মেকআপপ্রেমী ফারহানা চৈতি মেকআপের ওপর দক্ষতা আরও পোক্ত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিতে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলের এমবিসি বিউটি একাডেমি থেকে এক বছরের ডিপ্লোমাকোর্স করেন। সিউলকে এশিয়ার ফ্যাশন, মেকআপ এবং স্টাইলের শীর্ষস্থানীয় প্রাণকেন্দ্র বলা হয়।
ফারহানা চৈতির মূল উদ্দেশ্য হলো তার জ্ঞান এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মেকআপে উৎসাহীদের মধ্যে সঠিক দক্ষতা ও মানসিকতা তৈরি করা। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সৌন্দর্যশিল্পের বিকাশে সহায়তা করা এবং বাংলাদেশের মেকআপের মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া।
তিনি বলেন সিওলে এমবিসি বিউটি একাডেমিতে কাজ করার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছি, মেকআপ মানুষের আবেগ, কৌতূহল ও মনোভাব দিয়ে পরিচালিত শিল্প ও বিজ্ঞানের ফিউশন। আমি কোরিয়ার শীর্ষস্থানীয় পেশাদার মেকআপ আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে এ কাজের সূক্ষ্মতা, ব্যাপকতা এবং ন্যাচারাল মেকআপের ওপর দক্ষতা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছি। তখন থেকেই মনে হলো মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে যেন এ আবিষ্কারের সঙ্গেই থাকতে পারি সব সময়।
তিনি বলেন, নিজেই নিজের মেকআপ করা আর অন্যের মেকআপ করিয়ে দেওয়া দুটো এক নয়। অন্যকে মেকআপ করিয়ে দেওয়া বেশ কঠিন। কারণ হলো মানুষের চেহারার বৈশিষ্ট্যের তারতম্য। অন্যকে মেকআপ করিয়ে দেওয়ার আগে হাইজিন, ত্বকের ধরন, স্কিন ইস্যু, কোন ত্বকের জন্য কোন ধরনের মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার করতে হবে এবং কী কী সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সেটা জেনে রাখা প্রয়োজন।
ফারহানা চৈতি বলেন, অবশ্যই মেকআপটা পেশা হিসেবে নিতে হবে ভালোবেসে, অন্য কিছুর জন্য নয়। তিনি বলেন, ফারহানা চৈতি’স মেকওভার ফিনেস (FARHANA CHAITY'S MAKEOVER FINESSE) নামে তিনি তার নিজস্ব মেকআপ স্টুডিও দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে সৌন্দর্য আত্মবিশ্বাস, মনোভাব ও নিজেকে ভালবাসার মাধ্যমে শুরু হয়। একজন ব্যক্তির সৌন্দর্য তার আত্মবিশ্বাস ও পজেটিভ মনোভাব দিয়ে শুরু হয়। আবেগ, পরিপূর্ণতা এবং সৃজনশীলতার সঙ্গে চেহারাটি ফুটিয়ে তোলাই মেকআপ শিল্পীর কাজ।
তিনি বিদেশে থাকার সময় বাংলাদেশের ফ্যাশন এবং সৌন্দর্যশিল্পের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তিনি বিশেষ দিবসে ডেইলি স্টারের লাইফস্টাইল, প্রথম আলোর নকশা এবং ২০১৮ এর ওয়ার্ল্ড কটন ডে ফ্যাশন শো ইত্যাদির সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি সিওলে থাকাকালীন গ্লোবাল বিউটি এক্সপো ২০১৭-তে অংশ নিয়ে বিয়ের মেকআপে স্বর্ণপদক পেয়েছেন। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক বিউটি এক্সপোতে অংশ নিয়েছিল বিভিন্ন হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনসহ কুয়ালালামপুর, মালয়েশিয়া ও এশিয়া প্যাসিফিকের শীর্ষস্থানীয় ১২টি দেশের হেয়ারস্টাইলিস্টরা। তিনি বলেন, এটি আমার জন্য অবাক করা এবং খুবই উপকারী অভিজ্ঞতা ছিল।
সুবিশাল অভিজ্ঞতা, কাজের প্রতি আবেগ ও স্টাইল সেন্সের কারণে ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয়ক্ষেত্রেই মাইকেল পোহ তার কাছে অনুপ্রেরণা। মাইকেল পোহ এশিয়ার একজন বিখ্যাত হেয়ার স্টাইলিস্ট এবং মালয়েশিয়ার হেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট। মালয়েশিয়া থাকাকালীন ফারহানা চৈতি নিয়মিত ফেমিনাইন ম্যাগাজিন, অ্যাস্ট্রো টিভি এবং প্রবাসী বাঙালিদের কমিউনিটি কুয়ালালামপুরের মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইলিস্ট হিসেবে পার্টি মেকআপ, বিয়ের মেকআপ থেকে থিম মেকআপ পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের মেকআপের ওপর কাজ করেছেন।
একজন মেকআপ আর্টিস্টের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো তার ক্লায়েন্টের চাওয়া এবং তার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা। অনুষ্ঠানে পরা পোশাক এবং ক্লায়েন্টের মুখের বৈশিষ্ট্যগুলো বিবেচনা করেই মেকআপ আর্টিস্ট খুব সহজেই জানেন যে কী ধরনের চেহারা এ ক্লায়েন্টের জন্য উপযুক্ত।
যদিও ক্লায়েন্টেরও কিছু নির্দিষ্ট চাওয়া থাকে। সেই চাওয়াগুলো প্রাধান্য দিয়ে ক্লায়েন্টের পছন্দমত লুক দেওয়াটাই একজন মেকআপ আর্টিস্টের প্রধান কাজ। তার মতে, সবারই তার ত্বক ও ত্বকের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মেকআপের পণ্য বাছাই করা অত্যন্ত জরুরি। ত্বকে কী ধরনের পণ্য স্যুট করে সে সম্পর্কে কিছুটা হোমওয়ার্ক করে নেওয়া ভালো। বিউটি এক্সপার্টদের সঙ্গে পরামর্শের পাশাপাশি ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখলে এবং মেকআপ সংক্রান্ত ব্লগগুলো পড়লে সবসময় সঠিক পণ্য বাছাই করতে সুবিধা হবে। ভালো পণ্যগুলো কিছুটা বেশি দামি হলেও সেগুলোই বাছাই করে ব্যবহার করাই ভালো।
তিনি বলেন, তিনি যেখান থেকে এসেছেন সেখানে ট্রেন্ড অনুযায়ী মেকআপ এবং নতুন নতুন ফিউশনের মাধ্যমে ন্যাচারাল মেকআপ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মেকআপ ইন্ডাস্ট্রিতে সেই প্রবণতা সৃষ্টি করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ফেসবুকের মাধ্যমে ফারহানা চৈতি সম্পর্কে আরও জানতে ভিজিট করুন ‘ফারহানা চৈতি’স মেকওভার ফাইনেস’ এর ফেসবুক প্রোফাইল: https://bit.ly/2U1VXa2।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২০
এফএম