ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাইফস্টাইল

যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হার মানায় ভূমিকম্প! 

লাইফস্টাইল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগকে হার মানায় ভূমিকম্প!  ভূমিকম্প

প্রকৃতির খেয়াল বোঝা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে যায়। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভূমিকম্প।

ঝড়ের মতো কোনো ধরনের আগাম সংকেত পাওয়া যায় না ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে। ফলে কোনো ধরনের প্রস্তুতিও থাকে না। এজন্য এর ভয়াবহতা হার মানায় সব ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগকে।       

ভূমিকম্পের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সামগ্রিক উদাসীনতার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। ভূপৃষ্ঠের নীচে বিদ্যমান ক্রাস্টের অপ্রত্যাশিত সঞ্চারণ ভূমিকম্পের জন্য দায়ী।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রবিন্দুর ঠিক ওপরের ভূপৃষ্ঠটি কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত। ভূমিকম্প এটির ধ্বংসাত্মক শক্তির কারণে ভয়াত্তক। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৭ মাত্রার ভূমিকম্প তরঙ্গ একটি ৬ মাত্রার ভূমিকম্পের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি শক্তিশালী এবং বেশি শক্তি সঞ্চার করে। ঘনবসতিপূর্ণ বাংলাদেশ তিনটি টেকটোনিক প্লেটের বিন্দুতে বসে রয়েছে: পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারতীয় প্লেট, উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট এবং পূর্বে বার্মার প্লেট। এছাড়াও, ভারত এবং বার্মার মধ্যে প্লেট সীমা বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে যায় এবং এই কাঠামোগত স্কোয়ারগুলো পূর্বের ভূমিকম্পগুলর জন্য দায়ী ছিল।  

বগুড়া ফল্ট, ত্রিপুরা ফল্ট, ডাউকি ফল্ট এবং আসাম ফল্ট অঞ্চল: আমাদের জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে ভূমিকম্পের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এগুলো ৭ থেকে ৮.৫ দশমিক মাত্রার ভূমিকম্প ঘটতে পারে। এই  অঞ্চলগুলোর মধ্যে, ডাউকি ফল্টের একটি অতীত ইতিহাস রয়েছে যা উচ্চ আকারের সিসমিক অ্যাটিভিটি এবং প্রভাব তৈরি করেছিল।

১৮৬৯ সালে সিলেট (শিলচার) এ ৭ কাচার মাত্রার ভূমিকম্প যে মাত্রাতিরিক্ত আঘাত করেছিল তার সঙ্গে ডাউকি ফল্ট সক্রিয় ছিল এবং সম্পর্কিত ছিল। এই বিষয়টি কিছুটা উবে গেলেও এটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিপদ হিসেবে বিবেচিত হয়। অতিসাম্প্রতিক গত ২০ বছর ধরে ভূমিকম্পের আকস্মিকতা ক্রমে প্রসারিত হচ্ছে। ১৯৯৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪.৫ মাত্রার তেরটিরও বেশি ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে এবং এর একটির কেন্দ্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ছিল সূত্র: বিজ্ঞান জার্নাল ন্যাচার (মাইকেল স্টেক্লেরিটাল, ২০১১) এবং এই গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী নদনদীর  তলদেশে ভূকম্পনের সম্ভবনার নতুন প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায় এবং এটিকে একটি পালভারাইজেশন জনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। এটি বাংলাদেশে ৮.২ থেকে ৯.০ মাত্রার এক ভূমিকম্পের কারণ হতে পারে। এতে বাংলাদেশ,  ভারত ও মায়ানমার জুড়ে প্রায় ১৪০ মিলিয়ন মানুষকে  প্রাভাবিত করতে পারে।

