ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

আমরাই পারি

শারমীনা ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০১৩
আমরাই পারি

দারিদ্র, ক্ষুধা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, দেশ নিয়ে বলতে গেলে কেমন যেন সবই নেতিবাচক কথা চলে আসে। কিন্তু এতো কিছুর পরও আমরা স্বপ্ন দেখতে পারি।

কারণ আজ এমন কিছু তরুণদের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব, যারা শুধু নিজের আর পরিবার নয় পুরো দেশকে আলোকিত করার স্বপ্নে বিভোর। আর তারা স্বপ্ন দেখেই বসে নেই। স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে গেছেন বহুদূর।

অদ্যম সেই স্বপ্নের নাম, এডুকেশন ফর অল(সবার জন্য শিক্ষা)। নূর খান, সাইফুর রহমান, এনায়েত হোসেন রাজিব এই অনুকরণীয় তরুণ উদ্যোক্তা। (সাইফুর রহমান কাজ করছেন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এরিকসনে। নূর খান রাইট-ব্রেইন সলিউশন, সফটওয়ার ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার। এনায়েত হোসেন রাজিব সিইও, দি ওয়েব ল্যাব। )

প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পরে কিছু মেধাবী ছাত্র ছাত্রীর খবর ছাপা হয় বিভিন্ন মিডিয়ায়। যেখানে দেখা যায় খুব দরিদ্র পরিবারের হয়েও তারা সবচেয়ে ভালো ফলাফল করছে।

এই খবরগুলো থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সেসব মেধাবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এডুকেশন ফর অল। আর্থিক অবস্থা এবং ফলাফল বিবেচনা করে ঢাকায় এনে সবার সঙ্গে কথা বলে নির্বাচন করা হয় ৩৮ জন মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। তাদের পড়ার খরচ চালাচ্ছেন এই তিন বন্ধু।

শুরুর গল্প:

মেধাবী এই মুখগুলোর জীবনে শিক্ষার আলো যেন থেমে না যায় তার স্বপ্ন দ্রোষ্টা সাইফুর ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছেন তার সৎ সরকারি চাকরিজীবী বাবা যেখানে ছেলে মেয়ের পড়াশোনা আর সংসারের খরচ চালাতে হিমশিম খেতেন তার মধ্যেও তিনি চেষ্টা করতেন গরীব ছাত্রদের খরচ দিতে। তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে বাবা ছেলে মিলে দায়িত্ব নেন একটি ছেলের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার। তাদের শিক্ষিত মানুষ গড়ার সেই ছোট্ট প্রয়াস দেখে সাইফুরের দুই বন্ধু বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। স্বপ্নের সঙ্গে বাড়তে থাকে কাজের পরিধি। আজ তিন বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন এডুকেশন ফর অল(সবার জন্য শিক্ষা)। আর আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন প্রায় ৪০ জন ছাত্রের জীবনে।  

সুবিধা:

এইচএসসি প্রথম বর্ষ বই, ভর্তি, দ্বিতীয় বর্ষ: বই, ভর্তি, পরীক্ষার ফি, ৩০ মাসের বেতন।

৫ মাস ঢাকায় থাকা খাওয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তী কোচিং-এর যাবতীয় খরচ।

এছাড়াও যেকোনো ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরম পূরণ, পরীক্ষা দেয়ার যাতায়াত খরচ।

২০১২ সালে প্রতিটি ছাত্রের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬৯ হাজার টাকা। তবে সবদিক বিবেচনা করে তারা ছাত্রদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য বাজেট বাড়িয়ে ২০১৩ সালে ৮১ হাজার টাকা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

education for all

সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা: ঢাকার বাইরের হতে হবে। রেজাল্ট- এ+,

শর্ত: কোনো ধরনের নেশা করা যাবে না।
পড়াশোনার একটা পর্যায়ে না গিয়ে বিয়ে করতে পারবে না।
রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা থাকতে পারবে না।
অন্য কোনো সংস্থা থেকে আর্থিক সহযোগিতা নেওয়া যাবে না।

রাজিবরা শুধু টাকা পাঠিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেন না। তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে। এসব ছাত্রদের পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধ তৈরি এবং যে কোনো সমস্যায় পরিবারের একজনের মতোই মানসিক সহযোগিতাও দিয়ে থাকেন তারা।

নিজেদের চেষ্টা, অর্থ, সময় এবং বন্ধু, আত্মীয় আর কিছু শুভাকাঙ্ক্ষির আন্তরিক সহযোগিতায় চলছে এই মহৎ উদ্যোগ।  

এডুকেশন ফর অল-এর সুবিধাভোগী নিলফামারী জেলার সৈয়দপুরে সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়ের ছাত্রী-সুমি আক্তার লাবনী। বাবা বাবলু হোসেন রিক্সা চালাতেন বর্তমানে অসুস্থতার কারণে রিক্সা চালাতে পারেন না। তার মা আম্বিয়া খাতুন পিঠা বিক্রি করে মেয়ের পড়ার খরচ, সংসার এবং অসুস্থ স্বামীর চিকিৎসার ব্যয় বহন করেন।  

দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও হার মানেনি সুমি। এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন পাঁচ পেয়েছেন। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চান তিনি। বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলার সময় সুমি বার বার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিল এডুকেশন ফর অল-এর উদ্যোক্তাদের। এই সাহায্য ছাড়া পড়া চালিয়ে নেওয়াই কষ্টকর ছিল। যে কোনো সমস্যায় তাদের কাছ থেকে নিজের বড় ভাইয়ের মতোই পরামর্শ পান বলেও উল্লেখ করেন সুমি।

সুমিরও একদিন স্বচ্ছলতা আসবে। তবে সে আজকের অভাবের কথা কখনো ভুলেতে চান না। বরং এই অনুভূতি থেকেই দরিদ্র ছাত্রদের পাশে থাকতে চান তিনি।

সিরাগঞ্জের উল্লাপাড়ার ছাত্র ওমর ফারুক । বাবার সঙ্গে চা বিক্রি করে পড়ার এবং সংসারের খরচ চালায় সে। তার পরেও এসএসসির রেজাল্ট এ+। এমনই গল্প এডুকেশন ফর অল-এর সুবিধা পাওয়া প্রতিটি ছাত্র-ছাত্রীর।  

সংস্থাটির অন্যতম উদ্যোক্তা সাইফুর রহমান বিশ্বাস করেন একদিন এই সাহায্য পাওয়া ছাত্ররাই অন্যদের সাহায্য করার মতো যোগ্য হয়ে গড়ে উঠবে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের সামান্য সামর্থ দিয়ে পুরো দেশের মেধাবীদের জন্য উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করা সম্ভব নয়। তবে সমাজের শিক্ষিত সচেতন স্বচ্ছল প্রতিটি ব্যক্তি যদি নিজের জায়গা থেকে অন্তত একটি শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব নেন তাহলে দেশে কোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর টাকার অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হবে না।

আপনার জানা বিভিন্ন সফলতার গল্প আমাদের জানান। আর এই মহৎ উদ্যোগে আপনিও বাড়িয়ে দিতে পারেন সহযোগিতার হাত। যোগাযোগ করতে পারেন lifestyle.bn24@gmail.com, বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন: http://www.educationforallbd.com/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।