ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

‘একজন মুক্তিযোদ্ধা-নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত’ - জয়া আহসান

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, জুন ৩০, ২০১০

সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের আলোচিত উপন্যাস নিষিদ্ধ লোবান। এ উপন্যাসের সঙ্গে নিজের জীবনেরও কিছুটা মিল আছে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও মুক্তিযোদ্ধা নাসিরউদ্দিন ইউসুফের।

এ উপন্যাসটির ছায়া অবলম্বনে নির্মাণ করছেন চলচ্চিত্র গেরিলা। চলতি বছর সরকারি অনুদান পাওয়া এ ছবির শুটিং হলো কদিন আগে গাজীপুর ও আশপাশের লোকেশনে। ছবির নাম ভূমিকায় অভিনয় করছেন বহুমাত্রিক অভিনেত্রী জয়া আহসান। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর-র মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেছেন গেরিলা, অভিনয় ও নানা  প্রসঙ্গে।

গেরিলা ছবিতে আপনার করা চরিত্রটি সম্পর্কে জানতে চাই?

আমি এ ছবিতে ‘বিলকিস’ চরিত্রে অভিনয় করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষে সে সংসার পেতেছিল সাংবাদিক হাসানের সঙ্গে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে ছবিটির গল্প শুরু। যুদ্ধবিধ্বস্ত ঢাকায় চাকরিরত বিলকিসের স্বামী নিখোঁজ, শ্বাশুড়ি মারাত্মক অসুস্থ। স্বামীকে খুজঁতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দলের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয় । ঢাকায় যুদ্ধরত গেরিলাদের বিভিন্ন দলের মাঝে খবরাখবর পৌঁছোনোর মধ্য দিয়ে সে জড়িয়ে যায় মুক্তিযুদ্ধে। এক গ্রুপ থেকে আরেক গ্রুপের কাছে অস্ত্র ও গোলাবারুদ পৌঁছে দেয়া হয়ে ওঠে তার প্রধান কাজ। এমন সময় তার হাতে আসে আলতাফ হোসেনের রেকর্ড করা কিছু গানের অডিও স্পুল। সেটা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পৌঁছানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু এ সময় তারই সহযোগী আরেক নারী মুক্তিযোদ্ধা ধরা পড়েন পাকসেনাদের হাতে। ধরা পড়েন আলতাফ মাহমুদসহ সহযোগী অনেক মুক্তিযোদ্ধা। রংপুরে গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে আসে বিলকিস। তবু নিস্তার পায় না। হানাদারদের হাতে তাকে ধরা পড়তে হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বাস্তব পরিস্থিতি ও বিলকিসের পরিণতি নিয়েই গেরিলা ছবিটি নির্মিত হচ্ছে। বিলকিস চরিত্রটিই এখানে গেরিলা। পরিচালক বাচ্চু ভাই (নাসিরউদ্দিন ইউসুফ) আমাকে বলেছেন, তার নিজের জীবন অবলম্বনেই চরিত্রটি তিনি তৈরি করেছেন। কেবল পুরুষের জায়গায় চরিত্রটিকে নারী করা হয়েছে।

ছবিটির চিত্রনাট্য তো ‘নিষিদ্ধ লোবান’ উপন্যাসটির ছায়া অবলম্বনে তৈরি...?

হ্যাঁ, কাঠামোটুকু নিষিদ্ধ লোবান থেকে নেয়া। উপন্যাসটি একাধিকবার পড়েছি। এখানে মূল গল্প ঠিক আছে। তবে মুক্তিযুদ্ধে একান্ত নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই বাচ্চু ভাই চিত্রনাট্য লিখেছেন। উপন্যাসে নেই এমন অনেক কিছুই এতে যোগ হয়েছে, আবার বাদ পড়েছে অনেককিছু।

‘গেরিলা’-তে আপনার কাজ করার অভিজ্ঞতা জানতে চাই? কাজ শুরুর আগে প্রস্তুতি কেমন ছিল?

ছবির সামান্য অংশের কেবল শুটিং হয়েছে। জুলাইয়ের শেষে আবার শুটিং। ছবিটি মুক্তিযুদ্ধের। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। কারণ তখনও আমার জন্ম হয়নি। একজন মুক্তিযোদ্ধা-নির্মিত মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে আমি গর্বিত। বাচ্চু ভাই আমাকে দু বছর আগে ছবিটিতে কাজ করার জন্য বলে রেখেছিলেন। বিলকিস চরিত্রটির রূপরেখা সম্পর্কে তখনই ধারণা দেন। তখন থেকেই মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কিছু পড়াশোনা শুরু করি। মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ অনুভব করার চেষ্টা করি। পা-ুলিপি পাওয়ার পরে আমি এক্সাইটেড। কাজটা কতটা ভালোভাবে করতে পারব তা নিয়ে চিন্তিত। ছবিটির পরিচালক নিজে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাই মুক্তিযোদ্ধার চরিত্র করতে গিয়ে আমি পুরোপুরি তার ওপর নির্ভর করতে চাই। গেরিলা হতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত।

আগে কোন কোন ছবিতে অভিনয় করেছেন? ভবিষ্যতে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার ইচ্ছা আছে?

