ঢাকা: বিরিয়ানি এমন একটির খাবার যার সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। সুগন্ধময় ও সুস্বাদু এ খাবারটি ভারতীয় উপমহাদেশে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
উত্তর ভারতের বিরিয়ানি রান্নার পদ্ধতি দক্ষিণাঞ্চলের রাষ্ট্রগুলোর চেয়ে ব্যতিক্রম। যেহেতু উত্তর ভারতীয়রা অধিকাংশই নিরামিষভোজী তাই তারা ভেজিটেবল বিরিয়ানির বিভিন্ন রেসিপি উদ্ভাবন করেছে। ভেজিটেবল বিরিয়ানি যা তেহরি বলে পরিচিত, তা উত্তর ভারতের বাসাবাড়িতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রান্না হয়।
ভারতের সব অংশের তুলনায় দক্ষিণে বিরিয়ানির বিভিন্নতা বা রকম অনেক বেশি। শুধু হায়দ্রাবাদেই তৈরি হয় ৪০ পদের আলাদা ধরনের বিরিয়ানি। তামিলনাড়ুর রন্ধনশিল্পেও সম্ভ্রান্ত স্থান দখল করে রয়েছে বিরিয়ানি। দক্ষিণের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ বিরিয়ানিগুলোর মধ্যে রয়েছে হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, কোর্গি মাটন বিরিয়ানি, ভাটখালি বিরিয়ানি ও ম্যাঙ্গালোরিয়ান ফিশ বিরিয়ানি।
ভারতের পশ্চিমাংশের অন্যতম জনপ্রিয় বিরিয়ানি হচ্ছে কেওড়া দিয়ে সাজানো মাংস, চাল ও মসলার সংমিশ্রণে তৈরি বোম্বে বিরিয়ানি। খোজাস ও বোরিস মুসলিম সম্প্রদায় বিরিয়ানি রান্নার ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছে। পশ্চিম ভারতে গেলে একবার হলেও সিন্ধি বিরিয়ানি, গুজরাটি বিরিয়ানি ও মেমোনি বিরিয়ানি চেখে দেখতেই হবে। আওরঙ্গবাদ হচ্ছে এমন একটি স্থান যেখানে মহারাষ্ট্রের স্টাইলে মুঘলাই বিরিয়ানি রান্না হয়।
ভারতের পূর্বাঞ্চলে বেঙ্গলে বিরিয়ানি বেশি রান্না হয়। সেখানে চাল, মাংস, মাছ, প্রন ও বিভিন্ন মসলার সংমিশ্রণে সুস্বাদু বিরিয়ানি রান্না হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রসিদ্ধ বিরিয়ানির মধ্যে অসমিয়া কামপুরি বিরিয়ানি উল্লেখযোগ্য।
পারফেক্ট বিরিয়ানি রান্না
পারফেক্ট বিরিয়ানি বলতে নিখুঁতভাবে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিমাপ ও রান্নার পদ্ধতিকে বোঝায়।
রান্নার স্টাইল
বিরিয়ানিতে চাল ও মাংস আলাদাভাবে রান্না করা হয়। সবশেষে হাঁড়িতে চাল ও মাংস পরতের পর পরত সাজিয়ে রান্না হয়। বিরিয়ানি রান্নার প্রসিদ্ধ কৌশলগুলোর একটি হচ্ছে দম প্রণালী। এতে অ্যারোমা অটুট রাখতে পাত্র ঢেকে অল্প আঁচে রান্না করা হয়।
প্রথাগতভাবে বিরিয়ানিকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।
• পাক্কি- রান্না করা মাংস অর্ধেক রান্না করা চালের সঙ্গে মিশিয়ে পুরোপুরি তৈরি করা।
• কাচ্চি- এ পদ্ধতিতে খাসির মাংস টকদই ও মসলা দিয়ে মেরিনেট করে চালের সঙ্গে একইসাথে রান্না করা হয়।
তবে কাচ্চি বিরিয়ানি রান্না করতে অনেক বেশি সময় নেয়। মাংস নরম করতে মেরিনেট করার সময় কাঁচা পেঁপে ব্যবহার করা যেতে পারে।
চাল
বিরিয়ানি রান্নায় পারফেক্ট চাল বাছাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বাসমতি, জিরা, সাম্বা, গোল্ডেন সেলা, কাইমা, জিরাকাশালা ও কালা ভাত ইত্যাদি বিরিয়ানির জন্য আদর্শ। দক্ষিণ ভারতে বিরিয়ানি রান্নায় স্থানীয় কয়েক প্রকার চাল ব্যবহার করা হয় যা স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধে সতন্ত্র।
টিপস: চাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। রান্নার সময় চালে কয়েক ফোঁটা তেল দিন, এতে চাল লেগে যাবে না। সাদাভাব অানতে লেবুর রস ও ভিনেগার ব্যবহার করুন।
মাংস ও ভেজিটেবল
ফ্রেশ ভেজিটেবল ও মাংস আলাদভাবে রান্না করতে হবে। মাছ, প্রন ও ভেজিটেবল মুরগি বা মাংসের চেয়ে দ্রততম সময়ে রান্না হয়। রান্নায় সময় কত লাগবে তা অনেকটা নির্ভর করে কী কী উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে তার ওপর। চাল চুলায় দেওয়ার আগেই নিশ্চিত করতে হবে বিরিয়ানির জন্য মাংস ভালোভাবে মেরিনেট করা হয়েছে কিনা।
উপকরণ ও মসলা
বিরিয়ানিতে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি মসলা ব্যবহার করা হয়। অঞ্চলভেদে বিরিয়ানি মসলার পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ বিরিয়ানিতে নারকেলের দুধ, ক্রিম, টকদই, বাটারমিলের ব্যবহার রয়েছে। কেরালাতে চালের সঙ্গে স্টার মৌরি দেওয়া হয় আরও রয়েছে খাডা মাসালার ব্যবহার।
সুগন্ধের জন্য
পারফেক্ট বিরিয়ানির অন্যতম বৈশিষ্ট্য সুগন্ধ। সুগন্ধের জন্য ব্যবহৃত হয় জেসমিন, গোলাপজল, কেওড়া, জাফরান স্ক্রু-পাইন ইত্যাদি।
বিরিয়ানি নিজেই একটি সম্পূর্ণ খাবার। যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্যই এটি পারফেক্ট চয়েজ। উৎসবে স্বাদ পেতে ভারতের হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি, কিমা, আওয়াদি মাটন, চিকেন রেশমি, মাখনি পনির, মাছলি বিরিয়ানির মতো সেরা বিরিয়ানিগুলো একবার ট্রাই করে দেখতে পারেন।
তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এসএমএন/এএ