ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

জীবনের গল্প

বিনোদন প্রতিবেদক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১১

এই সময়ের সুপরিচিত তরুণ গীতিকবি রবিউল ইসলাম জীবন । দেশের অনেক নামি-দামি শিল্পী তার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

গত পাঁচ বছরে তাঁর লেখা প্রায় দেড়শ’র মতো গান প্রকাশিত হয়েছে। তার লেখা বহু গানই পেয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। গান নিয়ে জীবনের স্বপ্ন অসীম।

জীবনের জন্ম নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। সেখান থেকে এসএসসি পাশের পর মামা মোঃ আব্দুল হকের হাত ধরে চলে যান চট্টগ্রামে। এইচএসসিতে ভর্তি হন চট্টগ্রাম সরকারি কর্মাস কলেজে। গীতিকার হওয়ার গল্প জানতে চাইলে জীবন বললেন, ‘আমার গান লেখার শুরুটা হঠাৎ করেই। তখন ২০০২ সাল। একদিন দুপুরে কলেজ থেকে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় কয়েকটি লাইন মাথায় আসে। বাসায় গিয়ে লিখে ফেললাম। তখন মনে হলো এটা নিঃসন্দেহে গান হতে পারে। এরপর লিখে ফেলি প্রায় ৫০টির মতো। এক সময় চিন্তা করলাম, চট্টগ্রামে পড়ে থাকলে গান নিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমাকে ঢাকায় যেতে হবে। ’

কলেজের চৌকাঠ পেরিয়ে ২০০৪ সালে ঢাকার আসেন জীবন। ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন । সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে জীবন বললেন, ‘ওই সময় ঢাকায় আসার সিদ্ধান্তটা ছিল আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং। কারণ ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করার জন্য যে সাপোর্ট দরকার তা আমার ছিল না। বাবা মারা গেছেন ছোটবেলায়। আমার মা আমাদের তিন ভাইবোনকে অনেক কষ্ট করে বড় করে তুলেছেন। বলা যায় শূণ্য হাতেই আমার ঢাকায় আসা। এসেই কপাল গুণে কয়েকটি টিউশনি জুটিয়ে ফেলি। ছাত্র পড়াই, নিজে পড়ি এবং গান লেখার চেষ্টা করি। ২০০৫ সালে দৈনিক সমকাল পত্রিকার ফান ম্যাগাজিন ‘দূরবীন’ এ লেখালেখি শুরু করি শুধু মাত্র অর্থ উপার্জনের তাগিদে। বছর দেড়েক যেতেই ‘দূরবীন’ বন্ধ হয়ে গেলে আমার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়ে! কেননা লেখার জন্য তখন টিউশনি ছেড়ে দিয়েছি। কি করা যায় তা ভাবতে ভাবতে ওই পত্রিকার এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে বিনোদন পাতায় লেখা শুরু করি। টিউশানিও জুটাই আবার। ততদিনেও গান প্রকাশ করার বাসনা পূরণ হয়নি। গান নিয়ে কখনো শিল্পী, কখনো সুরকার, কখনোবা স্টুডিওতে ধর্না দিয়েছি। অনেক চেষ্টা ও সাধনার পর আমার মনের লালিত স্বপ্নটা পূরণ হয় ২০০৭ সালের শুরুতে। আসিফের ‘হƒদয়ে রক্তক্ষরণ’ অ্যালবামে আমার লেখা দুটো গান প্রকাশ হয়। গান দুটির শিরোনাম ছিল ‘ভালোবাসি বলে’ ও ‘ভাড়াটিয়া চাই’। এগুলো সুর করেন রাজেশ ও পল্লব স্যান্নাল। গান প্রকাশের পর আমার আনন্দ দেখে কে! চারদিক থেকে পরিচিতজনদের সাড়াও মিলল বেশ। দিন দিন গানের প্রতি ভালোবাসা আরো বাড়ল। এরপর অনেক সময় গড়িয়েছে। সময়ের সাথে সাথে আমিও সামনের দিকে এগিয়ে চলেছি। ’

