মানসিক চাপ এবং অবশ্যই জীবনযাপনের কিছু ত্রুটি। খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, শরীরচর্চা না করা, তার ওপরে নেশা করা, এসবই আলসেমি দিন দিন বাড়িয়ে দিচ্ছে। তা হলে এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
আলস্য কাটিয়ে মন চনমনে করে তুলুন পাঁচ উপায়ে
* শরীরচর্চা জরুরি
আলস্য কাটিয়ে উঠতে গেলে আগে জীবনযাপনে কিছু প্রয়োজনীয় বদল আনতে হবে। কুঁড়েমি করে খাওয়া বাদ দেওয়া চলবে না। আজ করব, কাল করব বলে শরীরচর্চা বাদ দিলে হবে না। প্রতিদিনের একটা রুটিন তৈরি করুন। মনোবিদেদের পরামর্শ, রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠা জরুরি। ঘুম ভেঙে গেলে আর বিছানায় গড়াবেন না। অন্তত মিনিট কুড়ি শরীরচর্চা করুন। জিমে যাওয়ার সময় না থাকলে বাড়িতেই হাঁটুন। ছাদে বা বাড়ির সামনে জোরে জোরে হাঁটুন। হালকা যোগব্যায়ামও খুব কার্যকরী। সকাল সকাল শরীরচর্চা করে নিলে সারা দিনটা ঝরঝরে লাগবে। রক্ত সঞ্চালন ভালো হবে, এন্ডোক্রিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়বে, ফলে কোনোভাবেই আপনার ক্লান্তি আসবে না। আলসেমি করার ইচ্ছেও থাকবে না।
* কাজে নতুনত্ব আনুন
গুছিয়ে কাজ করাটা খুব জরুরি। যে কাজটা রোজই করছেন তাতেই হয়তো আকর্ষণ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে কাজের প্রতি আগ্রহ ও উৎসাহ দুই-ই কমেছে। তাই কাজে নতুনত্ব আনা দরকার। প্রথমেই কাজের জায়গাটা ভালো করে গুছিয়ে ফেলুন। অফিসে যে ডেস্কে কাজ করছেন, সেখানটা সুন্দর করে সাজান। বাড়িতে কাজ করলে সেই জায়গাটা পরিচ্ছন্ন রাখুন। কাজের প্রক্রিয়ায় বদল আনুন। নতুন নতুন ভাবনাচিন্তা করুন। সময়কেও গুরুত্ব দিতে হবে। কখন কোনো কাজটা করবেন, সেটা সময় হিসেবে ভাগ করে নিন। কাজ ফেলে রাখবেন না। তা হলেই দেখবেন আগ্রহ ফিরে এসেছে।
* দুশ্চিন্তা ছেড়ে মনের জোর বাড়ান
আমাদের নিত্যদিনের অভ্যাসে এমন কিছু ভুল আছে, যা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মনোবিদেরা বলছেন, বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা অবসাদ। মনের অসুখে বেশি ভুগছেন কম বয়সিরাই। এর কারণ হলো দুশ্চিন্তা। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গিয়ে অনেক বেশি চাপ নিয়ে ফেলছেন তারা মনের ওপরে। ফল আশানুরূপ না হলেই হতাশা গ্রাস করছে। তার থেকেই অবসাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে। সব কাজেই যে একবারে সাফল্য আসবে, তা নয়। কিন্তু চেষ্টা ছাড়লে চলবে না। হতাশা থেকেই কাজে উৎসাহ কমছে। আর তখনই আলস্য পেয়ে বসছে। তাই মনের জোর, একাগ্রতা বাড়ানোর পরামর্শই দিচ্ছেন মনোবিদেরা।
* খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনতেই হবে
কম ঘুম, শরীরে পানিশূন্যতা, পুষ্টিকর খাবারের অভাব থেকেও বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। হজমের গোলমাল দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকলে শারীরিক দুর্বলতা আসে। তার জের পড়ে মনের ওপরেও। শরীর ঠিক না থাকলে কাজেও মন বসে না। তাই দিনভর যদি তরতাজা থাকতে হয়, তা হলে খাওয়া-দাওয়ায় বদল আনতেই হবে। পুষ্টিবিদেরা জানাচ্ছেন, বাইরের খাবার একেবারে বর্জন করতে হবে। বাড়িতে কম তেলমসলায় রান্না করা খাবার খান। ভাত, রুটি, দুধ, মাছ, ফল, শাকসবজি প্রতিদিনের খাবারে দরকার। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
* মন ছটফট করলে ধ্যানে বসুন
হঠাৎ হঠাৎ রেগে যাচ্ছেন, আত্মবিশ্বাস একেবারে তলানিতে ঠেকেছে, ঘুম আসছে না, বিছানায় এ পাশ-ওপাশ করেই রাত কাবার। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিনিট করে ধ্যান করুন। দেখবেন সপ্তাহখানেক বাদে অনেকটাই ফল পাচ্ছেন। উদ্বেগ কমছে, আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছেন। আলস্যও উধাও হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২৪
এএটি