ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

নীশিতা ভাবীর নিমন্ত্রণ

এমএম ওবায়দুর রহমান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৩
নীশিতা ভাবীর নিমন্ত্রণ

বিয়ে নামক অদ্ভূত সর্ম্পকটার প্রতি আমার আগ্রহ ছিলনা কোন কালেই। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবার পর তাই অন্যদের মত একটা চাকুরি জোগাড় করার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা আমার করতে হয়নি।

সকাল বিকেল গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরতে পারছি। প্রতিদিনই নিয়ম করে শাহবাগ কাটাবন বাকুশাহ মাকের্টে চক্কর দিতে পারছি।

জিন্স ফতুয়া আর টি র্শাট পরার আনন্দ থেকে নিজেকে সরাতে হয়নি। অন্য বন্ধুদের মত বউয়ের কাছে সকাল-বিকাল হাজিরা দেবার যন্ত্রণাও নেই। আহা কি আনন্দ বাধাহীন এই পথচলা। ব্যাচেলর জীবন মানেই প্রকৃত স্বাধীন জীবন।

বাবার মৃত্যুর পর বড় ভাই ধরেছে পিতার ব্যবসার হাল। সংসারে তাই আমার কোন পিছু টান নেই। এভাবেই চলছিলো গতকাল পযন্ত সব কিছু ঠিকঠাক। কিš‘ গতকাল সকাল থেকে আমার এই সাজানো জীবনে ছন্দ পতন ঘটেছে। কী ঘটেছে?

সকাল ১০টার মত বাজে। বাসা থেকে বের হচ্ছি এমন সময় সিড়িতে দেখা হল নিশীতা ভাবীর সঙ্গে। তার ঠোঁটে সেই মাথা নষ্ট করা হাসি। নীশিতা ভাবীর হাসি ছুড়ির মত বুকে বিধে গেল। ঢোক গিলে পাশ কাঁটাতে চাইলাম। কিš‘ নীশিতা সামনে এসে দাড়ালো।

-কি ভাইয়া কোথায় যাওয়া হচ্ছে?

-এই, একটু বাইরে যাচ্ছি ।

-তাতো বুঝতে পারছি, কিš‘ এতো সকাল সকাল? আমি মুচকি হাসি দিলাম। কিš‘ হাসিটা তেমন ভাল হলোনা। ভয়ংঙ্কর সুন্দরী টাইপের মেয়েদের সামনে ভাল করে হাসাটা যে এত কষ্টের, কে জানতো! নীশিতা ভাবী আমার হাতে একটা শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো, ভাইয়া একটু ধরোতো ব্যাগটা। আমি দরজার তালাটা খুলবো।

আমি ব্যাগ হাতে নিয়ে নীশিতার ফ্লাটের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। নীশিতা আমার গা ঘেসে দাড়িয়ে দরজার তালা খুলছে। ওর শরীর থেকে পারফিউমের তীব্র গন্ধ টের পাচ্ছি। মাথা ঝিমঝিম করছে। এটা কোন ব্র্যাণ্ডের পারফিউম? নাকি নীশিতার শরীর থেকে এমন সুগন্ধ বের হয় আমি ঠিক বুঝতে পারিনা। তালা খুলে ভেতরে ঢুকে হাত বাড়িয়ে নীশিতা আমার কাছ থেকে ব্যাগটা নেয়। ওর ঠোঁটে দুষ্ট হাসি দেখি।

-কি হলো ভেতরে আসো!

আমি নীশিতার দিকে তাকাই। বুঝতে পারিনা ওকি সত্যি আমাকে যেতে বলছে? নাকি ও শুধুই কথার কথা বলেছে। ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। নারী রহস্যময় হয় বলে শুনেছি, তবে সুন্দরী নারীরা যে ভয়ংঙ্কর রকম রহস্যময় একথাটা বুঝতে পারি। সিধান্তে পৌঁছাতে পারিনা। মাথার ভেতর নীশিতার শরীরের তীব্র গন্ধটা ঢুকে আছে। ওর দিকে তাকাতে ভয় করছে। কি আর্শ্চয্য কি হলো আমার! অন্যদিকে তাকিয়ে কিছুটা শীতল গলায় তাই বলি, ভাবী আপনি কখনোই কিš‘ আমাকে ভেতরে যেতে বলেন নি। এমনকি ঈদের সেমাই খেতেও বলেননি। তাই বলতে পারেন এটা আমার একটা প্রতিবাদ!

