ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের চিরবিদায়

বিপুল হাসান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১১

বরেণ্য চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ আর নেই।   ১৩ আগস্ট দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ঘিওর থানার বালিয়াজুড়ি এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় বাস-মাইক্রোবাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষে  চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর, গাড়ির চালক মুস্তাফিজসহ আরো দুজন ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।



চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ তার নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’-এর শুটিং লোকেশন নির্বাচনের জন্য ১৩ আগস্ট ভোরে মানিকগঞ্জের বালিয়াজুড়ি যান। তার সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, এটিএননিউজের সিইও ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে মিশুক মুনীর, শিল্পী ঢালী আল মামুন ও তার স্ত্রী সহ মোট নয়জন। লোকেশন দেখে ফেরার পথে ঢাকা আরিচা মহাসড়কে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাংগাগামী একটি বাসের সাথে তাদের মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর, গাড়ির চালক মুস্তাফিজসহ আরো দুজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন। দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হন তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও অন্যরা। তাদের রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।

চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ এবং এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের মরদেহ ১৪ আগস্ট রোববার বেলা সাড়ে ১০টায় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে বাদ যোহর তাদের জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। সেখান থেকে তারেক মাসুদের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে এফডিসিতে।

তারেক মাসুদের জন্ম ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানায়। বাল্যকালের শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি মাদ্রাসায়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার মাদ্রাসা শিক্ষা শেষ হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি সাধারণ শিক্ষায় প্রবেশ করেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনের সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং দেশে-বিদেশে চলচ্চিত্র বিষয়ক অসংখ্য কর্মশালা এবং কোর্সে অংশ নিয়েছেন।

tarekworking
১৯৮২ সালের শেষ দিকে তারেক মাসুদ জীবনের প্রথম ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র ‘আদম সুরত’ নির্মাণ করেন। এই ডকুমেন্টারিটি ছিল প্রখ্যাত বাংলাদেশী শিল্পী এস এম সুলতানের জীবনের উপর। এরপর থেকে তিনি বেশ কিছু ডকুমেন্টারি, এনিমেশন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন।

১৯৯৫ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করেন প্রামাণ্য চিত্র ‘মুক্তির গান’ ও ‘মুক্তির কথা’। মুক্তিযুদ্ধের হৃদয়স্পর্শী দৃশ্যাবলী সমৃদ্ধ এ দুটো প্রামাণ্যচিত্র দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে পালন করে অবিস্মরণীয় ভূমিকা।

২০০২ সালে তার প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’ মুক্তি পায়। এই চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয় এবং দেশে-বিদেশে বিশেষ প্রশংসা অর্জন করে। তার দর্শক সমাদৃত আরেকটি ছবি হচ্ছে ‘অন্তর্যাত্রা’। এই ছবিটি তিনি নির্মাণ করেন ২০০৬ সালে। তারেক মাসুদ গতবছর সর্বশেষ নির্মাণ করেন ‘রানওয়ে’ ছবিটি। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন নতুন ছবি ‘কাগজের ফুল’ নির্মাণের।

বাংলাদেশের বিকল্প ধারার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সংগঠন শর্ট ফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তারেক মাসুদ।   ১৯৮৮ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের কো-অর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দেয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চলচ্চিত্র বিষয়ে লেখালেখি করতেন ।

তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ একজন মার্কিন নাগরিক। ক্যাথরিন এবং তারেক মিলে ঢাকায় একটি চলচ্চিত্রা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন যার নাম অডিওভিশন। চলচ্চিত্র নির্মাণ ছাড়া তারেক মাসুদের আগ্রহের বিষয় ছিল লোক সঙ্গীত এবং লোক ধারা। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশের সিনেমা হল গুলোর পুণঃজাগরণের উদ্দেশ্যে কমকান্ড পরিচালনা শুরু করেছিলেন।

বিকল্পধারার জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাণ করে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে তারেক মাসদ অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তার এই অবদান বাংলার সিনেমাপ্রেমী দর্শকরা আজীবন মনে রাখবে।

বাংলাদেশ সময় ১৬৪০, আগস্ট ১৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।