আমাদের লোক-ঐতিহ্য যাত্রাপালা আজ বিলুপ্তপ্রায়। যাত্রার নামে রাতভর যা হচ্ছে তাতে বিকৃতি এতোটাই যে, সেটাকে নোংরামি ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
প্রথমেই একুশে পদক প্রাপ্তির অনুভূতির কথা জানিয়ে জ্যোৎস্না বিশ্বাস বললেন, স্বীকৃতি প্রতিটি মানুষের জীবনেই ভীষন মূলবান। বিশেষ করে শিল্পীর কাছে তার কাজের স্বীকৃতি, এক বিশাল অনুপ্রেরণা। যাত্রাঙ্গন বিশেষ ভূমিকা পালনের জন্য আমাকে একুশে পদক প্রদানের জন্য নির্বাচিত করায় আমি সম্মানিত বোধ করছি। কাজের মূল্যায়ন পেলে সবারই ভালো লাগে। এই অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। যখন ফোন দিয়ে জানানো হলো আমাকে একুশে পদকের জন্য মনোনীত করা হয়েছে তখন বিষয়টি স্বপ্নের মতোই মনে হচ্ছিল। আমাদের যাত্রাঙ্গন একটি অবহেলিত জায়গা। একুশে পদকের জন্য এ অঙ্গন থেকে একজনকে বেছে নেয়ার জন্য সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এটা শুধু আমার প্রাপ্তিই নয়, এটা যাত্রাশিল্পের প্রাপ্তি।
জ্যোৎস্না বিশ্বাসের কাছে তার যাত্রাদল চারণ নাট্যগোষ্ঠীর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চারণ নাট্যগোষ্ঠীর নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবু যাত্রাঙ্গনে সুস্থধারা ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সারারাত জেগে নাচ-গানে ভরা যাত্রার বিরোধিতা করি। আমরা চাই, থিয়েটারের মতোই সন্ধ্যায় যাত্রা শুরু হবে এবং আড়াই-তিন ঘন্টা পর্যন্ত তা চলবে। চারণ নাট্যগোষ্ঠী এভাবেই প্রদর্শনীর আয়োজন করে থাকে।
যাত্রা নিয়ে নিজের কর্মকান্ডের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিটিভিতে যাত্রার উপর একটি ধারাবাহিক প্রামাণ্যচিত্র উপস্থাপনা করছি। অনুষ্ঠানটিতে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালার ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি যাত্রার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাাৎকার থাকে। আরো থাকে বিভিন্ন যাত্রাদল পরিবেশিত যাত্রার অংশবিশেষ। এ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা ও পরিচালনার রয়েছে আমার মেয়ে অরুণা বিশ্বাস।
যাত্রাশিল্পের উন্নয়নে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? উত্তরে জ্যোৎস্না বিশ্বাস বলেন, যাত্রার মান উন্নয়নে দলগুলোর মধ্যে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি। সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করছি, ঐতিহ্যবাহী যাত্রাশিল্প টিকিয়ে রাখতে হলে যাত্রায় সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগ আছে, সেখানে যাত্রা বিষয়টি যেন পাঠ্য করা হয়; এই উদ্দেশ্যে কাজ করছি। আমি নিজেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নাট্যকলা বিভাগে যাত্রার উপর নিয়মিত কাস নিয়ে থাকি। তাছাড়া যাত্রাভিনয় নিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় আগ্রহীদের নিয়ে প্রশিণ কর্মচালনা পরিচালনা করছি। যাত্রার জন্য স্থায়ী রঙ্গমঞ্চ গড়ে তোলার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি, সভা-সেমিনারও করছি। এবার একুশে পদক পাওয়ায় যাত্রাঙ্গনের উন্নয়নের জন্য আমার দায়িত্ব আরো বেড়ে গেল।
বাংলাদেশ সময় ১১৩০, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১১