বোকার মত কথাগুলো বলে নিজেই বিব্রত হয়ে পড়ি। ধুর কি বলছি এসব! নীশিতা আমার কথা শুনে শব্দ করে হাসে। ওর হাসিতে চারপাশে যেন বিদ্যুৎ চমকে গেল। কি আর্শ্চয্য এমন সুন্দর হাসি আগে কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়লো না!

নীশিতা আমার সামনে এসে দাড়ায়। বাতাসে ওর সাম্প্যু করা চুল উড়ছে। ঠোটে রহস্যময় হাসি।

-কি খোকা বাবু, তুমি কি আমার ওপরে রেগে আছো? ঠিক আছে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকো। আমি তোমার জন্য একটা গিফট কিনেছিলাম পরসুদিন, সেটা এখন তোমাকে দেবো। দাঁড়াও আসছি।

নীশিতা ভেতরে ঢুকলো। আমি দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলাম। নীশিতার হঠাৎ গায়ে পড়া কথা-বার্তায় আমি বেশ বিব্রত!

কাটাবনের ফুটপাত দিয়ে হাটতেছিলাম। খাচায় বন্দি বিদেশি কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দে একটা দোকানের সামনে দাড়ালাম। কুকুরটাকে শেয়ালের মত লাগছে। ঘন লোম, লম্বা লেজ আর চোখে মুখে তীব্র বিরক্তি নিয়ে কুকুরটা দোকানিকে ঘেউঘেউ করে যেন বলছে আমাকে ছেড়ে দে শয়তান!

ঢাকার আকাশে কাক ছাড়া আর কোন পাখি নেই। তবে কাটাবনে দোকানিদের খাচায় রঙ্গিন পাখি দেখা যায়। তারা কি সব পাখি ধরে খাচায় বন্দি করে রাখছে? এত সুন্দর পাখি গুলো ধরে খাচায় বন্দি করে রাখা কি ঠিক হচ্ছে? খরগোস বানর সহ অনেক প্রাণীকেই দেখলাম খাচায় বন্দি অবস্থায় অসহায় চোখে বাইরে তাকিয়ে আছে।

তবে আশংঙ্কা করছি হয়ত তারা কিছুদিন পর বেওয়ারিশ কুকুরও ধরে খাঁচায় বন্দি করে বিক্রি শুরু করবে!

কুকুরটাকে যেই খাচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে আয়তনে তা খুব ছোট। ঠিক মত দাড়াতে পারছে না বেচারা। কুকুরটার অসহায় চোখে আমার চোখ পড়লো। আমার পকেটে মাত্র সত্তর টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে কুকুর কেন একটা ছোট পাখি কেনাও সম্ভব নয়। প্রতিজ্ঞা করলাম কোন বিশেষ শুভদিন যদি আমার জীবনে আসে তবে সেদিন অন্তত একটা কুকুরকে আমি খাঁচার বাইরে বের করে মুক্তি দিবো।

সজিব কে ফোন দিলাম কয়েক বার। ফোন বন্ধ। বোধ হয় ওর মোবাইলে চার্জ নেই। ফোনে কোন এক তরুণীর সঙ্গে যেন ওর প্রনয় হয়েছে। সেই ফোনকন্যার সাথে রাতভর গল্প করে সজিব। সারা রাত জেগে কথা বললে মোবাইলে র্চাজ থাকবে কেমনে?

