ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

একা মানুষের গল্প

হাসান শাহরিয়ার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৩
একা মানুষের গল্প

দিগন্ত ছোঁয়া সরিষা ক্ষেত। এলোমেলো রাস্তা।

বয়েসী বটের সারি। বিস্তীর্ণ ও নিস্তরঙ্গ পুকুর পাড়ে দুজন মানুষ। নির্বাক। ছেলেটি আনমনে চেয়ে আছে দুরে। সুখ স্বপ্নরা ক্রমশঃই যে মিলিয়ে যাচ্ছে দুর দিগন্তে। অজান্তেই তার চোখ থেকে একফোঁটা বেদনা ঝরে পড়ল।

আমি চেষ্টা করব। নিরবতা ভাঙল মেয়েটি কান্না জড়ানো কন্ঠে।

হাতে হাত রেখে পাশাপাশি হাঁটছে দুজন।

আচ্ছা, তোমাকে ছেড়ে যদি আমাকে অন্যকোথাও যেতে হয়,আর কখনো দেখা না হয়, তোমার কি কষ্ট হবে? মেয়েটি জানতে চায়।

না, একদমই না। আমিতো মরে যাব। মৃত মানুষের কি কষ্ট থাকে?

প্লিজ, এভাবে বলোনা। আমার যদি অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আসবেনা তুমি?

অবশ্যই আসব। বর না আসলে বিয়েটা হবে কীভাবে শুনি? ছেলেটির স্মার্ট উত্তর।

মেয়েটা আর কথা বলেনা। হাত ছাড়িয়ে নেয়। চোখের পানি মুছতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সে। এখন যাই বলে হাটতে থাকে। মেয়েটির যাবার পথ চেয়ে ছেলেটির হৃদয় কি একটু কেঁপে ওঠে?

মেয়েটির মনে সুনামি বয়ে যাচ্ছে কদিন ধরে। এ ক`দিনে তার জগৎটা অনেকখানি বদলে গেছে। বদলে গেছে আশপাশের মানুষ। প্রিয় ঘরটা, সরিষাক্ষেত, সব। অনেক কষ্ট বুকে লুকিয়ে রেখে সে ভুলে যেতে চায় সবকিছু। সব ছেড়ে অনেক দূরে চলে যেতে চায় সে। প্রিয় ঘরটার জানালা খুলে থালার মত লাল সূর্যের হারিয়ে যাওয়া দেখে সে। আচ্ছা, প্রিয়জন হারিয়ে গেলে কি কখনও সূর্যের মত আবার ফিরে আসে। ভালবাসা কেন এত কষ্টের?

ক্ষীণ কন্ঠে দুঃখ ছড়িয়ে কম্পিউটারের স্পিকার থেকে ভেসে আসছে . .

সখি ভালবাসা কারে কয় . . . .

সে কি কেবলই যাতনাময়. . .আচ্ছা, কবিগুরু কি জানতেন ভালবাসা কতটা যাতনাময়।

নির্জন সাগর পাড়ে বসে বিষন্ন ও উদাস হয়ে যায় সে। বন্ধুদের মাঝে থেকেও নিজেকে বড় একা আর অসহায় মনে হচ্ছে। তার ভালবাসার পাখি ডানা হারিয়ে ধুকছে মৃত্যুযন্ত্রণায়। ভালবাসার ফুটতে চাওয়া কলিগুলো পাপড়ি মেলেনি পরিবেশের প্রতিকুলতায়, নিষ্ঠুর বাস্তবতায়। কাকে দুষবে সে? এ যে তার নিয়তি। কোনো এক বিচিত্র কারণে মানুষ প্রথম প্রেম, প্রথম ভাললাগা ভুলতে পারেনা অথবা বলা যায় ভুলতে চায়না। মনের গহীন গোপনে লালন করে যায় সযতনে।

ভাবতে ভাবতেই তার চোখের কোণ আর্দ্র হয়ে ওঠে।

তার মত দূঃখী মেয়েদের অশ্রুজলেই কি সাগরজল এমন নোনা? নাকি অসীম আকাশের সাথে মিলতে না পারার কষ্ট নিয়ে বুকে ধারণ করে আছে একরাশ দুঃখ অশ্রু। বিশাল সাগর আর অসীম আকাশের মাঝে নিজেকে অতি তুচ্ছ মনে হয় তার। অসীমের মাঝে নিজেকে সমর্পণ করে প্রকৃতির জন্য এক অদ্ভূত টান অনুভব করে সে। চিকচিক বালুকণা, ঝিনুক, ঝাউগাছ, তুচ্ছ প্রবাল এসবের জন্য অদ্ভূত এক ভালবাসা সৃষ্টি হয় মনের মাঝে। মানুষ থেকে প্রকৃতিতে ভালবাসা ট্রান্সফার করে সে এখন অনেক হালকা বোধ করছে।

সৈকত, বালুকণা, ঝাউগাছ, সাগরের প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করছে সে এখন। আঙুলকে কলম বানিয়ে চারপাশের প্রকৃতিকে সাক্ষি রেখে মেয়েটি বালুকাবেলায় লিখে দিতে চাইল "ভালবাসি সাগর, তোমায়। " কিন্তু কি আশ্চর্য! "সাগর" শব্দটা লিখতে গিয়ে বারবার কেবলই "তার" নাম লেখা হয়ে যাচ্ছিল। মেয়েটি আবার নিজের মনকে শক্ত করতে চেষ্টা করে। তাকে যে ভুলতেই হবে।

আলতো করে সে নামটি মুছে দিল, সযত্নে। সাগর সৈকতে ভালবাসা ফেলে রেখে পিছু ফিরে চলল আপন ঠিকানায়। সাগরেরও বুঝি পছন্দ হলোনা "শুণ্যস্থান রাখা অপূর্ণ ভালবাসা"। হঠাৎ বেয়াড়া এক ঢেউ এসে মুছে যাওয়া নামের সাথে "ভালবাসা"ও ভাসিয়ে নিয়ে গেল অজানা ঠিকানায়। তার ভালবাসা যে মুছে যাওয়া নামটি ছাড়া বেমানান, অর্থহীন আর অপূর্ণ।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।