ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

বাঙালিয়ানা

দিদার খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১২
বাঙালিয়ানা

চৈত্রের দাবদাহ থেকে মুক্তি পেতে চিরায়ত কাল থেকে বাঙালি স্বাগত জানিয়ে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার পরশ পেতে চায়। কতো রঙ আর রূপে রাঙানো সেই আগমনি বার্তা।

কতো না গানে গুঞ্জনে মেতে ওঠে সেই আনন্দঘন মুহূর্তটি। সকল প্রতীক্ষা আর আয়োজন সেই শুভ লগ্নটির জন্য। সবকিছুই প্রস্তুত, অপেক্ষা কখন সূর্যের কিরণ বঙ্গজননীকে নবরূপে উদ্ভাসিত করবে। বাঙালির আর যেন তর সইছে না, সবাই কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সেই নবজাগরণের গানে চারিদিক মাতিয়ে তুলবে। সব জীর্ণ-পুরাতন, দু:খ-বেদনা ভুলে গিয়ে আবার স্বপ্ন দেখবে নতুন দিনের। সব শত্রুতা ভুলে গিয়ে, কাধে কাধ মিলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বৈশাখ শত শত বছর ধরে বাঙালির জীবনে বয়ে আনে নতুনের বার্তা।

আসলে বৈশাখ কিংবা বৈশাখী ঝড় বাঙালি জাতির জীবনে এক অন্যরকম অনুপ্রেরণা। যুগে যুগে সকল সংকট মুহূর্তে বাঙালি জাতি বৈশাখকে মনে প্রাণে কামনা করে। বৈশাখী ঝড় যেমন পূর্বের সব জীর্ণতা দূর করে প্রকৃতিকে নতুন রূপে সজ্জিত করে, বাঙালি জীবনও ঠিক সেই ঝড়ের মতো সব কপটতা, অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার গ্লানি মুছে ফেলে নতুন করে বাঁচতে শেখে। আমরা  নতুনের আগমনকে স্বাগত জানিয়ে সহজেই পুরাতন দু:স্বপ্নগুলো মুছে ফেলতে পারি বলেই হয়তো জাতি হিসাবে আমরা সুখি। শত বেদনা, শত শোষণ নিপিড়ন ভুলে গিয়ে মুখে হাসি ফোটাই বৈশাখী ঝড়ের আগমনী বার্তায়।

সময়ের বিবর্তনে হয়তো অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে আমাদের সমাজ, মূল্যবোধ আরো অনেক কিছুই। বিদেশি অপসংস্কৃতির কালো ছায়ায় আমাদের ভাষা, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, আমাদের চেতনা ইত্যাদি অনেক কিছুই আজ হুমকির মুখে। শত চেষ্টা করেও কিছুতেই এই ধারার পথরোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সবাই যখন হাল ছেড়ে দিচ্ছেন, আমরা তখন আশাবাদী হয়ে উঠি যখন বৈশাখ বাঙালির জীবনকে রঙে রূপে ভরিয়ে দেয়। অন্তত এই একটি দিনের জন্য হলেও বাঙালি তার আসল বাঙালিয়ানায় ফিরে আসে, নিজেকে নতুনরূপে চিনতে পারে, নিজের সংস্কৃতি ঐতিহ্য আর গৌরবের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ওঠে। মাঠে-ঘাটে, শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই বৈশাখের নতুনের বার্তা বইতে থাকে। সবার কণ্ঠ গুন গুন করে গেয়ে ওঠে বৈশাখের আগমনী গান।

অনেকে হয়তো বলতে পারেন যতো সব আদিক্ষেতা, এক দিনের সখের বাঙালি ইত্যাদি আরো অনেক কিছু। কিন্তু একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্যই বাঙালি তার অতীত ঐতিহ্যকে কাছ থেকে জানার ও দেখার সুযোগ পায়। তাঁতের শাড়ি, পান্তা, ইলিশ, বাহারী মেলা, নগরদোলা, সাপের খেলা, বাউল গান, রমনার বটমূল; একটি দিনের জন্য হলেও ক্ষতি কি? হোক না।

বৈশাখ আছে বলেই তো হাজার বছর পরও আমরা গর্ব ভরে বলতে পারি – আমি বাঙালি। আমাদের জীবনে এটি এমন একটি দিন যা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একই সুতোয় গেথে রেখেছে। বৈশাখ আছে বলেই আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক এক শস্য-শ্যামল বাংলাদেশের।

বৈশাখের আগমনী বার্তায় নিহিত থাকে আমাদের নবজাগরণের বাণী। আমাদের মূল্যবোধকে পূণরুজ্জীবিত করার ক্ষমতা একমাত্র বৈশাখেরই আছে। আমরা তাই প্রতি বছর পহেলা বৈশাখের এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করি অধীর আগ্রহে, এবার বুঝি মুক্তি পাবো সকল অসাঢ়তার জঞ্জাল থেকে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।