চাদে ঘুরে আসার একটা বিজ্ঞাপন ওয়ালা ফোন সেটটা ওর কেনা দরকার বলে মনে হচ্ছে। সবুজ আমার দুইব্যাচ জুনিয়র। বেচারা ভাল কবিতা লিখে। তবে আজ পযন্ত কোন পত্রিকাই সেই কবিতা ছাপাতে রাজি হয়নি! তবে সম্প্রতি বাংলা ব্লগে সবুজ কবিতা শেয়ার করছে। কিš‘ ওর কবিতা ভুগছে তীব্র পাঠক সংকটে। সম্প্রতি আমার এক বন্ধু প্রকাশক হয়েছে। সজিবের ধারণা আমি রিকোয়েষ্ট করলে নাকি দেব-জ্যোতি ওর কবিতার বইটি প্রকাশ করবে।

কিš‘ আমি ভাল করেই জানি। প্রকাশকরা খোঁজে রসময় গুপ্ত টাইপের লেখকদের। যাদের লেখা বিক্রি করে কাঁচা পয়সার মুখ দেখা যাবে। তবে সবুজকে এসব বলে লাভ নেই, ও যখন আমার পেছনে ঘুরে আনন্দ পাচ্ছে তাহলে পেতে থাকুক। তাছাড়া কবি সাহিত্যিকরা একটু পাগলা টাইপের হয়। তাদের ঘাটতে নেই।

ফ্লাস্কে করে যা বিক্রি করছে মধ্যে বয়স্ক এক লোক। আমার সামনে দাড়িয়ে মিনমিনে গলায় বলে, মামা চা খাইবেন নাকি?

আমি চা সিগরেট খাইনা। কিš‘ লোকটার চোখের ভেতর তাকিয়ে কেমন মায়া হল। কুকুর অবমুক্ত করতে না পারা দুঃখ ভুলতেই যেন আমি চায়ের অর্ডার দিলাম। সাথে একটা বিস্কিটও নিলাম। চায়ে একটা চুমুক দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন বেজে উঠল। ভাল করে না দেখেই সবুজ ভেবে রিসিভ করে গাল দিলাম।

-কি অসভ্যরে তুমি! এত বাজে ভাষায় কেউ কাউরে বকা দেয়?

-কে আপনি?

-আমি যে নীশিতা সেটা তুমি ভাল করেই জানো। ঢং করছো কেন?

-আসসালামু আলাইকুম। ভাবী আপনি ভাল আছেন?

-ছিলাম, কিš‘ তোমার বকা খাবার পর ভাল নেই।

-আপনি আমার মোবাইল নাম্বার কোথায় পেলেন?

-কোথায় পাব মানে! তোমার নাম্বার আমার কাছেতো বহুদিন আগে থেকেই আছে।

-তাই নাকি! তাহলে কোনদিন ফোন দিলেন না যে?

-তুমি এখন কি করছো?

-ফুটপাতে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছি।

-ছিঃ ওসব চা খেতে নেই। ঐ চায়ে জীবাণু থাকে। সকালে ওভাবে পালিয়ে গেলে কেন?

নীশিতা ভাবীর কণ্ঠে অনুযোগ। বিশাল লম্বা আর্ফিকান টাইপের ভদ্রলোক এর লাল চোখের দিকে তাকালে কেমন ভয় লাগে। ভেবে অবাক হই এই লোকটাকে কেমনে পছন্দ করলো নীশিতা ভাবি? অবশ্য বিয়ের ক্ষেত্রে সুন্দরী মেয়েরা বেশিরভাগ সময়েই ঠকে।

-কি কথা বলতে ইচ্ছে করছে না?

-হ্যা ভাবি বলেন, তারপর?

-আমি যে তোমার চেয়ে বয়সে ছোট এটা জানো?

-না,এখুনি জানলাম।

-কেন তোমার কি ধারণা, আমি বুড়িয়ে গেছি?

-সত্যি বলতে কি কোন মেয়ের ব্যাপারেই আমার ধারণা নেই।

-আজ বুঝলাম, কেন তোমার কোন মেয়ে বন্ধু নেই,আর কেনইবা তোমার কেন তোমার কোন গতি হ”েছনা?

-কেন হচ্ছে না?

-তুমি খুব বেশি অহংঙ্কারী, সুন্দরীদের অর্নার করতে শিখোনি!

-মানে কি?

-মানে হল সব সুন্দরী মেয়েরা চায় তাকে সবাই সমীহ করুক। তার দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকুক। প্রসংশা করুক।

-ও আ”ছা! দীর্ঘশ্বাসের সাথে উ”চারণ করি।

-কি আমার কথা তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না?

