লন্ডন: লন্ডনে যুক্তরাজ্য (ইউকে) বাংলাদেশ ই-কর্মাস ফেয়ারের উদ্বোধনী দিনে চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথোরিটির মোট তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি ভেন্যুতে আইসিটি মন্ত্রণালয়, হাইটেক অথোরিটি ও কম্পিউটার জগৎ আয়োজিত দ্বিতীয় ই-কর্মাস ফেয়ারে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
যুক্তরাজ্য ও সিঙ্গাপুরভিত্তিক মোট চারটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই চুক্তি হয়েছে। চুক্তির আওতায় দেশ দুটি আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আর বেগম।
অন্যদিকে, বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সিমার্কের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদ (ওবিই), টেলিকম এশিয়ার প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাফায়েত আলম ও টেকশেডের পক্ষে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন টেকশেড ইউকে’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুশান্ত দাস গুপ্ত।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক টেলিকমে আইটি প্রতিষ্ঠান টেলিকম এশিয়া ই-কমার্স ফেয়ারে প্রস্তাবিত এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের খাত হিসেবে মোবাইল পেমেন্ট গেটওয়ে, ট্রিপল প্লে, আইটি অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন্স কনজিউমার প্রোডাক্ট ও বিশেষায়িত প্রযুক্তি পার্ককেই বিনিয়োগের জন্য বিবেচনায় রাখা হয়েছে বলে জানান টেলিকম এশিয়া প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ শাফায়েত আলম।
এর আগে লন্ডনে দুই দিনব্যপী ই-কর্মাস ফেয়ারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বাংলাদেশকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ আখ্যা দিয়ে বলেন, তথ্য প্রযুক্তিখাতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পায়োনিয়ার (অগ্রদূত) হবে বাংলাদেশ।
এ সময় তিনি যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান।
দেশের তথ্য প্রযুক্তি, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, পাট ও অ্যাগ্রো প্রসেসিং শিল্পকে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় ও লাভজনক বিনিয়োগের খাত হিসেবে উল্লেখ করেন তোফায়েল আহমেদ।
বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার আর্ন্তজাতিকভাবে প্রশংসনীয় হচ্ছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, একটি সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচেছন।
দেশে-বিদেশি বিনিয়োগের সব ধরনের নিরাপত্তা দিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান তোফায়েল আহমেদ।
মন্ত্রী ইউরোপে শুল্কমুক্ত ওষুধ রফতানির বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের কথা জানান। যা আগামী সাত বছরের জন্য কার্যকর থাকবে।
তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ সম্ভাবনার দিক তুলে ধরে বলেন, দেশের প্রত্যেকটি সেক্টর ডিজিটাল রূপ দিতে আগামী দুই বছরে এক লাখ তরুণ আইসিটি ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ সময় তিনি দেশের সব বিভাগে হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগের কথাও জানান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান, দেশটির পার্লামেন্ট সদস্য চেয়ার পল স্কেলি, জন রেডউড, সেকেন্ড ই-কমার্স ফেয়ারের অন্যতম স্পন্সর এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ (ওবিই), ফেয়াররের প্রধান আয়োজক কম্পিউটার জগৎ’র নির্বাহী প্রধান আব্দুল ওয়াহিদ তমাল, ব্যবসায়দের সংগঠন এফবিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট আব্দুল মতলুব আহমদ ও ইভেন্ট পরিচালক রহিমা মিয়া।
বৃটিশ এমপি পল স্কেলি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ব্রিটেনের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা চাইলে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশে তৈরি ক্ষুদ্র ও কারুশিল্প বৃটিশ অর্থনীতিতে প্রতিবছর যোগ করছে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন পাউন্ড।
ব্রিটেনের আইটি ও টেলিকমিউনিকেশন সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে দুই দিনব্যাপী ই-কমার্স ফেয়ারের মোট ছয়টি পৃথক সেমিনার ছাড়াও আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে বিটুবি সেশন অনুষ্ঠিত হবে। ফেয়ারটি চলবে শনিবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত।
শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের ওয়াটার লিলি ভেন্যুতে শুরু হওয়া ফেয়ারে বাংলাদেশ ও ব্রিটেনের তথ্য প্রযুক্তিবিষয়ক অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০১৫ (আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা)
টিআই