ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

এই করোনাকালে তাদের কি চুলা জ্বলে? 

শারমীনা ইসলাম, লাইফস্টাইল এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এই করোনাকালে তাদের কি চুলা জ্বলে? 

সেদিন শম্পা-শাহিনের ঘর আলো করে ফুটফুটে এক দেবশিশুর জন্ম হয়েছে। শিশুটির খবর কীভাবে যেন পৌঁছে গেছে হিজড়াদের(তৃতীয় লিঙ্গ) কাছে।

তারা এসে শুরু করেছে যন্ত্রণা। টাকা দিতে হবে, না হলে যাবে না।  বাসে উঠে বসতে বসতেই একদল হিজড়া হাজির। কী চাই? আর কী, টাকা চায়।  

এভাবে টাকা চায় বলে আমরা অনেকেই হিজড়াদের ওপর বিরক্ত থাকি। কিন্তু...একবারও কি ভেবে দেখেছি, কেন হিজড়ারা এমন করে, তারাও কেন আমাদের মতো চলে না? ওরাও তো আমাদেরই পরিবারের, আপনজন।  

রানি হিজড়া দুঃখ করে বলছিলেন, তার তিন ভাই আর দুই বোন। সবাই শিক্ষিত, তারা সমাজের ভালো অবস্থানে রয়েছেন। রানির ঠাঁই হয়নি কোনো ভাই-বোনের কাছে। সে ঘুরে ঘুরে অন্য হিজড়াদের সঙ্গে টাকা তুলে জীবন চালায়।  

রানি বলেন, মানুষের কাছে চেয়ে চেয়ে টাকা তুলতে প্রথম দিকে অস্বস্তি হতো, পরে অভ্যাস হয়ে যায়। কেউ ভালো ব্যবহার করেই কিছু টাকা দেয়, কেউবা বিরক্ত হয়ে গালিও দেয়। তারপরও থাকা খাওয়ার কষ্ট করতে হয়নি কখনো। কিন্তু মহামারি করোনা আসার পর থেকে মানুষের কাছে হাত পাতলেও আগের মতো কেউ টাকা দেয় না। প্রায়ই খাওয়ার মতো কিছুই থাকে না ঘরে।  

দু’বেলা রান্নার জন্য চুলাও জ্বলে না কোনো কোনো দিন। কথা বলতে বলতে চোখের পানি মোছেন রানি। তার গল্প এখনো ফুরায়নি। ছোট বেলায় পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ এখনো তার মনে পড়ে, মায়ের হাতের খিচুড়ির স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে। এই যে করোনা যাচ্ছে, বেঁচে আছে না মরে গেছে সে খবরও রাখেনি পরিবারের কেউ।  

মানবিক চাওয়া পূরণ তো ঠিক আছে। তারপরও, অন্যদের বিব্রত করা কেন? জানতে চাইলে রানি বলেন,‘ক্যান আমাগো খিদা লাগে না, কাপড় লাগে না? কাপড় না পরলে বাইরে যাওয়া যায়? তোমরাই তো শরিল(শরীর) নিয়ে বাজে কথা কও। আমরা কি ভাইস্যা(ভেসে) আইছি? তোমাগো সবাই আছে, বাপ-মা-সমাজ। আমাগো কে দেখে?’ 

রানির কথার উত্তর দিতে গিয়ে আমরা অনেকেই নিরুত্তর হয়ে যাই। শুধু বলি, হিজড়ারাও আমাদের সন্তান, আমাদের পরিবারের একজন। একটি ছোট শিশুকে হিজড়ার কথা বলে ভয় না পাইয়ে, হিজড়াকেও যেন মানুষ হিসেবে ভালো বাসতে শেখাই।  

তাদের শিক্ষা ও কাজের প্রশিক্ষণ যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন সমাজের সবার সঙ্গে মিশে থাকার মতো মানসিক সক্ষমতা ও আগ্রহ তৈরিতে সহযোগিতা করা। সমাজের সব স্তরের কাজে নারী-পুরুষের সঙ্গে হিজড়াদেরও সমৃক্ত করতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।