লন্ডন: লন্ডনে গ্লোবাল কোল ম্যানেজমেন্টের (জিসিএম) বার্ষিক সাধারণ সভা ঘেরাও করেছে বিক্ষোভকারীরা।
৯ ডিসেম্বর সকালে অভিজাত এলাকা হাইড পার্ক কর্নারের পাশে ৪ হ্যামিল প্যালেসের সামনে ফুলবাড়িতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন প্রকল্পের প্রতিবাদে এ সমাবেশ করে তারা।
স্লোগানে স্লোগানে জিসিএমের বিরুদ্ধে গগণবিদারী আওয়াজ তোলে বিক্ষোভকারীরা।
বাংলাদেশের তেল গ্যাস খনিজসম্পদ রক্ষা কমিটি, যুক্তরাজ্য শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এ প্রতিবাদে অংশ নেয় ওয়াল্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্ট, লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্ক, ফুলবাড়ি সলিডারিটি গ্রুপ, ইলিং ট্রেড ইউনিয়নিস্ট অ্যান্ড সোস্যালিস্ট কোয়ালিশন, স্যোস্যলিস্ট পার্টি, ইউরোপিয়ান একশন গ্রুপ অন ক্লাইমেট চেইঞ্জ, স্বাধীনতা ট্রাস্টসহ বিভিন্ন সংগঠন।
প্রায় ৩ ঘণ্টা ভবনের মূল ফটক ঘেরাও করে প্রতিবাদ জানায় তারা। মূল ফটকে কয়লা ফেলে ডার্টি কোল মাইনারদের নোংরা চেহারাটা তুলে ধরেন প্রতিবাদকারীরা। এসময় গ্যারি লাইয়ের গাড়ি পেয়ে ঘেরাও করে রাখেন তারা।
জিসিএমের কর্মকর্তা ও বিনিয়োগকারী সভা শেষে দেরিতে বের হলেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়েন তারা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, জিসিএমের বাংলাদেশে কোনো ভবিষ্যৎ নেই, গণপ্রতিরোধের মুখে তারা আর কখনোই ফুলবাড়িতে প্রবেশ করতে পারবে না।
সম্প্রতি জিসিএমের গ্যরি লাই সস্ত্রীক ফুলবাড়ি গিয়ে পুলিশ প্রহরায় পলিয়ে রক্ষা পান। তারা জিসেএমকে পুনরায় ফুলবাড়িতে প্রবেশ করার বিষয়ে হুশিয়ার করেন।
তারা বলেন, জিসিএমকে ফুলবাড়িতে মানব বসতি, প্রকৃতি ও পরিবেশ বিধ্বংসী উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। তারা আরো বলেন, ফুলবাড়িতে উর্বরতম ১৪ হাজার একর কৃষি জমি স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে, ২ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে, ৩৫ বছরব্যাপী অবিরাম পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ঐ অঞ্চলের পানির স্তর ২০-২৫ মিটার নামিয়ে ফেলা হয়েছে।
২ লাখ ২০ হাজার মানুষের পানির উৎস ধ্বংস করে বাংলাদেশের জন্য মাত্র ৬ শতাংশ উৎপাদন অংশীদারিত্বে উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লা উত্তোলন বাংলাদেশের জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না।
বক্তারা জিসিএমকে একটি প্রতারক কোম্পানি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, জিসিএম বংলাদেশ সরকারের সাথে কোনো চুক্তি বা আইনগত ভিত্তি ছাড়াই ফুলবাড়ির কয়লা খনি দেখিয়ে লন্ডন শেয়ার বাজার থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বক্তরা ব্রিটিশ সরকারকে প্রতারক কোম্পানি জিসিএমকে লন্ডন শেয়ার মার্কেটে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, তেল গ্যাস রক্ষা কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ডা. মুখলিছুর রহমান ও ড. আখতার সোবহান মাসরুর। ওয়ার্কার্স পার্টির ইসহাক কাজল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের মোস্তফা ফারুক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সৈয়দ এনাম, আবিদ আলী, শাহরিয়ার বিন আলী, লেখক ওয়ালি রহমান, ফুলবাড়ি সলিডারি গ্রুপের রুমান হাশেম।