-এসব কথা বিশ্বাস না করলেও আপনার তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে হয়না। তবে অস্বিকার করার উপায় নেই যে আপনি সুন্দরী। আপনার দিকে তাকিয়ে থেকে হাটতে গিয়ে আমার বন্ধু রহমান একদিন ড্রেনে পড়ে গিয়েছিল। হাঃ হাঃ আমি হাসতে থাকি।

আমার হাসি শুনে বেশ গম্ভীর হয়ে যায় নীশিতা। ওকি রাগ করলো? কি জানি! সিরিয়াস কণ্ঠে নীশিতা বলে, সৌরভ তুমি কি আগামী কাল সন্ধ্যায় আমার ফ্লাটে একটু আসতে পারবে?

-সন্ধ্যায়?

-হুম। তোমার ভাইয়া তখন বাসায় থাকবে না। কি আসবা না? নীশিতার কণ্ঠের আন্তরিক আহব্বান আমার শরীরের ভেতর আচমকা বিদুৎ তরঙ্গ বয়ে যায়। বলে কি মেয়েটা! ভুল শুনছি নাতো?

-কি আসবা না?

-ভাবী বুঝতে পারছিনা, কি এমন দরকার হল আপনার?

নীশিতা হাসে। ফোনের স্পিকার ভেদ করে সেই হাসি যেন আমার শরীরের প্রতিটি রক্ত কনায় শিহরন তোলে। হাসি চেপে নীশিতা বলে তুমি বোঝনাই কেন তোমারে ফাঁকা ফ্লাটে ডাকছি!

নাহ! এরপর আর কোন প্রশ্ন করা চলে না। আমার কেমন যেন গলা শুকিয়ে আসছে। শরীরটা অবশ হয়ে আসতে চা”েছ। শরীরের ভেতর কেমন যেন করছে। অস্থির অস্থির লাগছে। সুন্দরী মেয়েরা কাউকে ফ্লাটে ডাকলে এমন লাগে, আমার অভিজ্ঞতা ছিলনা।

সবুজ এসে হাসি মুখে আমার সামনে দাড়িয়ে বললো,ভাই কিছু মনে কইরেন না, রাস্তায় প্রচ- জ্যাম ছিল। তাই আসতে দেরি হলো। আমি ওর দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে প্রশ্ন করি, তোমার বাসা যেন কোথায়?

শাহবাগ।

শাহবাগ থেকে কাটাবন তুমি কোন বাসে এসেছো?

ও মাথা চুলকায়। জবাব খুজে পায়না। জ্যাম নিয়ে এমন মিথ্যা অজুহাত সবাই দিয়ে যা”েছ। বলা যায় এটা জ্যামের উপকারী দিক। তবে অন্য সময় এরকম মিথ্যে কথা শুনলে খুব মেজাজ খারাপ হতো। এখন হলো না।

সুন্দরী মেয়েরা ফ্লাটে ডাকলে বোধকরি সহজে কারো মেজাজ খারাপ হয়না। এমনকি এক মুরব্বী আংঙ্কেল আমার পায়ের উপর পানের পিক ছুড়ে দেওয়ার পরও আমি হাসি মুখে তার দিকে তাকালাম! হায় আল্লাহ আমার কি হলো?

রাস্তার পাশের একটি দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম। দোকানের নাম লাল নীল ফ্যাশন হাউজ। ফাউল সব জামা কাপড় ঝুলিয়ে রাখছে। কি মনে করে আমি সেখান থেকে একটি টিশার্ট কিনে ফেললাম ৩৫০টাকা দিয়ে। টাকাটা অবশ্য ধার হিসেবে দিলো সবুজ। অন্য সময় হলে মনটা খচখচ করতো। কেননা গুলিস্তানে এই টাইপের টিশার্টের দাম বড় জোড় ৬০টাকা!