এর আগে অভিনয় করেছিলাম নুরুল আলম আতিকের ডুবসাঁতার, তানিম নূরের ফিরে এসো বেহুলা এবং  অতিথি শিল্পী হিসেবে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ব্যাচেলর ছবিতে। চলচ্চিত্রে নিয়মিত হবো কিনা জানি না। তবে ভালো গল্প আর চরিত্র পছন্দ হলে অবশ্যই অভিনয় করবো। কারণ চলচ্চিত্র হচ্ছে পারফর্র্মিং আর্টের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের বিকল্প নেই।

শুধু কি অফট্র্যাকের ছবিতেই নাকি বাণিজ্যিক ছবিতেও কাজ করবেন?

আসলে অফট্র্যাক বা কমার্শিয়াল ছবি বলে আলাদা কিছু আছে কিনা বলতে পারবো না। আমি মনে করি, ছবি দুরকম। ভালো ছবি আর মন্দ ছবি। ভালো ছবিতেই শুধু অভিনয় করতে চাই।

টিভিনাটকের দর্শক দিন দিন কমছে, এ বিষয়ে আপনার অভিমত?

দর্শক মোটেও কমেনি, দর্শক আসলে ভাগ হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি মিলিয়ে চ্যানেলের সংখ্যা তো কম না। কোনটা রেখে কোনটা দেখবেন তারা। নাটকের মাঝে লম্বা বিজ্ঞাপন-বিরতি দর্শকদের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লম্বা বিজ্ঞাপন বিরতির কারণে পুরো নাটক না দেখেই দর্শক চলে যাচ্ছেন অন্য চ্যানেলে। তাছাড়া সব চ্যানেলেই এতো বেশি সিরিয়াল, মেগা-সিরিয়াল, অনেক দর্শক একটার সঙ্গে অন্যটা গুলিয়ে ফেলছেন। সব চ্যানেলেরই উচিত এখন একপর্বের নাটক প্রচারের প্রতি জোর দেয়া।

কোন ধরনের চরিত্র আপনার পছন্দ, শহুরে নাকি গ্রামীণ?

শহুরে নাকি গ্রামীণ, বিষয়টি আমার কাছে গুরত্বপূর্ণ নয়। আমি চাই একটু ব্যাতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করতে। ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করি।

অভিনয় করে  তৃপ্তি পেয়েছেন এমন কয়েকটা নাটকের কথা বলবেন?

অভিনয়ের ক্ষেত্রে আমি একটু চুজি। কাজ করে তৃপ্তি পাবো না বুঝলে সেটা করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করি। নিজের করা ভালোলাগা নাটকের তালিকাটা আমার তাই বেশ লম্বা। সেখান থেকে এ মুহূর্তে মনে পড়ছে সংশয়, টু-লেট, অবাক সন্দেশ, অতঃপর পারুলের দিন, তারপরও অঙ্গুরলতা নন্দকে ভালোবাসে, কফি হাউস, পাঞ্জাবিওয়ালা, সেলিব্রিটি ১৯৭১ নাটকের নাম।

আপনাকে নবীনদের সঙ্গেই বেশি কাজ করতে দেখা যায়, কেন?

নবীনরা অনেক গুছিয়ে কাজ করে। তাদের কাজে আন্তরিকতা থাকে বেশি। তাছাড়া ওদের সঙ্গে কমিউনিকেশন ভালো হয়। চিন্তাভাবনা মিলে যায়। আসলে তরুণরাই তো পারে সমাজ-সংস্কৃতি বদলে দিতে।

আপনার পরিবারের কথা জানতে চাই?

আমার বাবা এ এস মাসউদ ব্যবসায়ী। মা রেহানা মাসউদ, আমেরিকান স্কুলের শিক্ষক। আমরা তিন বোন এক ভাই। আমি সবার বড়। ছোট ভাই অদিত লন্ডনে, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ছোট বোন কান্তা, সেও লন্ডনে। পড়াশোনার পাশাপাশি একটা টিভি চ্যানেলে কাজ করে। স্বামী ফয়সাল আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। ব্যবসার পাশাপাশি সে মডেল হিসেবে পরিচিত।

বাংলাদেশ স্থানীয় সময় ১০৩০, ১ জুলাই ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।