ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

পবিত্র মাহে রমজানে সঠিক পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, মে ৩, ২০২০
পবিত্র মাহে রমজানে সঠিক পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য ছবি: সংগৃহীত

সিয়াম সাধনার মাস রমজান। মুসলমানদের জন্য এই একটি মাস খুবই গুরুত্ব বহন করে। খাবার গ্রহণের নিয়মে এবং খাদ্যাভাসে যথেষ্ট পরিবর্তন এ মাসে লক্ষণীয়। 
 

তবে এ বছরের রমজান মাস আমাদের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং। গতানুগতিক খাদ্যের মধ্যে একটু বৈচিত্র্যতাই এনে দিতে পারে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মূল শক্তি।

 

নিয়ম মেনে সচেতনতার সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করে আমরা খুব সহজেই সুস্থ থাকতে পারি। পাশাপাশি  ভিটামিন, মিনারেলস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বৃদ্ধি করতে পারি।

আসুন চটপট জেনে নেই রমজানের খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে:

ইফতার
ইফতারের শুরুতেই সামান্য পানি পান করুন। সঙ্গে ৩-৪ টি খেজুর নিয়ে নিন। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিকস রোগীদের জন্য মাঝারি সাইজের দু’টি খেজুরই যথেষ্ট। ইফতারে খেজুর আপনাকে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাবে। খেজুরে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,ফসফরাস,ক্যারোটিনয়েড। এছাড়া ভিটামিন-বি১, ভিটামিন-বি২।  

ইফতারে শরবত হিসেবে ডাবের পানি, লাচ্ছি, লেবুর শরবত,তোকমা দানা, ইসবগুলের শরবত,স্মুদি, ও চিনি ছাড়া বিভিন্ন ফলের জুস রাখা যেতে পারে। শরবতে চিনির পরিবর্তে মধু বা গুড় ব্যবহার করা যাবে।

এক গ্লাস শরবত নিমিষেই আপনার শরীরকে হাইড্রেট করবে। ডায়াবেটিক রোগীর জন্য পানীয় হিসেবে কচি ডাবের পানি খুবই উপকারী। তবে এছাড়া তাদের জন্য ফলের রসের পরিবর্তে ফ্রেশ ফল খাওয়া ভালো।
রোজায় সারাদিন পানি পান না করার ফলে শরীরে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স হয়, এসব তরল জাতীয় খাবার ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখে,সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে শরীরকে করে তোলে সতেজ ও প্রাণবন্ত।

ইফতারে ছোলা চমৎকার অ্যানার্জিটিক একটি খাবার। ছোলার ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ছোলার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। এটি খাওয়ার ফলে রক্তে গ্লুকোজ ধীরে ধীরে নিঃসরণ হয়। যার কারণে ডায়াবেটিকস রোগীরাও খেতে পারেন। এছাড়া ছোলাতে রয়েছে প্রোটিন,পটাসিয়াম, সোডিয়াম, ফলিক এসিড,জিংক যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়াতে সাহায্য করে।  

ইফতারের দই চিড়া অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। চিড়াতে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, আয়রন থাকে। আর দই একটি প্রোবায়োটিক যার ফলে এটি হজমে সাহায্য করে, অন্ত্রনালী পরিষ্কার রাখে। দইয়ে রয়েছে ক্যালসিয়াম,পটাসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,ভিটামিন বি-৬,ভিটামিন বি-১২, ইত্যাদি যা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে বুস্ট করে। দই চিড়া পেট ঠান্ডা রাখে।  

ইফতারে সেদ্ধ ডিম একটি আদর্শ খাবার
ইফতারে রাখুন বিভিন্ন রকম অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফলের সমাহার। তরমুজ,কলা,বাঙ্গি,পেঁপে,আনারস, পেয়ারা, মালটা আপেল ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মিক্সড ফ্রুট সালাদ বা দুধ ও বিভিন্ন ফল দিয়ে কাস্টার্ড করেও খাওয়া যেতে পারে।  

এছাড়াও সবজি ও চিকেন স্যুপ খাওয়া যেতে পারে,যা নিমেষেই আপনাকে শক্তি যোগাবে। কেউ চাইলে ভাত,মাছ ও সবজি খেতে পারেন। সবজি, ডিম দিয়ে নুডুলস বা পাস্তাও হতে পারে দারুণ একটি ইফতার আইটেম।  
অনেকে ইফতারে হালিম খেয়ে থাকেন। তবে এটি অতিরিক্ত মসলাদার খাবার হওয়ায় হজমের সমস্যা হতে পারে, তাই একটু বুঝেশুনে খেতে হবে।

