ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

মহানায়কের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১১

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের মহানায়ক খ্যাত বুলবুল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ জুলাই শুক্রবার। তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করার জন্য এই দিন নেওয়া হয়েছে  নানা কর্মসুচি।

বিভিন্ন স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে যেমন বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে, তেমনি বুলবুল আহমেদের সহকারী নির্মাতা ফিরোজ খানের সমন্বয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি ও বিভিন্ন সংগঠন দিনটি বিশেষভাবে পালনেরও উদ্যোগ নিয়েছে।

মহানায়ক বুলবুল আহমেদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলা নিউজের এই বিশেষ আয়োজন।

মহানায়ক বুলবুল আহমেদের জীবন ও কর্ম


বুলবুল আহমেদের জন্ম ১৯৪১ সালে পুরান ঢাকার আগামসিহ লেনে। তার আসল নাম তাবারক আহমেদ, আদর করে তার বাবা-মা তাকে বুলবুল বলে ডাকতেন। পিতা খলিল আহমেদ ছিলেন পাকিস্তান আমলের অর্থ বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি। তিনি ছিলেন শখের অভিনেতা ও নাট্যকার। বাবার সঙ্গে ছোটবেলাতেই বুলবুল আহমেদ পাড়া ও অফিসের নাটকে বিভিন্ন সময় শিশু চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

বুলবুল আহমেদ পড়াশোনা করেছেন ঢাকার কলেজিয়েট স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কলেজ-লাইফে তিনি মঞ্চে ‘চিরকুমার সভা’ নাটকে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করে প্রশংসিত হন। কলেজজীবন থেকেই তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে তৎকালীন ইউবিএল ব্যাংক টিএসসি শাখার ম্যানেজার হিসেবে শুরু করেন কর্মজীবন ।

ব্যাংকে চাকরির পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ টিভিনাটক নিয়মিত অভিনয় করতেন । বুলবুল আহমেদ অভিনীত প্রথম টিভি নাটক আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘বরফ গলা নদী’। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভিনাটকের মধ্যে রয়েছে মালঞ্চ, ইডিয়ট, মাল্যদান, বড়দিদি, আরেক ফাল্গুন, শেষ বিকেলের মেয়ে প্রভৃতি।

ব্যাংকে ১০ বছর চাকরি করার পর তিনি রূপালি জগতে পা রাখেন। ১৯৭৩ সালে আবদুল্লাহ ইউসুফ ইমাম পরিচালিত ‘ইয়ে করে বিয়ে’ ছবির মাধ্যমে বড়পর্দায় তার অভিষেক হয়। । বছর খানেক বিরতির পর আবার বড় পর্দায় আসেন আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘অঙ্গীকার’ ছবির মাধ্যমে। এরপর ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি চলচ্চিতেত্র নিয়মিত হয়ে যান। একে একে কাজ করেন ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘সীমানা পেরিয়ে’, ‘সূর্যকন্যা’, ‘দি ফাদার’ প্রভৃতি দর্শকনন্দিত ছবিতে। ১৯৮৭ সালে চাষী নজরুল ইসলামের দেবদাস ছবির মাধ্যমে নিজেকে আলাদা উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেন বুলবল আহমেদ।

চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বুলবুল আহমেদ কিছু ছবি পরিচালনা ও প্রযোজনাও করেছেন । যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ওয়াদা’, ‘মহানায়ক’, ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’, ‘আকর্ষণ’, ‘কত যে আপন’ প্রভৃতি। এর মধ্যে শেষের চারটি ছবি প্রযোজনার পাশাপাশি পরিচালনাও করেন বুলবুল আহমেদ। ৪৪ বছরের মিডিয়া জীবনে বুলবুল আহমেদ প্রায় ৩০০ নাটক এবং দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয করেন। বুলবুল আহমেদ অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘দুই নয়নের আলো’। সর্বশেষ টিভি নাটক হচ্ছে ২০০৯ সালে শুটিংকৃত ‘বাবার বাড়ি’। নাটকটিতে পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও  করেছেন তিনি।

