কিন্তু মানুষকে সাহায্য করতে তো প্রয়োজন টাকার। টাকা আসবে কোত্থেকে! একসময় ছেড়ে দেন ধুমপান।
এমন দৃষ্টান্তমূলক নজির সৃষ্টি করেছেন টাঙ্গাইলের সজীব আহমেদ। নিজ উদ্যোগে প্রায় বারো বছর ধরে সমাজের সহায়সম্বলহীন মানুষের সাহায্য করে আসছেন তিনি। অভাবের কারণে ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলে ভর্তি করিয়ে, পড়াশোনার ব্যয় চালিয়ে, নিজ এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন সজীব।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া ইউনিয়নের চরবকশিয়া গ্রামের সজীবের ভালো কাজের তালিকা বেশ লম্বা।
এক বন্ধুর হাত ধরে ২০০৬ সালে প্রথম রক্ত দান করেন সজীব। সেই থেকে শুরু। মুঠোফোনে বাংলানিউজের সঙ্গে সজীবের যোগাযোগকালে জানা যায় তখনও এক রোগীকে রক্ত দিচ্ছেন তিনি।
এইচএসসি পাশের পর ঢাকায় একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনায় তার মন বসেনি।
নিজের পরিবার থেকেই শুরু করতে হয় ভালো কাজ-এটাই সব সময় কাজ করেছে মাথায়। তাই তো ফিরে যান গ্রামে। গ্রামের বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ ২০০জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে ২০১৫ সালে গড়ে তোলেন ‘সজীব আহমেদ গ্রন্থাগার’। মূলত এটি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। গ্রামের ছেলেমেয়েদেরকে পড়াশোনায় উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি আর্তমানবতার সেবায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেয় সংগঠনটি।
সংগঠনটির ৫০জন সদস্য প্রতিদিন মাঠপর্যায়ে কাজ করে। আশেপাশের গ্রামে ঝরে পড়া শিশুদের খুঁজে বের করে আর্থিক সহায়তা দিয়ে স্কুলে ভর্তি করানো হয়। শুধু তাই নয়। চলে নিয়মিত তদারকি। কেউ স্কুল ফাঁকি দিচ্ছে কিনা, পড়াশোনার অগ্রগতিসহ প্রত্যেক মাসে একটি করে কলম ও খাতা তুলে দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। ভালো ফলাফলের জন্য শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট, ডিকশনারি উপহার দেওয়া হয়।
দাতব্য একটি সংগঠন ‘হোপ বাংলাদেশ’ এর সহযোগিতায় একই উপজেলার আঠাইলশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্প্রতি একটি শহীদমিনার নির্মাণ করেছে তারা। এই ভাষার মাসেই সেটি উদ্বোধন করা হবে। অন্য একটি স্কুলে লাগানো হয়েছে ১২০টি গাছের চারা। ফেসবুকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে ৮-১০জন পঙ্গু ব্যক্তিকে হুইলচেয়ার বিতরণ করা ছাড়াও শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদসামগ্রী বিতরণসহ নানান সমাজসেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে সজীবের এই সংগঠনটি।
যারা ধূমপান করেন, নিজের শরীরের সুস্ততার জন্য ধূমপানের খরচ বাঁচিয়ে অভুক্ত শিশুর মুখে খাবার তুলে দেবার আহ্ববান জানান সজীব।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬ , ২০১৮
এমএসএ/এসআইএস