বাংলা সাহিত্যে ‘দেবদাস’ একমাত্র উপন্যাস, যা নিয়ে তিনটি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে ১১টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয়েছে। ১২তম ছবিটি নির্মাণ করেছেন বরেণ্য পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম।
প্রায় ২৫ বছর আগে বুলবুল আহমেদ, কবরী, রহমান ও আনোয়ারাকে নিয়ে একবার এবং শাকিব খান, অপু বিশ্বাস, মৌসুমী ও শহীদুজ্জামান সেলিমকে নিয়ে আরেকবার। চাষী নজরুল ইসলামের সাম্প্রতিক নির্মাণ ‘রঙিন দেবদাস’ মুক্তি পাচ্ছে এবারের পহেলা বৈশাখে।
ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় বিগবাজেটের এ ছবির শুটিং শেষ হয়েছে গত বছরের শেষে। জানুয়ারির মাঝামাঝিতে শেষ হয়েছে এডিটিং-ডাবিংসহ পোস্ট প্রডাকশনের কাজ। সেন্সর বোর্ডও ছবিটিকে দিয়েছে আনকাট সার্টিফিকেট। পহেলা বৈশাখে সারা দেশে ছবিটি একযোগে মুক্তি দেওয়া হবে।
কেমন হলো এবারের ‘দেবদাস’, জানতে চাইলে নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম বললেন, আমার প্রত্যাশার চেয়েও কাজ ভালো হয়েছে। এক্ষেত্রে ছবির শিল্পী ও কলাকুশলীর আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ। শাকিব খান যে শুধু নায়কই নন, অভিনেতা হিসেবেও একনম্বর তা ছবিতে প্রমাণ করেছেন। অপু বিশ্বাসকে পার্বতী চরিত্রে নেওয়ায় অনেকেই আমাকে বলেছিলেন, মিস কাস্টিং হয়েছে। কিন্তু অপুর অভিনয়ে আমি সন্তুষ্ট। সে পার্বতী চরিত্রটি করেছে নিখুঁতভাবেই। চন্দ্রমুখী চরিত্রে মৌসুমী আরেকবার প্রমাণ করেছেন, অভিনয়ে এখনো তিনি অদ্বিতীয়। ছোটপর্দার অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিম করেছেন চুনিলাল চরিত্রটি। বড়পর্দায় এসেও সেলিম ছিলেন পুরোপুরি জড়তামুক্ত। প্রধান চরিত্রের আর্টিস্টরা ভালো করলে সাইড আর্টিস্টরাও ভালো করে। সবমিলিয়ে আমি মনে করছি, ‘রঙিন দেবদাস’ হবে উপভোগ্য একটি ছবি।
দ্বিতীয়বার ‘দেবদাস’ নির্মাণের কারণ জানতে চাইলে চাষী নজরুল ইসলাম বললেন, নতুন প্রজন্মের বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগ কম। তাদের কাছে এই কালজয়ী উপন্যাসের আমেজ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এবারের ‘দেবদাস’। তিনি বলেন, শরৎচন্দ্রের উপন্যাসকে অবিকৃত রেখে আবারও নির্মাণ করছি ‘রঙিন দেবদাস’। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের েেত্র উপন্যাস ও চরিত্রগুলোর ভাব-আবেগ অুণœ রাখা হয়েছে। আমার বিশ্বাস আগের ছবিটির মতোই ‘রঙিন দেবদাস’ জনপ্রিয়তা পাবে।
‘দেবদাস’ ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে শাকিব খান বলেন, আমার দীর্ঘদিনের শখ ছিল দেবদাস চরিত্রে অভিনয় করার। পরিচালক চাষী ভাই মূলত আমার আগ্রহেই ছবিটি হাতে নেন। অনেক তো অভিনয় করলাম, কিন্তু আর কোনো ছবির জন্য আমাকে এতটা হোমওয়ার্ক করতে হয়নি। এটি আমার অভিনয় জীবনের অন্যতম স্মরণীয় চলচ্চিত্র।
ছবিতে নিজের করা ‘পার্বতী’ চরিত্র সম্পর্কে অপু বিশ্বাস বলেন, অন্যসব অভিনেত্রীর মতো পার্বতী আমারও একটি স্বপ্নের চরিত্র। কিন্তু যখন অভিনয়ের প্রস্তাব পাই, তখন বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সংশয় ছিল এত বড় দায়িত্ব পালন করতে পারব কিনা। দেবদাসের প্রথম পার্বতী কবরী ম্যাডামের উৎসাহেই সাহস পেলাম এবং আনন্দের সঙ্গে কাজ করলাম। এতে কাজ করতে পেরে সত্যিই আমি অভিভূত।
মৌসুমী বললেন, প্রথমবার ‘দেবদাস’ উপন্যাসটি পড়ার পর আমার ভেতরে চন্দ্রমুখীর জন্য খুব মায়া তৈরি হয়। বেচারি কিছু পাবে না জেনেও আজীবন দেবদাসকে শুধু ভালোবেসেই গেছে। প্রিয় চরিত্র চন্দ্রমুখী করতে পারায় আমি আনন্দিত। কাজের ক্ষেত্রে আমরা সবাই এতটা সিরিয়াস ছিলাম যে, আমাদের টিমওয়ার্কটা ছিল দারুণ। আমার মনে হয় ছবিটি দর্শকের ভালো লাগবে।
চুনিলাল চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, চাষী নজরুল ইসলাম আমাকে এই চরিত্রে কেন যে বেছে নিলেন আমি তা জানি না। তিনি যতটুকু আস্থা আমার ওপর দেখিয়েছেন, আমি কাজের মধ্যে সেই আস্থার জবাব দেবার চেষ্টা করেছি। চুনিলাল চরিত্রে অভিনয় করতে পারায় আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি।
আজকের প্রজন্মের অনেকের চোখের সামনে এখনো রয়েছে বলিউডের সঞ্জয় লীলা বানসালীর ‘দেবদাস’; শাহরুখ, ঐশ্বরিয়া আর মাধুরীর ঝলমলে পারফর্মেন্স। তবে ছবিটিতে শরৎচন্দ্রের উপন্যাসকে অনেক ক্ষেত্রেই অনুসরণ করা হয়নি। উপন্যাসের বাইরে গিয়ে বহু ঘটনা আর চরিত্র আমদানি করেছেন পরিচালক। কাজেই এটিকে সাহিত্যের চলচ্চিত্ররূপ বলা যায় না। অন্যদিকে আমাদের নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম উপন্যাসকে অবিকৃত রেখে দ্বিতীয়বারের মতো ‘দেবদাস’ নির্মাণ করেছেন। নতুন প্রজন্মের দর্শকদের সত্যিকারের দেবদাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যই তার এই প্রচেষ্টা।
বাংলাদেশ সময় ০০২০, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১১