লন্ডন: ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ নিয়ে রেডডটের অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করেছেন পোল্যান্ড ফ্যাস্টিভালে অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নির্মাতা মইনুল হোসেন মুকুল।
মঙ্গলবার (৩০ জুন) পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এ চ্যালেঞ্জ করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশে সংবাদ সম্মেলন করে রেডডটের কর্মকর্তারা মইনুল হোসেন মুকুলের বিরুদ্ধে প্রতারণার যে সব অভিযোগ উত্থাপন করেছেন, তার প্রতিবাদে স্থানীয় সংগঠন বেঙ্গল আর্ট ফোরাম মঙ্গলবার (৩০ জুন) পূর্বলন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে মুকুল তার অবস্থান তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র নির্মাতা মুকুল বলেন, অনলাইনে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ সার্চ করলে এখন শুধু বিতর্ক আর বিতর্ক। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বব্যাপী গত অর্ধ যুগে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ যে ব্রান্ড ভ্যালু তৈরি করেছিল, গত এক সপ্তাহে তা ধ্বংস করে দেওয়ার দায়-দায়িত্ব রেডডটকেই নিতে হবে।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়ার্ক ওয়ার্ডে গাজী শুভ্রকে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’র পরিচালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এমন তথ্যের যুক্তি খণ্ডন করে মুকুল বলেন, ‘গ্রে অ্যাডভারটাইজিং কিংবা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কাছ থেকে গাজী শুভ্রর পরিচালনায় ওয়ার্ক-অর্ডার নিয়ে যদি তা আমাকে দিয়ে বানানো হয়, তবে তো এখানে প্রতারক হচ্ছেন গাজী শুভ্র, আমি নই।
তিনি বলেন, আপনি মাঠে না থেকে তো প্লেয়ার দাবি করতে পারেন না। পরিচালনা এমন একটি বিষয় আপনাকে মাঠে না থেকে এটি দাবি করার কোনো সুযোগ নেই।
বেশ কিছুদিন থেকেই ‘বিউটিফুল বাংলাদেশে’র অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তি নিয়ে বিতর্কের ঝড় বইছে দেশে-বিদেশে। ‘বিউটিফুল বাংলাদেশে’র পরিচালক হিসেবে দাবি করা মইনুল হোসেনকে অস্বীকার করে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে রেডডট সংবাদ সম্মেলন করলে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
সংবাদ সম্মেলনে মুকুল তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমি আপনাদের মাধ্যমে একটি কথা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই-‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ১০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রের আমি কোনো স্বত্ব দাবি করিনি। আমি এর প্রযোজক নই, এর প্লট, কনসেপ্ট আমার নয়, প্রোডাকশনও আমার নয়। আমি কখনও এসব দাবিও করিনি। আমি এটির পরিচালক ছিলাম। এর কম বা বেশি কোনো কৃতিত্বই আমি নিতে চাই না। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, আইসিসি, গ্রে অ্যাডভারটাইজিং এবং রেডডটের টোটাল টিমওয়ার্ক ছাড়া কখনই এমন কাজ করা সম্ভব হতো না। আমি শুধু দাবি করতে পারি ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ ১০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালকের ভূমিকাটুকু।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, গাজী শুভ্রসহ রেডডটের অনেকেই বহুবার সাড়ে ৩ মিনিটের ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’ সোশাল মিডিয়াতে শেয়ার দিয়েছেন। কিন্তু কখনই ১০ মিনিটের ফিল্মটি শেয়ার দেননি। এমনকি আজ পর্যন্ত না। গাজী শুভ্র কখনও বলেননি যে তিনি ১০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালক ছিলেন এবং তার শো রিলে ১০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রের কোনো ক্লিপ ব্যবহার করেননি।
মুকুল তার বক্তব্যের সমর্থনে এ সময় গাজী শুভ্র সেই সময়কার ফেইসবুক স্ট্যাটাসগুলো সাংবাদিকদের দেখান। সেই স্ট্যাটাসে শুধুই সাড়ে তিন মিনিটের তথ্যচিত্র নিয়েই কথা রয়েছে, ১০ মিনিট নিয়ে কোনো কথা নেই।
মুকুল বলেন, ‘বেশ অনেক পরে রেডডট’র পরিচালক জিয়াউল পাইকার জুয়েল ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’র পরিচালক হিসেবে আমাকে অ্যাপ্রিসিয়েশন লেটার দিলেন। জুয়েলের স্বাক্ষরসহ মূল কপিটি বর্তমানে আমার কাছে রয়েছে। ’ যা তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখান।
তিনি বলেন, এখানে আমার অ্যাওয়ার্ড ক্লেইম করার কিছু নেই। আমার ফিল্মটি যদি অ্যাওয়ার্ড পায়, তবে আমি সেই গৌরবের অংশিদার হতে পারি। বলতে পারি যে ফিল্মটি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে, আমি সেই ফিল্মটির ডিরেক্টর ছিলাম। আর যদি সাড়ে ৩ মিনিটের ফিল্মটিও পায়, তবুও আমি গর্বিত। কারণ আমি তো সেটিরও সহযাত্রী ছিলাম।
সংবাদ সম্মেলনে মুকুল উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে রেডডটের অ্যাপ্রিসিয়েশন লেটার, মূল চরিত্র ভিকি কার্টারের বক্তব্য, পার্শ্ব চরিত্র আদিবাসী গাইডের বক্তব্য, প্রোডাকশনের ছবি, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সরবরাহকৃত ডিভিডির ক্রেডিট লাইনও উপস্থাপন করেন।
সম্প্রতি বিউটিফুল বাংলাদেশ ‘স্কুল অব লাইফ’ ১০ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রের পরিচালনা নিয়ে প্রতরাণার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি এনেছেন জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকা মাহফুজ আনাম জেমস।
বিউটিফুল বাংলাদেশ ‘স্কুল অব লাইফ’ ১০ মিনিটের তথ্যচিত্রের পরিচালক হিসেবে পোল্যান্ড ট্যুরিজম ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল থেকে পুরস্কার পান মইনুল হোসেন মুকুল। সংবাদ সম্মেলনে তার ওই পুরস্কার গ্রহণকে প্রতারণার শামিল হিসেবে আখ্যায়িত করেন জেমস।
কিছুদিন আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে রেডডট আয়োজিত ‘মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিষয়: তথ্যচিত্র বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে মাহফুজ আনাম জেমস বলেন, মূলত এ তথ্যচিত্রের পরিচালক ছিলেন-গাজী নুরুদ্দিন আহমেদ শুভ্র। কিন্তু মুকুল প্রতারণা করে এ পুরস্কারটি নিজের করে নিয়েছেন।
জেমস বলেন, ‘২০১১ সালে বাংলাদেশে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড আইসিসির লোকাল পার্টনার ছিল। তখন বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে আইসিসি ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করে। এসব প্রামাণ্যচিত্রই হচ্ছে ‘বিউটিফুল বাংলাদেশ’।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৫
টিআই