ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আমাদের স্মৃতিসৌধ

ওয়ালিউল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১১
আমাদের স্মৃতিসৌধ

 

চলছে বিজয়ের মাস। এই বিজয়ের মাসে আপনি ঘুরে আসতে পারেন স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মরণে ণির্মিত সাভারের স্মৃতিসৌধ।

সাধারণত ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখ আমরা সবাই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্মৃতিসৌধে গিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বিজয়ে মাসে কোন একটি দিনে ঘুরে আসুন সাভারের স্মৃতিসৌধে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ ১৯৭২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রকৌশলী সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশা মোতাবেক ১৯৮২ সালের আগষ্ট মাসে স্মৃতিসৌধের কাজ শুরু হয়। মোট ১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রায় ৮৪ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই স্মৃতিসৌধটির নির্মান কাজ শেষ হয় ১৯৮৮ সালের জুন মাসে।

চারদিকে লাল ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা মাঝখানে প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকতেই সরাসরি চোখ চলে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের উঁচু মিনারের দিকে আর মনে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা। মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী অসংখ্য শহীদদের স্মরণে তৈরী বিভিন্ন স্মৃতিসৌধ ও ভাস্কর্যের মধ্যে প্রধানতম সাভারের এই জাতীয় স্মৃতিসৌধ। শুধু শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো নয় অবসর সময়ে বেড়ানোর মত জায়গাও এটি।

স্মৃতিসৌধের বৈশিষ্ট্যঃ ১৫০ ফুট বা ৪৫ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধটিতে রয়েছে ৭টি ফলক। যার মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়কে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর চুয়ান্ন, আটান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও উনসত্তরের গণ-অভ্যুথানের মাধ্যমে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

জাতীয় স্মৃতিসৌধের স্থাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হোসেন হলেও এর আশেপাশের অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর। মূল স্মৃতিসৌধের বাম পাশে রয়েছে সৌধ চত্বর। যেখানে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নাম না জানা দশজন শহীদের সমাধি। আর ডান পাশে রয়েছে একটি পুস্পবেদী। যেখানে এক সময় শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হতো। বর্তমানে স্মৃতিসৌধের সামনে অবস্থিত বেদিতে বিভিন্ন দিবসে পুষ্পস্তবক অর্পন করা হয়।

স্মৃতিসৌধের তিন দিক ঘিরে রয়েছে কৃত্রিম লেক আর তার পাশাপাশি সবুজের সমারোহ একে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। শুধু স্মৃতিসৌধ এবং এর প্রাঙ্গনের আয়তন ৮৪ একর এবং সৌধ ঘিরে আছে আরো ২৪ একর জায়গা। স্মৃতিসৌধকে পরিবেষ্টনকারী পুরো জায়গাটি সবুজ গাছপালায় পরিপূর্ণ।

বিভিন্ন সময় বাহিরের দেশ থেকে আগত রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান কিংবা নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এদেশের জাতীয় বীরদের শ্রদ্ধা জানাতে তারা জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান এবং সফরের স্মৃতিস্বরূপ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে রোপণ করেন বিভিন্ন গাছের চারা ও বইয়ে সাক্ষর করেন। পুরো স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীরের ভেতর রয়েছে প্রশস্ত ইটের পাকা রাস্তা, রাস্তার দুপাশে নানা জাতের ফুলের গাছ, কৃত্রিম জলাশয়, উন্মুক্ত মঞ্চ, আলাদা করে ফুলের বাগান, অভ্যর্থনা কেন্দ্র, হেলিপ্যাড, মসজিদ ও রেস্তোরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা গাড়ির পার্কিং এর ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এছাড়া ফলজ, বনজ ও ঔষধি গাছের সমন্বয়ে রয়েছে আলাদা বাগান। জাতীয় স্মৃতিসৌধের অপূর্ব সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময়ই সঙ্গ দেয় এর দর্শকদের।

আরও রয়েছেঃ স্মৃতিসৌধ থেকে বের হয়ে যাওয়া যেতে পারে পাশের পালপাড়া বা কুমারপাড়াতে। সেখানে গেলে দেখা যাবে কুমারদের মৃৎশিল্প তৈরীর নানা প্রক্রিয়া। স্মৃতিসৌধের ঠিক অপরপাশেই রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্তোরাঁ জয়। ঘোরাঘুরি শেষে যেখানে সেরে নেওয়া যেতে পারে বিশ্রাম আর এক ফাঁকে খাওয়া দাওয়াটাও। পর্যটন রেস্তোরাঁর পাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি মৃৎশিলের দোকান। পছন্দের মৃৎশিল্পটি পেয়ে যেতে পারে এখানে।

যেভাবে যাবেন: আগে ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে সরাসরি যাওয়ার জন্য খুব ভাল ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি চালু হয়েছে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। যা মতিঝিল-গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, গাবতলী, সাভার হয়ে স্মৃতিসৌধে যায় এবং একই রুটে হানিফ মেট্রো সার্ভিস ও নন্দন সুপার বাস চলাচল করে।   এছাড়া মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ছেড়ে আসা তিতাস পরিবহন মিরপুর ১০, মিরপুর ১, ট্যাকনিক্যাল, গাবতলী, সাভার হয়ে স্মৃতিসৌধে যায়। এসব বাস সার্ভিসের মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই ঝামেলা ছাড়া স্মৃতিসৌধে ঘুরতে যেতে পারেন।

পরিদর্শনের সময়সূচী: সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বিশেষ দিন স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ঈদ, পূজা ও ১লা বৈশাখে ব্যাপক ভিড় হয় এখানে। এখানে আরো রয়েছে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ সফরে আসা অন্যান্য দেশের রাষ্ট্র প্রধানগণের নিজ হাতে লাগানো বৃক্ষরাজি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।