রাতের খাবার
ইফতারে বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকলে সাধারণত  রাতের খাবার তুলনামূলক হালকা হওয়া উচিত।  ইফতার গ্রহণের পর অনেকের মাঝেই রাতের খাবার না খাওয়ার একটা প্রবনতা দেখা যায়। যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। ইফতারের তিন ঘণ্টা পর রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া উচিত।  
এক্ষেত্রে কেউ চাইলে রুটি দিয়ে সবজি খেতে পারেন। তাছড়া চিকেন বা ভেজিটেবল স্যুপ খেতে পারেন। দুধ -ভাত, দুধ দিয়ে রুটি, দুধ- মুড়ি বা দুধ দিয়ে সাগু রান্না করে খাওয়া যেতে পারে। দুধের সঙ্গে ওটস খাওয়া যায়।  

সেহেরি
যেহেতু সেহেরি গ্রহণের পর ইফতারের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ সময় আমরা না খেয়ে থাকি,সেজন্য সারাদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকার জন্য সেহেরিতে এমন শর্করা খাবার  নির্বাচন করতে হবে, যেগুলো ধীর গতিতে হজম হয় এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। সেক্ষেত্রে লাল চালের ভাত, লাল আটার রুটি, ওটস, লাল চিড়া খাওয়া যেতে পারে। ফাইবার বা আঁশ জাতীয় খাবার দেরিতে হজম হয় বলে ক্ষুধা কম লাগে। ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ।

সবুজ, হলুদ, কমলা রঙের শাকসবজি, মটরশুঁটি, টমেটো, গাজর, লাউ, পটল,ঝিঙে ইত্যাদি রাখা ভালো। সালাদ খাওয়া যেতে পারে। প্রোটিন জাতীয় খাবার অবশ্যই সেহেরিতে রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে অল্প চর্বি যুক্ত মাছ বা মাংস খেতে হবে। লো ফ্যাট দুধও খাওয়া যায়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে সেহেরিতে কেউ যদি ভাত, রুটি খেতে অনীহা প্রকাশ করে সেক্ষেত্রে দই, লাল চিড়া, কলা একটি উৎকৃষ্ট খাবার হবে। সঙ্গে কিছু খেজুর আর বাদাম যোগ করলে তো কথাই নেই। এটি অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। চাইলে ওটস এর সাথে মিক্সড সবজি এবং মুরগির মাংস যোগ করে রান্না করে খাওয়া যেতে পারে।

কিছু নির্দেশিকা
যতটা সম্ভব ইফতারে ভাজাপোড়া পরিহার করা উচিত। এতে করে অ্যাসিডিটি, বদ হজম, পেটের পীড়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।  

ডায়াবেটিকস রোগীরা তাদের ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করে নেবেন,যেন রক্তের গ্লুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়া না হয়।

সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চিবিয়ে খেতে হবে। তাহলে সহজে হজম হবে।

দেহে পানিশূন্যতা রোধে ইফতার থেকে সেহেরি পর্যন্ত ৮- ১০ গ্লাস পানি পান নিশ্চিত করতে হবে। অবশ্যই পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিতে হবে।  

অনেকেরই ইফতারে বেশি খাবার গ্রহণের প্রবনতা দেখা যায়। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়। তাই স্বাস্থ্যসম্মত ইফতার গ্রহণ করলে এবং অন্য বেলার খাবার গ্রহণের সাথে সামঞ্জস্য করে পরিমানমত খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এক্ষেত্রে ইফতার গ্রহণের দুই ঘন্টা পর একটু হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করা উচিত।

এছাড়াও
•    অধিক ভাজাপোড়া ও চর্বিযুক্ত খাবারকে না বলুন।
•    কোমল পানীয়,চা, কফি, তামাক সেহেরিতে খাওয়া যাবে না।  
•    সেহেরিতে ধূমপান করা যাবে না।
•    টিনজাত বা প্রসেসড ফুড, আচার, মাত্রাতিরিক্ত লবণ, চিনি বা মিষ্টি পরিহার করতে হবে।

কামরুন্নাহার বিথী, পুষ্টিবিদ কামরুন্নাহার বীথি, পুষ্টিবিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, মে ০৩, ২০২০
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।