লন্ডন: বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে ব্রিটিশ মিডিয়ার।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জন নিয়ে ব্রিটেনের প্রভাবশালী জাতীয় মিডিয়াগুলোর রিপোর্ট দেখে অনেকেই এমনটা মনে করছেন।
১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ ও বর্তমান সরকার বিরোধী শক্তির বিশ্বব্যাপী প্রচার প্রপাগান্ডায় আন্তর্জাতিক কোনো কোনো মিডিয়া এতোদিন কিছু কিছু নেতিবাচক প্রচারণা চালালেও সম্প্রতি এতে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে জনপ্রিয় ব্রিটিশ জাতীয় দৈনিক ‘দি গার্ডিয়ান’-এ ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার ও এর আগে বিবিসিতে বাংলাদেশের মিলেনিয়াম সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারসহ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
গার্ডিয়ানে ধারাবাহিকভাবে তিন পর্ব প্রতিবেদন প্রকাশের পর গেল মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের প্রশংসা করে দু’টি এবং বৃহস্পতিবার বাল্যশিক্ষা ও শিশু পুষ্টি নিয়ে আরও একটি রিপোর্ট প্রচারিত হয়। এসব রিপোর্টে অ্যাওয়ার্ড পাওয়া কাঁকড়া চাষি রানি মণ্ডল, অক্সফাম ট্রেনিংপ্রাপ্ত হামিদা ও গার্মেন্টস কর্মী নিপার ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প তুলে ধরা হয়।
তিন বাংলাদেশি নারীর ভাগ্য পরিবর্তনের গল্প ছাড়াও এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ মুসলিম দেশ বাংলাদেশের দায়িত্ব এখন নারীদের হাতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ছাড়াও রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে এখন নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। শেখ হাসিনা: আই ওয়ান্ট টু মেইক বাংলাদেশ পভার্টি ফ্রি- সাব হেডিং দিয়ে প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য কোট করা হয়। ওই মন্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তৃণমূল থেকেই আমরা নারীর ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আমাদের সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীতেও নারীরা কাজ করছেন। পুলিশ বাহিনীসহ প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য কাজের আরও পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ ও ন্যায্য মজুরি এখনও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি বলে ইঙ্গিত দেওয়া হলেও বাংলাদেশের গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি যে তিন দশমিক পাঁচ মিলিয়ন নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে তার প্রশংসা করা হয়। বাল্যবিবাহ নামক মহামারির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চলমান যুদ্ধসহ অন্যান্য বিষয়ও উঠে আসে প্রতিবেদনে।
এদিকে, সম্প্রতি লন্ডনের বাংলাদেশ হাইকমিশনে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রেস মিনিস্টার নাদিম কাদিরকে ডিপ্লোম্যাটিক প্রেস অ্যাসোসিয়েশন ও দ্যা ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ দেওয়া বাংলাদেশ ও এদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ব্রিটিশ মিডিয়ার আকর্ষণের আরও একটি প্রমাণ বলেই মনে করা হচ্ছে।
জানা যায়, নাদিম কাদিরই প্রথম বাংলাদেশি সাংবাদিক, যিনি এই দুই সংগঠনের মেম্বারশিপ পেলেন। আমন্ত্রিত হয়ে এরই মধ্যে চ্যানেল-ফোর স্টুডিও ও দ্যা মিডিয়া সোসাইটির- মিট দ্যা এডিটর প্রোগ্রামে যোগ দিয়েছেন শহীদ সন্তান নাদিম কাদির।
মিডিয়া বিষয়ক আরও কিছু মূলধারার অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ পাচ্ছেন তিনি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ডিপ্লোম্যাটিক প্রেস অ্যাসোসিয়েশন ও দ্যা ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশনের মেম্বারশিপ ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়াগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের একটি যোগসূত্র সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলেই আমি মনে করি। দু’টি সংগঠনের সদস্য হিসেবে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ইভেন্টসে অংশ নিতে গিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিকদের মধ্যে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করেছি। জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউনেপ) সর্বোচ্চ পরিবেশ বিষয়ক সম্মাননা- চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ পাওয়ার পর তাদের এই আগ্রহ আরও বেড়েছে। শুধু মূলধারার ব্রিটিশ মিডিয়া হাউসই নয়, স্থানীয় বাংলাদেশি মিডিয়া হাউসগুলোতেও এরই মধ্যে সৌজন্য সফর করেছেন নবনিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার। তার এইসব কার্যক্রম স্থানীয় সাংবাদিক মহলে প্রশংসিতও হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০২, ২০১৫
এসআই