নীশিতাকে ভাবছি।

গত দুই বছর আমরা একই ভবনের পাশাপাশি ফ্লাটে আছি। খুবই স্মাট একটি মেয়ে সে। তার চলাফেরা আচার ব্যাবহার দেখে মনেই হয়না সে বিবাহিত। সব সময় হাসি খুশি ভাবে থাকে। আমার বড় ভাইয়ের বউয়ের সাথে তার খুব ভাব। প্রায়ই তারা একত্রে শপিং করতে বের হয়। ভাল কিছু রান্না হলে আমাদের বাসায় শেয়ার করে। আমার ভাবির রুমে প্রায়ই বিকেলে নীশিতা আড্ডা দেয়। তবে আমি কখনোই নীশিতা ভাবীর দিকে তেমন আগ্রহ দেখাইনি। এখন তাই হালকা অনুশোচনাও হ”েছ। শত হলেও প্রতিবেশি!

আমি এখন বসে আছি সংসদ ভবনের সামনের মাঠে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সূর্য তার ডিউটি শেষ করে বাসায় ফিরবে। লাল আলোয় ভরে গেছে চারপাশ। আমি এখনও ঠিক জানিনা সন্ধ্যায় নীশিতার বাসায় যাব কিনা?

সংসদ ভবনের মাঠে এসেছি সিদ্ধান্ত নিতে। দেশের ভাগ্য নিয়ে নানান কঠিন সদ্ধান্ত গুলিতো এখান থেকেই যায়। আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনীধিরা এখানে বসেই নানান সিধান্ত নিয়ে জনগণের ভাগ্য নির্ধারন করেন। যদিও সম্প্রতিকালে তারা সংসদের চেয়ে মুখে পাউডার মেখে টিভির টকশোতে বসে এক অন্যর চোখ তুলে নেবার চেষ্টা করতেই বেশি মজা পাচ্ছেন।

শেষ পযন্ত আমি সিধান্ত নিলাম নীশিতা ভাবির ফ্লাটে আমি যাব। আমার গায়ে নতুন টিশার্ট। সামনে একটি র্ফামেসী দেখে থমকে দাড়ালাম। দোকানি মুরব্বী টাইপের আংঙ্কেল। নাহ অস্বস্তিকর!

নীশিতার দরজার সামনে যখন দাড়ালাম আমার কেমন যেন লাগতে থাকলো। মনে হল হাত পাগুলো আর আমার নেই। বুকের ভেতর ড্রাম পেটানোর শব্দ হচ্ছে। নিজের অধঃপতন দেখে লজ্জায় কুকড়ে যা”িছলাম। তারপরও কলিং বেলে চাপ দিলাম। আমার হাত কাঁপছে। উত্তেজনায় শরীরের রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছে। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যা”েছ। ওপাশে কোনো শব্দ নেই। তবে কি নীশিতা আমার সাথে ফান করেছে! দরজা কেন খুলছে না?

নাকি ওর হাজবে- বাসায়? এসব ভাবতে ছিলাম। হঠাৎ দরজা খুলে গেল। ভয়ে ছিলাম কে আবার দরজা খুলে, কিš‘ নীশিতাকে দরজা খুলতে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। ওর সেই হাসিটা আমার বুকের ভেতর শিরশির করে ঢুকে পড়লো। নীশিতা বললো, কি খোকা আজ আবার দৌঁড়ে পালাবে নাতো? তার আগে বলো তোমাকে এমন চোরের মত লাগছে কেন?

বিস্মিত হয়ে গেলাম। আমাকে চোরের মত লাগে! সব দোষ টিশার্টের, কেন যে এটা পড়ে আসতে গেলাম? আমি নীশিতার ডোয়িং রুমে ঢুকে পড়লাম। নীশিতা দরজা বন্ধ করে দিলো। সোফায় বসলাম। মুখোমুখি দুইজন।

-কি খাবে বলো?

-আপনার যা ইচ্ছে, দেন। আমার সম্যসা নেই।

ও ভুরু নাচিয়ে বলে, আমার যা ই”েছ তুমি তাই খাইবা? তাহলে আমার ই”েছ তোমাকে তেলাপোকা খাওয়াবো!

