ফ্যাশন জগতকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্যাশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন বাংলাদেশের একজন সফল নারী হিসেবে। অবহেলিত নারীদের দিয়েছেন কাজের সন্ধান।
কীভাবে সফল উদ্যোক্তা হলেন, কীভাবে হাজারো নারীর কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছেন- এসব বিষয় নিয়ে নারী দিবসে বাংলানিউজের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। গল্পে গল্পে বলেছেন যে নারীর অনুপ্রেরণায় আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বাংলানউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ইয়াসির আরাফাত রিপন।
মাহিন খান বলেন, ‘আমার কাজের উদ্দেশ্য বাঙালি সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা। আমি দেশীয় সংস্কৃতি নিয়ে গবেষণা করেছি। জানার চেষ্টা করেছি গ্রামবাংলার মানুষের প্রাণের কথা। দেশের নানা অঞ্চল ধরে কাজ করেছি। এর মধ্যে কোথাও নকশিকাঁথা, কোথাও মৃৎশিল্প, কোথাও শীতলপাটি, সিল্ক, খাদি, টাঙ্গাইল শাড়ি নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। ’
কীভাবে তিনি এ কাজে অনুপ্রাণিত হলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মাহিন খান বলেন, ‘আমার জীবনের প্রধান অনুপ্রেরণা রয়েছেন একজন সফল নারী। তার কাজ ছিল খুবই সাংগঠনিক, কাজের মানসিকতাও ছিল তার। তিনি আড়ং এর প্রতিষ্ঠাতা শিলু আবেদ, আমার মা। তাছাড়া আমাদের পরিবারে বেগম রোকেয়ার ছোঁয়া আছে। আমার মায়ের আত্মীয় ছিলেন বেগম রোকেয়া। ’
তিনি বলেন, ‘টেক্সটাইল ও ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা ছিল। আমার কাজের শুরুটা ১৯৮৬ সালে আড়ং এর ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১২ বছর এর সঙ্গে ছিলাম। পরে ২০০১ সালে ‘মায়াসির’ ফ্যাশন হাউস প্রতিষ্ঠা করি। এখানে তিন হাজার নারীর কর্মসংস্থান আছে। এখানে এখন কারুশিল্পীদের নিয়ে, আমাদের দেশীয় নকশা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। দেশীয় ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ২০১৩ সালে ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (এফডিসিবি) গঠন করেছি। এফডিসিবিতে সব ডিজাইনাররা একত্রে কাজ করতে পারছে। ’
নারীরা এখনও অবহেলিত আছে, কীভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়া যায়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথমে নারীর ক্ষমতায়ন প্রয়োজন, নারীদের নিয়ে ভাববার বিষয় রয়েছে। তারা নানা অঞ্চলে এখনও অবহেলিত। আমরা তাদের নিয়ে কাজ করছি, তাদের এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তাদের ছোট ছোট লোন দিয়ে খামার বা দোকানের ব্যবস্থা করা যায়। ’
দেশে শিক্ষিত নারীরা সব দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে উল্লেখ করে মাহিন খান বলেন, ‘শুধু মেধাবী হলে হবে না, তাদের পরিবেশ, সংসার অনুকূলে থাকতে হবে। তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কীভাবে লোন পেতে হয় জানতে হবে, ব্যাংকেও এগিয়ে আসতে হবে। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান যেভাবে ক্যাপাসিটি বিল্ড করে সেভাবে নারীদের ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। তাছাড়া প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। দক্ষ করে গড়ে তুললে একজন নারী অবশ্যই সফল হবেই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের হিজড়া সম্প্রদায়ের (তৃতীয় লিঙ্গ) মানুষ এখনও নিজেদের আলাদা ভাবেন। কিন্তু বিশ্বের সব দেশে তাদের জন্য কোটা থাকে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে। আমরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তাদেরও সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে। তারাও মানুষ, সবাইকে নিয়েই আমাদের এগুতে হবে। ’
মাহিন খান বলে, ‘আমি সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আমার প্রতিষ্ঠানেও নারীদের কাজের সুযোগ হয়েছে। ‘মায়াসির’র সঙ্গে এখন তিন হাজার মেয়ে সরাসরি জড়িত আছে। মূল কথা হলো আর কোনো নারী অবহেলিত থাকবে না। আর নারীরা কেনই-বা অবহেলিত হবে, দেশটা সবার, সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে আগামীর দিকে। ’
ছবি তুলেছেন জি এম মুজিবুর/বাংলানিউজ
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
ইএআর/জিপি/এসআইএস