লন্ডন: ব্রিটেনের অভিবাসী কমিউনিটির অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলস ভূমিকা পালন করায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউস অব কমন্সে অভিনন্দিত হয়েছেন জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্রেন্টসের (জেসিডব্লিউআই) সদ্য অবসরপ্রাপ্ত চিফ এক্সিকিউটিভ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হাবিব রহমান।
দীর্ঘ ১৬ বছর সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন শেষে গত শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) জেসিডব্লিউআই’র চিফ এক্সিকিউটিভ পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন হাবিব রহমান।
আর্লি ডে মোশনে অভিবাসী কমিউনিটির অধিকার রক্ষায় হাবিব রহমানের নিরলস সংগ্রামের কথা স্মরণ করে বলা হয়, অভিবাসী কমিউনিটির স্বার্থ রক্ষা, বৈষম্যহীন অভিবাসন পলিসি এবং ন্যাশনিলিটি ও রিফিউজি ল’ পলিসি এগিয়ে নিতে জেসিডব্লিউআই বিগত দিনগুলোতে যে ভূমিকা রেখেছে, তার সফল নেতৃত্বে ছিলেন চিফ এক্সিকিউটিভ হাবিব রহমান। মি. রহমান বিগত বছরগুলোতে জেসিডব্লিউআইকে সফলতার সঙ্গে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সরকারি দল কনজার্ভেটিভ পার্টি, বিরোধী দল লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশন্যাল পার্টি, ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টিসহ সব দলের এমপিদের সমর্থনে ব্যতিক্রমী এ মোশনটি পার্লামেন্টে গৃহীত হয়। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা অবসর গ্রহণের সময় আর্লি ডে মোশন উত্থাপন করে অভিনন্দিত করা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরল ঘটনা।
অবসর গ্রহণের আগে পার্লামেন্ট অভিনন্দিত করায় অভিভূত জেসিডব্লিউআই’র সদ্য অবসর নেয়া চিফ এক্সিকিউটিভ হাবিব রহমান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অভিবাসী কমিউনিটির স্বার্থে কতোটুকু ভূমিকা রাখতে পেরেছি তা আমি জানি না। তবে চেষ্টা করে গেছি। আমার সামান্য এ কর্মের স্বীকৃতি দিয়েছে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। এটি শুধু আমার নয়, আমার পুরো কমিউনিটির প্রাপ্তি বলেই মনে করি। আমি অভিভূত।
তিনি জানান, জেসিডব্লিউআইও জানতো না তার অবসর নেওয়ার মুহূর্তে পার্লামেন্ট এমন একটি মোশন উত্থাপন করবে।
অবসর জীবনেও তিনি অভিবাসী কমিউনিটির স্বার্থে কাজ করে যাবেন- এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে হাবিব রহমান বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি ও গবেষণার ইচ্ছে রয়েছে আমার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গেও কাজের সুযোগ রয়েছে। সুতরাং অবসরে গেলেও অভিবাসী কমিউনিটির সঙ্গে আমার দূরত্ব সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি না। বৈষম্যহীন অভিবাসন পলিসি পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি আছি অভিবাসী কমিউনিটির পাশে।
সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার সন্তান হাবিব রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন শেষে ১৯৬৯ সালে উচ্চশিক্ষার লক্ষ্যে প্রথম ব্রিটেন আসেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সাংস্কৃতিক গ্রুপে কাজ করতেন তিনি। এ গ্রুপের তৎকালীন সভাপতি বর্তমান প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানের সঙ্গে তিনি ছিলেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক।
ব্রিটেনে আসার পর বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনে (ইউসিএল) উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন হাবিব রহমান। শিক্ষা গ্রহণ শেষ হতে না হতেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তিনি জড়িয়ে পড়েন ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠনের আন্দোলনে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগ্রহের উদ্দেশ্যে গঠিত প্রথম সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হাবিব রহমান। কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম গৌস খান।
১৯৭৮-৭৯ সালে ব্রিটেনের ট্রেড ইউনিয়ন কর্মীদের অধিকারের স্বীকৃতির দাবিতে গঠিত ‘ট্রেড ইউনিয়ন রিকগনিশন রাইটস মুভভেন্ট’ এর চেয়ারম্যান ছিলেন হাবিব রহমান। ওই সময়ই তিনি ব্রিটেনে জাতীয়ভাবে পরিচিতি লাভ করেন। ভালো ভালো কাজের অফার থাকা সত্বেও নিজ কমিউনিটির অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য সামনে রেখে ১৯৮৩ সালে হাবিব রহমান যোগ দেন টাওয়ার হ্যামলেটস ল’ সেন্টারে। অভিবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে এ সময় তিনি নিরলসভাবে কাজ করেন।
পূর্ব লন্ডনে কাজী নজরুল সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হাবিব রহমান ১৯৮৩-৮৫ মেয়াদে টাওয়ার হ্যামেলটস অ্যাসোসিয়েশন ফর রেসিয়েল জাস্টিসের (তাজ) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯ সালে তিনি যোগ দেন জয়েন্ট কাউন্সিল ফর দ্য ওয়েলফেয়ার অব ইমিগ্রেন্টসে (জেসিডব্লিউআই)।
অবসর নেওয়ার আগ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠানে থেকেই ব্রিটেনের অভিবাসী কমিউনিটির অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অভিনন্দিত হাবিব রহমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০১, ২০১৫
এএসআর