ক্যারিয়ারের দীর্ঘ পাঁচ বছরে প্রায় দেড়শ গান লিখেছেন জীবন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আসিফ ও মুন্নীর গাওয়া ‘ফিরবো না আজ বাড়ি’, বালাম ও জুলির ‘তুমিহীনা’, আরফিন রুমি ও শুভ মিতার ‘প্রতিদিন দেখি তোমায়’, আরফিন রুমির ‘সহেনা যাতনা’ ও ‘প্রেমের পথে’, পড়শীর ‘লজ্জা’ ও ‘মেঘলা দুপুর’, দূরবীনের ‘জ্বলে ওঠা বাংলাদেশ’, তৌসিফের ‘অনুকাব্য’, তৌসিফ ও মুন্নীর ‘এক পা দু’পা’, ক্লোজআপ ওয়ান খ্যাত শিল্পী অপুর ‘আজ বৃষ্টির দিন’ কিশোরের ‘নিখোঁজ সংবাদ’, পুলকের ‘যাযাবর’, ইমরানের ‘দোটানা’, ‘খুঁটি’ চলচ্চিত্রে ন্যান্সি ও বেলাল খানের গাওয়া ‘দলিল’, শফিক তুহিন ও পড়শীর ‘প্রথম সূর্যোদয়’, জুয়েল ও কনার ‘বল তুই আমায় ছেড়ে কোথায় যাবি’, ‘শাহীন ও বিউটির ‘তোমার জন্য’। এছাড়া কাজ করেছেন অনেকগুলো থিম সংয়ে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘এনটিভির নতুন থিম সং’ (কণ্ঠ দিয়েছেন শওকত আলী ইমন, আঁখি আলমগীর, বাপ্পা মজুমদার ও কানিজ সূবর্না), পদ্মসেতু সিম সং ‘ড্রিম কামস ট্র–’ (কণ্ঠ দিয়েছেন রমা),  আতিক, লিজা ও শশী গাওয়া পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে ‘হেসে উঠে বাংলাদেশ’, আজম খান স্মরণে বিপ্লব ও আগুনের গাওয়া ‘গুরু তোমায় সালাম’, সাবিনা ইয়াসমীন ও ইমরানের গাওয়া দেশের গান ‘সুপ্রভাত বাংলাদেশ’। রবিউল ইসলাম জীবনের লেখা গানে আরো কণ্ঠ দিয়েছেন শাফিন আহমেদ, মাহমুদুজ্জামান বাবু, পার্থ বড়–য়া, ফাহমিদা নবী, মিলা, এসআই টুটুল, ডলি সায়ন্তনী, পলাশ, বেবি নাজনীন অবসকিউর, কুমার বিশ্বজিৎ, আঁখি আলমগীর, রবি চৌধুরী, আবিদ, মুহিন, নোলক, সোনিয়াসহ অনেকে।

বর্তমানে জীবন গান লিখছেন সুবীর নন্দী, মিলা, মেহরাব, সাব্বির, লিজা, ঝিলিক, শুক্লা, লিজা, পূজা প্রমুুখের জন্য। কোন ধরনের গান লিখতে ভালো লাগে? জীবন বলেন, ‘রোমান্টিক গান বেশি ভালো লাগে। সেই সাথে বিষয় ভিত্তিক বা থিম সং লিখে আনন্দ পাই। আর গান লেখার সময় আমি সব সময় আমার আশপাশ এবং সময়কে পড়ার চেষ্টা করি। ’ গান লেখার পাশাপাশি পড়াশোনাটাও সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন এই যুবক। বিবিএস (বিকম) পরীক্ষায় পেয়েছেন প্রথম বিভাগ। এখন সরকারি বাংলা কলেজে পড়ছেন মাষ্টার্স (হিসাব বিজ্ঞান) শেষ বর্ষে। পাশাপাশি সাংবাদিকা করছেন দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায়।

এরই মধ্যে দুটি অ্যাওয়ার্ডও যোগ হয়েছে জীবনের প্রাপ্তির ভান্ডারে। এগুলোর একটি সপ্তম সিটিসেল চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডে পপুলার চয়েসে শ্রেষ্ট গীতিকার পুরস্কার। সবচে কম বয়সী হিসেবে এই পুরষ্কারটি পেয়ে দারুণ আনন্দিত জীবন। বলেন, ‘এসব অর্জন সামনের দিনগুলোতে আমাকে আরো ভালো কাজ করার প্রেরণা জোগাবে। ’

ভবিষ্যতের ভাবনার কথা জিজ্ঞেস করতেই হেসে বলেন, ‘স্বপ্ন তো একটাই-সারা জীবন ভালো গান লিখে যাওয়া। তবে এমন কিছু গান লিখতে চাই ,যা শুনে মানুষ নিজেকে নিয়ে চিন্তা করবে এবং নিজের পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। ’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।