নীশিতা শব্দ করে হাসে। ওর হাসিটা যদিও অনেক সুন্দর কিš‘ আমার কেমন অস্বস্তি লাগে। মনে হ”েছ সত্যি ফ্লাটটি ফাকাঁ। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলাম ঘরটা সুন্দর  গোছানো। দেখেই বোঝা যায় রুচিশীল কারো হাতের ছোয়া লেগে আছে সবর্ত্র। গৃহিনী হিসেবে নীশিতা যে চমৎকার তা বুঝলাম দেয়ালে টানানো সুন্দর একটি শিল্প কর্ম দেখে। পেইন্টিংটা খুব ভাল লাগলো আমার।

-কি হলো কথা বলছো না কেন?

-কি বলবো? এমন সুন্দরীদের সামনে কথা খুজে পাওয়া খুব ঝামেলার! যা বলবো তাতেই ঠকে যাবো। আপনি বিদ্রুপ করবেন।

-আমি কি সুন্দরী?

-ভয়াবহ সুন্দরী। আপনাকে দেখলে আমার কথা হারিয়ে যায়।

-তাই!

-হুম, আপনার দেয়ালে ছবিটাতো ভারী সুন্দর। দেখে ভালো লাগছে।

নীশিতা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে, আমার বেড রুমে এরচে ভাল একটা প্রেইণ্টিং আছে তুমি দেখবা?

আমি মাথা দুলিয়ে বলি,দেখবো।

আগে তাহলে চা খেয়ে নাও। আমি চা নিয়ে আসছি।

নীশিতা উঠে দাড়ায়। ডিভিটি প্লেয়ার অন করে ও। সামিনা চৌধুরী গাইছে।

পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে, পাগল আমার মন জেগে উঠে।

চেনাশোনার কোন বাইরে..

যেখানে পথ নাই নাইরে.. ..

সেখানে অকারনে যাই ছুটে..।

আহা কি অপূর্ব! রবীন্দ্র নাথ আসলেই বড় মাপের রোমাণ্টিক ছিলেন। নীশিতার বেডরুমে গেলাম টানা পনেরো মিনিট পরে।

বেড রুমে পা দিয়েই আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। মুখ দিয়ে বেড়িয়ে গেল কি আশ্চর্য উনি কে? ভূত নয়তো!

নীশিতা হাসি মুখে খুব স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে, ছিঃ ভূত হবে কেন? ও আমার ছোট বোন শায়মা। তবে ওর আর আমার চেহায় খুব বেশি মিল। অনেকেই জমজ ভাবে। তবে ও আমার আড়াই বছরের ছোট। ফরিদপুর মেডিক্যালে পড়ছে। ফাইনাল ইয়ার। কদিন পরেই ডাক্তার হয়ে বেরুবে।

আমি বিস্ময় কাটিয়ে বলি, ও!

এরপর কি বলবো খুজতে থাকি। নীশিতা বলে, তোমার ভাবি ওরে ভীষণ পছন্দ করেছে। সে বললো তোমাকে দেখাইতে।

আমি কিংকতর্ববিমূঢ় হয়ে দাড়িয়ে আছি। শায়মা বলে কি হলো বসছেন না কেন? বসে পড়–ন। কিছুটা আদেশের স্বরেই কথাটা আমাকে বলে শায়মা। আমি বোকার মত শায়মার পাশের চেয়ারে বসে পড়লাম। সত্যি বলতে নিজের প্রতি কোন কণ্টোল আমার যেন নেই।

শায়মা বলে, আপু সৌরভকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। তোমার জামাই এর মত তাল গাছ নয়। আমি অন্য দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাবি আপনিতো জানেন আমি বেকার মানুষ। কামাই রোজগার নাই! বিয়ে করে কি খাওয়াবো?

আমার এমন অসহয় কণ্ঠ শুনে চারপাশে হাসির রোল পড়ে যায়।

চারপাশের অট্রহাসিতে ঢাকা পড়ে আমার গো বেচারাটাইপের কণ্ঠ!

তাকিয়ে দেখি আলমারির পেছন থেকে বেড়িয়ে আসছে আমার ভাবি।

আমাকে নিয়ে যে ষড়যন্ত্র হয়েছে তা বুঝতে পারি।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।