লন্ডন: লন্ডনে ইউকে বাংলাদেশ ই-কর্মাস ফেয়ারের উদ্বোধনী দিনে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটির মোট ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুর ভিত্তিক মোট চারটি প্রতিষ্ঠান আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে এই বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম।
অন্যদিকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিমার্কের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ ওবিই, টেলিকম এশিয়ার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাফায়েত আলম ও টেকশেডের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন টেকশেড ইউকে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশান্ত দাশ গুপ্ত।
সিঙ্গাপুর ভিত্তিক টেলিকম এ- আইটি প্রতিষ্ঠান টেলিকম এশিয়া ই-কমার্স ফেয়ারে প্রস্তাবিত ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের খাত হিসেবে মোবাইল পেমেন্ট গেটওয়ে, ট্রিপল প্লে, আইটি অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স কনজিউমার প্রোডাক্ট ও বিশেষায়িত প্রযুক্তি পার্ককেই বিনিয়োগের জন্য বিবেচনায় রাখছে বলে জানিয়েছেন টেলিকম এশিয়া প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাফায়েত আলম।
এর আগে লন্ডনে দুই দিনব্যাপী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তোফায়েল আহমদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ আখ্যা দিয়ে বলেন, তথ্য প্রযুক্তিখাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পায়োনিয়ার হবে বাংলাদেশ। এ সময় তিনি বৃটেন প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান।
দেশের তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ,পাট ও এগ্রো প্রসেসিং শিল্পকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও লাভজনক বিনিয়োগের খাত হিসেবে উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমেদ।
বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসনীয় হচ্ছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, একটি সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। দেশে বিদেশি বিনিয়োগের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ বলে জানান তিনি। মন্ত্রী ইউরোপে শুল্ক মুক্ত ওষুধ রপ্তানির ব্যাপারে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান। যা আগামী ৭ বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী জুনায়েদ আহমদ পলক বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে বলেন, দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরকে ডিজিটাল রুপ দিতে আগামী ২ বছরে ১ লাখ তরুণকে আইসিটি ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ সময় তিনি দেশের সব বিভাগে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার সরকারি উদ্যোগের কথা জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, বৃটেনের অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার পল স্কেলী এমপি, জন রেডউড এমপি, সেকেন্ড ই-কমার্স ফেয়ারের অন্যতম স্পন্সর এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ ওবিই, প্রধান আয়োজক কম্পিউটার জগৎ এর চিফ এক্সিকিউটিভ আব্দুল ওয়াহিদ তমাল, এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট আব্দুল মতলুব আহমদ ও ইভেন্ট ডাইরেক্টর রহিমা মিয়া।
বৃটিশ এমপি পল স্কেলী বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে বৃটেনের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চাইলে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশিদের হাতে গড়া কারুশিল্প বৃটিশ অর্থনীতিতে প্রতিবছর যোগ করছে প্রায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড জানিয়ে পল স্কেলী বাংলাদেশের আইসিটি খাতে বৃটিশ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি ভেন্যুতে আইসিটি মন্ত্রণালয়, হাইটেক অথোরিটি ও কম্পিউটার জগতের উদ্যোগে আয়োজিত দ্বিতীয় ই-কর্মাস ফেয়ারে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
শনিবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মেলা চলবে। বৃটেনের আইটি ও টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে দু’দিনব্যাপী ই-কমার্স ফেয়ারের মোট ৬টি পৃথক সেমিনার ছাড়াও আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে বিটুবি সেশন অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫
আরএ