মাতৃদুগ্ধ পানে সারা বিশ্বে ৯৮টি দেশের মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ । বাংলাদেশকে ‘সবুজ’রঙের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
একটি সুস্থ জাতি গঠনে মায়ের সুস্বাস্থ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, একজন সুস্থ মা-ই পারেন একজন সুস্থ শিশুর জন্মদান করতে। জন্মের পর নবজাতকের সুস্থতা ও বিকাশের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যক শিশুখাদ্য হচ্ছে মায়ের দুধ। সন্তানের জন্য মায়ের দুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত তখনই হয়, যখন মা নিজে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হন।
শিশুকে মায়ের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে কয়েক দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি রীতিমত বিষ্ময়কর। সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ব্রেস্টফিডিং ট্রেন্ডস ইনিশিয়েটিভ (ডব্লিউবিটিআই) অনুযায়ী, শিশু বুকের দুধ পান করানোর ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন সবার শীর্ষে। মাতৃদুগ্ধের বিষয়ে দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবার ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। তবে মাতৃদুগ্ধের ব্যাপারে সচেতনতা বাড়লেও মায়ের স্বাস্থ্যের বিষয়ে এখনো মানুষের মধ্যে উদাসীনতা রয়েছে। ফলে দেশে এখনো মায়েদের একটা বড় অংশ পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। সার্বিকভাবে জাতীয় স্বাস্থ্যের উন্নতিকল্পে এ বিষয়ে এখনই নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
বিষয়টি সম্পর্কে পুষ্টিবিদ ডা. তাসনিম হাসিন বলেন, যারা নতুন মা হয়েছেন, নিয়মিত সুষম খাবার গ্রহণ করাটা তাদের জন্য খুবই জরুরি। এক্ষেত্রে পরিবারের সদস্য, বিশেষত স্বামীকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যেন প্রসূতি মা কোনো ধরনের অবহেলার শিকার না হন।
শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোর বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে ১৯৯২ সাল থেকে সারাবিশ্ব ও বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’। এরই ধারাবাহিকতায়, চলতি বছর আগস্টের প্রথম সপ্তাহ (১-৭ আগস্ট) বিশ্বের প্রায় ১২০টি দেশে ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ উদযাপিত হয়েছে। এবারের ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রটেক্ট ব্রেস্টফিডিং, এ শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি’, অর্থাৎ ‘মাতৃদুগ্ধ দানের সুরক্ষা সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব’।
বস্তুত শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো একটি সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। এই দায়িত্ব শুধু মায়ের একার নয়। এমনিতেই পরিবারের সব কাজের বোঝাই থাকে নারীর কাঁধে। এছাড়া সংসার ও কর্মক্ষেত্রের চাপ সামলিয়ে শিশুর যত্ন নিয়ে কর্মজীবী নারীদের জন্য আরো কঠিন। তাই সংসারের অংশীদার হিসেবে শিশুর মাতৃদুগ্ধ প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা পুরুষের দায়িত্ব। এই সময়টাতে স্ত্রীকে সার্বক্ষণিক সমর্থন ও উৎসাহ দেওয়া, যেকোনো প্রয়োজনে তাকে দ্রুত চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে সাহায্য করতে হবে স্বামীদের।
এ বিষয়টি তুলে ধরেই এবছর ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’ এর প্রতিপাদ্যে ‘শেয়ারড রেসপনসিবিলিটি’র প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে। আসলে- নবজাতকের জন্মের পর বাবাসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও শিশু ও মায়ের যত্নে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া উচিত। এসময় মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এসময় পুষ্টিকর খাবার বেশি বেশি করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে এবং শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশে জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে থেকে শুরু করে পূর্ণ ৬ মাস বয়স পর্যন্ত কেবল মায়ের দুধই পান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। এরপর সন্তানের বয়স দুই বছর হওয়া পর্যন্ত মায়ের দুধের পাশাপাশি বাড়তি খাবার হিসেবে ঘরে তৈরি খাবার চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তারা।
বিভিন্ন জরিপে দেখা যায়, নবজাতকের জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধ পান করালে মৃত্যুর হার কমে যায় ৩১ শতাংশ। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি আরও ১৩ শতাংশ কমে। সঠিকভাবে মাতৃদুগ্ধ পান শিশুকে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া ও সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। এছাড়া, শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশ ও প্রয়োজনীয় ডি হরমোন তৈরিতেও সাহায্য করে।
শিশুর পুষ্টি চাহিদা মেটাতে যেসব উপাদান যেমন অ্যামাইনো অ্যাসিড, প্রোটিন, শর্করা ইত্যাদি প্রয়োজন তা কেবল মায়ের দুধেই সুষমভাবে বিদ্যমান। মাতৃদুগ্ধ পান শিশুর দাঁত, হাড় ও অস্থির গঠন মজবুত করতে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে সুষম খাদ্য নিয়মিত ডিম, দুধ, দেশি ফল, মাছ, মাংস, ডাল এবং হরলিকস মাদারস প্লাসের মতো বাড়তি পুষ্টিকর খাবার মায়ের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০২১
এসআইএস