আরো বক্তব্য রাখেন, শাহ এনাম, আহমেদ জামান, গোলাম আকবর মুক্তা, নুরুল ইসলাম, মেহজাবীন, সোস্যালিস্ট পার্টির পিটার মেসন, ওয়াল্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের এফি জর্ডন, ইলিং ট্রেড ইউনিয়নিস্ট অ্যান্ড সোস্যালিস্ট কোয়ালিশনের ক্রিস, ইউরোপিয়ান একশন গ্রুপ অন ক্লাইমেট চেইঞ্জের আনছার আহমেদ উল্লাহ, স্বাধীনতা ট্রাস্ট্রের জুলি বেগম প্রমুখ।
অপরদিকে, সাধারণ সভায় প্রক্সি হিসেবে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ প্রশ্নবাণে জর্জরিত করে তোলেন জিসিএমের সিইও মাইকেল ট্যাং ও ফুলবাড়িতে কয়েকদিন আগে প্রতিরোধের মুখে পড়া বাংলাদেশে নির্বাহী প্রধান গ্যরি লাইকে। সাধারণ সভার শুরুতেই কোনো আলোচনা না করে প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিতে চাইলে লন্ডন মাইনিং নেটওয়ার্কের রিচার্ড সলি তাতে বাধা দিয়ে আলোচনার দাবি করেন।
এরপর জাহানারা রহমান গ্যারি লাইয়ের কাছে জানতে চান তিনি কেন প্রতিরোধকারীদের সন্ত্রাসী বলে আখ্যায়িত করেছেন? জবাবে, গ্যরি প্রথমে বিষয়টি অস্বীকার করেলও এর বিপরীতে জিসিএম কোনো উত্তর দিতে পারেনি। দশ বছর কেটে গেলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ায় তিনি প্রকল্পের কোনো ভবিষ্যৎ নেই বলে সভায় অংশগ্রহণকারীদের জানান।
জিসিএমের বাংলাদেশ কাজ করার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই, বাংলাদেশের জ্বালানি সচিবের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে গ্যারি বলেন, জ্বালানি সচিব এ বিষয়ে অবগত নন।
বড়পুকুরিয়ায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব নয় বলে সাম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, সেখানে ফুলবাড়ির মতো ঘণবসতিপূর্ণ এলাকায় কি করে উন্মুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা সম্ভব? মতিন সরকারের এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে গ্যারি বলেন, বাংলাদেশের চাহিদা মেটানোর জন্য উন্মুক্ত পদ্ধতি দরকার।
ওয়াল্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের ক্রিস্টি রাইট ওইসিডি প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, জিসিএম ওইসিডি নীতিমালা লঙ্ঘণ করেছে।
ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট মুভমেন্টের স্যাম ব্রাউন বলেন, ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘ স্পেশাল রিপোর্টিয়ার্সরা এক বিবৃতিতে লাখ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন, পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসর অভিযোগ তুলে অবিলম্বে ফুলবাড়ি কয়লা প্রকল্প বাতিলের সুপারিশ করেন। অথচ এ বিষয়ে জিসিএমের কোনো সদুত্তর নেই।
স্যাম ব্রাউন জিসিএম ও সাধারণ সভাকে অবৈধ বলে মন্তব্য করলে উত্তেজনার মধ্য দিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবেই সাধারণ সভা ভেঙে যায়, বিফল মনোরথে ফিরে যান বিনিয়োগকারীরা।
সাধারণ সভার পুরো সময়টাই মাইকেল ট্যাং ও গ্যারি লাই প্রশ্নবাণে জর্জরিত হন, তর্কবিতর্ক আর উত্তর দিতে দিতেই অধিকাংশ সময় কেটে যায় তাদের।
তবে সভায় জিসিএম কর্মকর্তারা ফুলবাড়ি প্রকল্পের কাজ পেতে বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেবেন বলে জানান এ কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৪/আপডেট: ০৭২৯ ঘণ্টা