বুলবুল আহমেদ চারবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পুরস্কার লাভ করেন।
 
২০১০ সালের ১৪ জুলাই দিবাগত রাত দেড়টায় মহানায়ক বুলবুল আহমেদ ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী ডেইজি আহমেদ এবং তিন সন্তান ঐন্দ্রিলা, তিলোত্তমা ও শুভকে রেখে যান। ৬ জুলাই তাকে ঢাকার আজিমপুর গোরস্তানে পিতা-মাতার কবরের পাশে অন্তিম শয্যায় শায়িত করা হয়।

প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর নানা আয়োজন

বুলবুল আহমেদের পরিবারের সদস্যরাসহ বিভিন্ন সংগঠনের শুভাকাঙ্খীরা আজিমপুর কবরস্থানে তার কবর জিয়ারত করবেন ১৫ জুলাই সকাল নয়টায় । ১৫ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টায় শিল্পকলা একাডেমীর এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে বুলবুল আহমেদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে  অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা ও স্মরণসভা। শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ আরো অনেকেই এই আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন।

এই দিন সকাল ১১টায় এফডিসির জহির রায়হান মিলনায়তনে ফিরোজ খানের উদ্যোগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি , গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথ নাটক পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ডিরেক্টর গিল্ডস, অভিনয় শিল্পী সংঘ, প্রযোজক সমিতির সম্মিলিত আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে মিলাদ মাহফিল ও শোক সভা । একইদিনে সন্ধ্যা সাতটায় ১৪৬/২ নিউ বেইলী রোডে সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গাঁধার পাল’-এর আয়োজনে বুলবুল আহমেদ অভিনীত ও আলমগীর কবির পরিচালিত ‘সীমানা পেরিয়ে’ ছবিটি প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।  

বুলবুল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে ১৪ জুলাই দুপুর সাড়ে বারোটায় অনন্যা রুমার প্রযোজনায় চ্যানেল আই সিটিসেল তারকা কথনে মহনায়ককে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন তার কণ্যা নাট্যাভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা ও কর্মজীবনের বন্ধূ অভিনেতা কেরামত মওলা। চ্যানেল আইতে জামাল রেজার প্রযোজনায় আব্দুর রহমানের উপস্থাপনায় ১৫ জুলাই বুলবুল আহমেদের মৃত্যু বার্ষিকীর দিনে বিকেল সাড়ে পাঁচটায়  ‘সাময়িকী’ অনুষ্ঠানে বুলবুল আহমেদকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করবেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম ও চিত্রনায়িকা অঞ্জনা। এই অনুষ্ঠানের পর পরই সন্ধ্যা ছয়টায় বুলবুল আহমেদের নির্দেশনায় নির্মিত শেষ খন্ড নাটক ‘প্রক্সি’ প্রচারিত হবে।

১৫ জুলাই রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে  বৈশাখী টেলিভিশনে জাহিদ হোসেন শোভনের প্রযোজনায় সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকীর উপস্থাপনায় ‘সাতকাহন` ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বুলবুল আহমেদের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে কথা বলবেন তার স্ত্রী ডেইজী আহমেদ ও তার কন্যা ঐন্দ্রিলা।   ঐন্দ্রিলার নির্দেশনায় নির্মিত বুলবুল আহমেদের উপর ডকুমেন্টরি ‘একজন জীবন্ত কিংবদন্তির কথা’রও কিছু অংশ এতে দেখানো হবে।


এছাড়াও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী শাখায় ফিল্ম এ্যান্ড মিডিয়া ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে আগামী ১৯ জুলাই দিনব্যাপী বুলবুল আহমেদ অভিনীত তিনটি চলচ্চিত্র সীমানা পেরিয়ে, দেবদাস এবং সূর্যকন্যা  প্রদর্শিত হবে।  

বাংলাদেশ সময় ১৫৩৫, জুলাই ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।