বিপর্যয়টি সরাসরি কাঁপুনির কারণে নাহলেও এটি বিস্তর নদীর তলদেশে ফাটলের মাধ্যমে ঘটবে এবং ঢাকা এই পালভারাইজেশন জোনের অভ্যন্তরে।
অপরিকল্পিত নগরায়ন, প্রশাসনের অনিয়ন্ত্রিত নজরদারি এবং অপর্যাপ্ত ঝুঁকি প্রস্তুতি এক ধরনের প্রতিরক্ষাহীনতা তৈরি করেছে। বিশ্বব্যাংক গ্লোবাল আরবান রিস্ক ইনডেক্স ২০১৩ ভূমিকম্পের ফলে প্রত্যাশিত বাংলাদেশের মৃত্যুহার এবং অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে রিপোর্ট করেছে। স্টানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিপর্যয় ঝুঁকি সূচক ২০১০ তে দেখা যায় ঢাকা পৃথিবীর আর ২০ টি নগর অঞ্চলের মধ্যে একটি যা ভূমিকম্প বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে অসহনীয়। ভূমিকম্প কেবল মানুষের জীবনের ক্ষতি করে না সঙ্গে সঙ্গে লাখ লাখ লোককে বাস্তুচ্যুত করে এবং গোটা দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতাকে মন্থর করে।  

এই মুহুর্তে যদি ৭ বা তারও বেশি মাত্রার একটি ভূমিকম্প হয় তবে সার্বিক উন্নয়ন ও বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এবং আমাদেরকে নিম্ন আর্থিক স্থিতিতে নামাতে পারে। আমরা ভূমিকম্পের কথা বলি এবং তারপরে আমরা দ্রুত এটিকে ভুলে যাই। আমরা ভূমিকম্পের ধ্বংসাত্মক ঘটনা নিয়ে কথা বলি শুধুই তখন যখন আকস্মিক ভূমিকম্পের আবির্ভাব ঘটে। আমরা উঁচু কাঠামো থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ি, আমাদের ক্ষতি হয়।  

তখন আমরা সতর্কতা অবলম্বন করি। সংবাদ মাধ্যম ঘটনাস্থলে ছুটে আসে, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। অনলাইন, পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে এবং লেখালেখি ও অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এটি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়।  

কিন্তু বাস্তবে, আমরা কিছু দিনের মধ্যে বিপদটির ভয়াবহতাকে ভুলে যাই। আমরা যেন পোস্ট শক ডিমেনশিয়াতে আক্রান্ত হয়ে যাই! ভূমিকম্পের প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশে এতদিনে কিছু হয়নি বিষয়টি এমন নয়। বাংলাদেশে ভূমিকম্পের প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

প্রযুক্তিগত প্রকল্প, উন্নয়ন প্রকল্প এবং ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স এবং সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুতকরণ থেকে শুরু করে; উল্লেখযোগ্য শহরাঞ্চলে স্বেচ্ছাসেবী বাড়ানো হয়েছে। বিপদ পরিকল্পনা, ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল জোনিং করা হয়েছে। তবুও ভূমিকম্পের সহনীয়তা অর্জনের জন্য যথেষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য অনেকগুলো কাজ দ্রুত করার প্রয়োজনীয়তা এখনো রয়ে গেছে।

এই মুহুর্তে, আমাদের জীবন এবং অর্থনীতি সুরক্ষিত করার জন্য আমাদের নিরাপদ ও ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামোর তৈরির পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এই সমস্যার পেছনে মৌলিক বিষয়গুলি যেমন- অপরিকল্পিত ও দুর্বল কাঠামো, সমীচীন পরিকল্পনা, কোড লঙ্ঘন, নিম্নমানের নির্মাণ এবং প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞের পরামর্শের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে না পারা, এগুলো সমাধানের বিষয়য়ে বিশদভাবে ভাবনার সময় এসেছে। আর এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন জনসচেতনতা।  

লেখা: প্রকৌশলী এস এম মুহাইমিনুল ইসলাম
গবেষণা পরামর্শক, হাউসিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইন্সিটিউট (এইচবিআরআই) 
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০২০
এসআইএস 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।