ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

শখের বনসাই

ফেরদৌস আহমেদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০১১

কেউ শখ করে কাপড় বুনে, কেউবা কাপড়ে ফুল তোলে, কেউবা আবার বাঁশি বাজায়, অনেকে পাখি পুষে, কেউ আবার বাগান তৈরী করে। বাড়ির আঙিনায়, বেলকনির খালি জায়গায় অনেকেই ফুলের বাগান  করেন।

কেউ কেউ বনসাইয়ের বাগান তৈরি করেন শখের বশে।

শখের তৈরি যেকোন জিনিসই আনন্দ ও ভালোবাসার খোরাক যোগায় মানুষের জীবনে। তেমনিভাবে মৌলভীবাজার শহরের দ্বারক এলাকায় একজন বনসাই প্রেমী আছেন। তিনি হলেন জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত নিজামুল ইসলাম ডালুন।

১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে সুদীর্ঘ তেইশ বছর ধরে তিনি নিজের বাড়ির ছাদে বনসাই বাগান তৈরি করে সযতেœ লালন করছেন। তার এই বাগানটি ‘বনসাই গ্যালারি’ নামে পরিচিত। এই বনসাই গ্যালারিতে ১৩৫টি টবের মধ্যে ৭২ প্রজাতির ৯০টি বনসাই বৃক্ষ রয়েছে।

নিজামূল ইসলাম ডালুন বাংলানিউজটুয়েন্টিফোর.কম এর সাথে আলাপকালে জানান, মূলত সব ধরনের বনসাইয়ের উৎপত্তি হলো জাপানে। বৌদ্ধভিক্ষুরা এই বনসাইয়ের প্রচলন শুরু করে। বনসাই হলো যেকোন একটি দৃশ্যকে বা গাছকে হুবহু ছোট করে আকৃতির মাধ্যমে বহু বছর ধরে রাখা। যাকে আবার সাইকেই ও বলা হয়ে থাকে। যেমন নদীর তীর, গ্রামের বাজার, মোনাজাত, নৃত্যের ভঙি ইত্যাদি। তিনি জানান, সৌদি আরবে চাকুরীতে থাকাকালীন বনসাই দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি তার বাগানে ৬ জাতের বটবৃক্ষকে ১৪ ইঞ্চি করে বনসাই করে রেখেছেন।

তার বাগানে নুডা বট ও কাল বট যুক্ত করে একটি বনসাই করা হয়েছে। চলতি বছর তিনি মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের আকৃতি সম্বলিত একটি ছোট বাগান তৈরি করেছেন। যেখানে তিনি পানির উৎস হিসেবে পানির পাম্প ব্যবহার করছেন।

তিনি জানান, সৌদি আরব থেকে দেশে আসার পর ১৯৮৭ সাল থেকে নিজের বাড়ির ছাদে টবের মধ্যে টমেটো, বেগুন, ঢেড়শ ইত্যাদি ফলাতে শুরু করেন। দশ বছর পর ১৯৯৭ সাল থেকে ছাদের মধ্যে পূর্ণ একটি বাগান তৈরি করে বনসাই চর্চা শুরু করেন। তারপর ৬ বছর সাধনার পর ২০০৩ সালের ২৫-৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি নিজের বাসার ছাদে সাতদিনের জন্য প্রথম বনসাই প্রদর্শনী করেন। এই প্রদর্শনী করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। একসময় জেলা শহর থেকে শুরু করে প্রতিটি উপজেলা ছাড়িয়ে তার এই বনসাই বাগানের কথা পুরো সিলেট বিভাগে ছড়িয়ে পড়ে।
 
কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ২০০৪ সালের ১লা জুন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় পুরষ্কার গ্রহণ করেন। মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মোঃ মোখলেছুর রহমান, মোঃ ইউনুসুর রহমান, মোঃ আলকামা সিদ্দিকী, মোঃ মফিজুর রহমান তার এই বনসাই বাগান পরিদর্শন করেছেন। ২০০৫ সালের ২২-২৮ ডিসেম্বর তিনি সাতদিনের জন্য দ্বিতীয় বনসাই প্রদর্শনী করেন। তার এই শিল্পকর্ম দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ লন্ডনভিত্তিক স্যাটেলাইট চ্যানেল, চ্যানেল এস-এ সচিত্র প্রতিবেদন প্রচারিত হয়েছে।

তার বনসাই গ্যালারিতে রয়েছে- নিম, বেলি, গাব, বেল, ছাতিম, শেফালী, পেয়ারা, হেওরা, তেতুল, বকুল, ডালিম, তমাল, জাম্বুরা, কমলা, তুলশী, বহেরা, বরই, বর্ডার, কামিনী, বগুন, মেহেদী, কড়ই, অর্জুন, জারুল, জুনিপার, নরশিংধ, করমচা, লুকলুকি, কৃষ্ণচূড়া, কদবেল, দেবদারু, সাইকেশ, হরিতকি, কামরাঙা, আমলকি, নীলজবা, লালজবা, কুসুমফুল, এশপেরা, ধানপাতা, অশ্বথ বট, নুডা বট, পাকুর বট, কাঠলি বট, রঙ্গন ছোট, রঙ্গন বড়, নিম সুন্দরী, লাল গোলাপ, খই বাবলা, কনকচাঁপা, গোলাপজাম, পাথরকুচি, সাদা নয়নতারা, স্টার কুইন, বাগান বিলাস, হেলিকুনিয়া, লাল টাইমফুল, গোলাপিটা ফুল, ক্যাকটাস গোল, ক্যাকটাস লম্বা, পান বিলাস, লাল পাতাবাহার, লাল জামরুল, চায়না বাঁশ, সন্ধা মালতী লাল, সন্ধা মালতী হলুদ, যজ্ঞ ডুমুর, আলমন্ডা, এলাচি ও ঢেড়শ।    

নিজামুল ইসলামের বনসাই বাগান দেখতে প্রতিদিনই উৎসাহী দর্শক ভিড় জমান। চাইলে আপনিও দেখে আসতে পারেন। ছোট্ট গাছের সুন্দর বনটি। আর অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে ঘরে রাখতে পারেন পছন্দের বনসাই। যা আপনার প্রকৃতি প্রেম এবং রুচির পরিচয় দেবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।