পূর্ব প্রকাশের পর
আমাজন রেইনফরেস্ট, ব্রাজিল থেকে: ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা নামার পরপরই অভিযাত্রী দলকে নিয়ে কুমিরের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন মারকো। নদী তটের নীরব নিস্তব্ধ একটি স্থানে এলে দূর থেকে দেখা যায় ছোট ছোট আলোকপিণ্ড।
কুমিরের চোখ থেকেই বেরিয়ে আসছে এ আলো। তিনি বলেন, রাতে কুমির চোখে দেখে না। সুতরাং, এসময়ই বাচ্চা কুমির ধরার সময়। মারকো সহযোগী পিউপিউ হাটু পানি ভেঙে আস্তে আস্তে এগিয়ে যায় সেই আলোকপিণ্ডের দিকে। হঠাৎ করে দুই হাত দিয়ে পানির মধ্যে খামছে ধরে কিছু। তুলে আনলে দেখা যায় দু’দুটো কুমির ছানা।
ইঞ্জিন বোটে নিয়ে আসা হয় ছানা দু’টোকে। একে একে সবাই হাতে নিয়ে ছবি তোলেন কুমির ছানার সঙ্গে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মারকো জানালেন ছানা দু’টো পুরুষ। কুমির সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য জানালেন তিনি। বলেন, কুমিরের চামড়া ও মাংস খুবই মূল্যবান। বিধায় কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে কুমির মেরে নিয়ে যায় স্থানীয় অনেকে। ফলে কুমিরের সংখ্যা কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
এই আশঙ্কা থেকেই কুমির মারা প্রতিরোধের লক্ষ্যে সরকারি অনুমতি নিয়ে ফার্ম করার নিয়ম চালু হয়। নতুন এ নিয়ম অনযায়ী একমাত্র নিবন্ধিত ফার্মই কুমিরের ডিম থেকে বাচ্চা উৎপাদন ও প্রাপ্তবয়স্ক হলে এর চামড়া ও মাংস বিক্রি করার অনুমতি পাবে। নিবন্ধন করা ফার্মগুলো জঙ্গল থেকে কুমিরের ডিম নিয়ে আসার অনুমতি পেলেও সব কুমিরের ডিম আনতে পারেন না, বা একই কুমিরের কয়েকটি এনে কয়েকটি রেখে আসারও কোনো সুযোগ নেই। একই কুমিরের বাসা থেকে সবগুলো ডিম আনতে হয়, কারণ কিছু রেখে এলে মানুষের স্পর্শ পাওয়া বাকি ডিম থেকে কুমির আর বাচ্চা ফোটায় না। ফলে এগুলো নষ্ট হয়।
পরিবেশের জন্যে কুমিরের স্বাভাবিক প্রজনন অব্যাহত রাখতে তাই কিছু কুমিরের সব ডিম এনে কিছু কুমিরের সব ডিম রেখে আসতে হয়। ওই রেখে আসা ডিম থেকে কুমিরের স্বাভাবিক প্রজননও হয়, আবার ফার্মের কুমির বিক্রি করে মাংস ও চামড়ার চাহিদাও পূরণ হয়। মারকো জানান, এই নিয়ম চালু করার পর বনাঞ্চলে এখন কুমিরের সংখ্যা আবার বাড়ছে।
এবারের গন্তব্য অন্য। সাপের রাজ্যে।
সাপ প্রজাতির মধ্যে অজগর হলো আমাজনের সবচেয়ে বড় সাপ। প্রাণী বিজ্ঞানীদের মতে ৩০ ফুটেরও বেশি দৈর্ঘ্যের অজগর আছে আমাজনে। এদের বলা হয় আমাজন লিজেন্ড। আমাজনে চার প্রজাতির অজগরের কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। এরমধ্যে গ্রিন অজগর সবচেয়ে বেশি পরিচিত। এটিই অজগর প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে বড়। মারকো জে লিমা অজগর সাপের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিলেন।
দুই নদীর সংযোগস্থল থেকে ফেরার পথে জঙ্গলের মধ্যেই পর্যটকদের মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা করা হয়। খাওয়া দাওয়া শেষে এখানেই নিয়ে আসা হয় একটি অজগর ছানা। অত্যন্ত শান্ত প্রকৃতির এ অজগর গলায় নিয়ে পর্যটকদের অনেকেই ছবি তোলেন। বাদ গেলাম না আমিও।
আগামী পর্বে থাকবে ধীর গতির প্রাণী শ্লথ, খাদক পিরানহার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এএ
** জাগুয়ার ও বিষাক্ত সাপের আতঙ্ক নিয়ে জঙ্গলে
** পৃথিবীর ফুসফুসে এক স্রোতে দুই নদী, পানির রং ভিন্ন