ঢাকা, বুধবার, ২৮ কার্তিক ১৪৩১, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লন্ডন

ব্রিটেনে মার্চেন্ট নেভি ডে

দুই বিশ্বযুদ্ধে নিহত বাঙালি নাবিকদের স্মরণ

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
দুই বিশ্বযুদ্ধে নিহত বাঙালি নাবিকদের স্মরণ

লন্ডন: ব্রিটেনের মার্চেন্ট নেভি ডে উপলক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বাঙালি নাবিকদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।

রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে কেন্দ্রীয় লন্ডনের টাওয়ার হিলস্থ ট্রিনিটি স্কোয়ারের মার্চেন্ট নেভি স্মৃতিস্তম্বে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে এই শ্রদ্ধা জানানো হয়।



দ্যা নেভি ডে ও মার্চেন্ট নেভি স্মৃতিরক্ষা সার্ভিসের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এবারের শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত ব্রিটিশ নাবিকদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্মরণ ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ নেভিতে কর্মরত ভারতীয় উপমহাদেশের বিপুল সংখ্যক নাবিক নিহত হওয়ায় শ্রদ্ধা নিবেদন উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তৎকালীন ব্রিটিশ ঔপনিবেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

রোববার অনুষ্ঠিত এ শ্রদ্ধা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ পাশা হাবিব উদ্দিন, বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার পক্ষে ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার সিরাজুল ইসলাম, স্বাধীনতা ট্রাষ্টের পক্ষে মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লা ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক জামাল খান।

অনুষ্ঠানে রানীর প্রতিনিধি হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কমান্ডার জন লাডগেইট। এসময় মার্চেন্ট নেভি এসোসিয়েশনের পেট্রন জিম ফিটজ পেট্রিক এমপিও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মাচারের মাধ্যমে নিহত নাবিকদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। নিহতদের স্মরণে ব্রিটিশ রয়েল মেরিন সেনাদের একটি গ্রুপ বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে অনুষ্ঠিত প্যারেডে অংশ নেয়। এতে নেতৃত্ব দেন মার্চেন্ট নেভি এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট কমোডর রব ডরে, পেট্রন রাইট অনারেবল বেরন ওয়েষ্ট অফ স্পিথেড এবং ভাইস চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন মালকম মেথিসন।

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চিফ অব দ্যা রয়েল নেভি ফার্স্ট সি লর্ড এডমিরাল স্যার জর্জ জামবেলাস। রয়েল নেভি সদস্যদের দেওয়া গার্ড অব অনারে তিনি সালাম গ্রহণ করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ রয়েল নেভিতে বিপুল সংখ্যক নাবিক নিয়োগ দেয়া হয়। যুদ্ধের শেষ দিকে ব্রিটিশ মেরিন শ্রম শক্তির মোট ২০ ভাগই ছিলেন তৎকালীন ভারতীয় নাগরিক। টাওয়ার হিলস্থ ট্রিনিটি স্কোয়ারের মার্চেন্ট নেভি স্মৃতিস্তম্বে দুই বিশ্বযুদ্ধে নিহত নাবিকদের অনেকের নামই লিখা রয়েছে। এরমধ্যে মিয়া, লতিফ, আলী, চৌধুরী, উদ্দিন ও উল্লা নামের বিপুল সংখ্যক বাঙালিও রয়েছেন। এই নামগুলো ব্রিটিশ নাবিকদের মধ্যে বাঙালিদেরও একটি বিরাট অংশ ছিল তারই সাক্ষ্য বহন করে।

তবে স্মৃতিস্তম্বে নাম আছে শুধু এরাই যুদ্ধের সময় নিহত বা নিখোঁজ হননি, বাঙালি নাবিক, যাদের লস্কর নামে আখ্যায়িত করা হতো তাদের আরও বিপুল সংখ্যক দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় সাগরেই মৃত্যু বরণ করেন। এদের কারো নাম জানা যায়নি।

এক পরিসংখ্যান মতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বাঙালি বংশোদ্ভুত নাবিকদের মধ্যে নিহত হন ৩ হাজার ৪২৭ জন এবং বিরোধীদের হাতে বন্দি হয়ে কারাগারে যান ১ হাজার ২শ জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত বাঙালি নাবিকের সংখ্যা ছিলো ৬ হাজার ৬শ’, আহত হয়েছিলেন ১ হাজার ২২ এবং বন্দি হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন ১ হাজার ২১৭ জন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ নেভির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ নাবিকই ছিলো ঔপনিবেশ দেশগুলোর নাগরিক।

সাগরে হারিয়ে যাওয়া বাঙালি বংশোদ্ভুত নাবিক, যাদের স্থানীয় ভাবে লস্কর বা জাহাজি হিসেবে আখ্যায়িত করা হতো তাদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে গবেষণারত ব্যক্তি আনসার আহমেদ উল্লা।

শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে এসে তার অনুভূতি কেমন? বাংলানিউজের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আজকে ব্রিটেনে আমাদের সমৃদ্ধ কমিউনিটির গোড়া পত্তন কিন্তু করেছিলেন আমাদের ওই ‘লস্কর’রাই। এদের অনেকেই ব্রিটেনে আস্তানা গেড়েছিলেন বলেই পরবর্তীতে ভাউচার সিস্টেমে সুদুর সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে আসতে অনেকে সাহসী হয়েছিলেন। তাদেরই দীর্ঘ পরিশ্রমের ফল আমাদের আজকের সমৃদ্ধ কমিউনিটি।

আনসার বলেন, আজকের ব্রিটিশ সভ্যতা যে শুধুই শ্বেতাঙ্গদের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠেনি, আমাদেরও অবদান আছে এর প্রমাণ প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সাগরে হারিয়ে যাওয়া আমাদের পূর্ব পুরুষরা। সাম্রাজ্য ঠিকিয়ে রাখতে ব্রিটিশদের সঙ্গে তারাও প্রাণ দিয়েছেন।

সুতরাং এই সভ্যতার দাবিদার আমরাও। আজকে ব্রিটিশ নাবিকদের পাশাপাশি সাগরে হারিয়ে যাওয়া আমাদের পূর্ব পুরষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্রিটিশরা সেই অবদানেরই স্বীকৃতিই দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৫
এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

লন্ডন এর সর্বশেষ