** অ্যাডভেঞ্চার আমাজন-১: পৃথিবীর ফুসফুসে এক স্রোতে দুই নদী, পানির রং ভিন্ন
** অ্যাডভেঞ্চার আমাজন-২: জাগুয়ার ও বিষাক্ত সাপের আতঙ্ক নিয়ে জঙ্গলে
** অ্যাডভেঞ্চার আমাজন-৩: কুমিরের আলোর চোখ, কাঁধে চড়লো অজগর!
পূর্ব প্রকাশের পর
আমাজন রেইনফরেস্ট, ব্রাজিল থেকে: দেখতে অনেকটা বানরের মতো, তবে বানর নয়। শ্লথ নামে এমন একটি প্রাণীর সঙ্গে পরিচয় হয় দুই নদীর সংযোগস্থল থেকে ফেরার পথে।
একটি শ্লথছানাকে তো গাছের মতো বুকে চেপে ছবিই তুলে ফেললেন পর্যটকরা। অলসতার কারণেই নাকি প্রাণীটির নামে হয়েছে শ্লথ।
পর্যটকদের মাছ ধরতেও নিয়ে যান মারকো। চারদিনের আমাজন সফরের সময় বেশ কয়েকটি ভোজনে খাবার টেবিলে ছিলো পিরানহা নামের ভয়ংকর এক রাক্ষুসে মাছ। কিন্তু মাছটি যে কত বেশি ভয়ংকর তা জানা গেলো মাছ ধরতে গিয়ে। ছিপ ফেলে কেউ কেউ ধরলেন কয়েকটি ছোট আকৃতির পিরানহা। তখন মারকো বললেন, এই মাছটির দাঁত এমন ধারালো যে, এরা নাকি নদীর অন্য মাছতো বটেই, আমাজন লিজেন্ড অজগরকেও সুযোগ পেলে টুকরে টুকরে খেয়ে ফেলে!
এবার ফিরি মানুষের পূর্বপুরুষখ্যাত বানরের গল্পে। আমাজন জঙ্গলে বহু প্রজাতির বানরের বসবাস হলেও আসলে কত প্রজাতি রয়েছে তা এখনও উদঘাটন করতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। সবশেষ ২০০৯ সালে মোরাজ টামারিন নামে বানরের নতুন একটি প্রজাতি আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা, যা আমাজনের ব্রাজিল অংশের গভীর অরণ্যে দেখতে পাওয়া যায়।
মানুষের কারণে বানরের অসহায়ত্ব নিয়েও অনেক তথ্য দিলেন মারকো জে লিমা। অসহায় বানরদের সহায়তায় নিজের পরিচালিত একটি ফাউন্ডেশনের কথা উল্লেখ করে মারকো জানান, অনেকেই নিজের বিনোদনের জন্যে বানর ছানা ঘরে নিয়ে পুষতে চান। এই চাহিদা থেকেই স্থানীয়দের কেউ কেউ মা বানরকে হত্যা করে শিশু বানর নিয়ে বিক্রি করে ওইসব বিনোদনপিয়াসী মানুষের কাছে।
বদ্ধ খাঁচায় থেকে থেকে ওই শিশু বানর যখন বড় হয়, তখন অলস বসে থেকে থেকে এদের শরীরের ওজন বেড়ে যায়। যৌবনে পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে এদের শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য এদের প্রয়োজন হয় সঙ্গীর। একদিকে শরীরে ওজন বেড়ে যাওয়া, অন্যদিকে শারীরিক চাহিদা পূরণের ব্যর্থতা- এসব কারণে একসময় মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওরা।
ফলে বানরগুলোর আচরণ হয়ে ওঠে আক্রমণাত্মক। তখন মালিকরা কিছুটা ভয়ে বা অতিষ্ঠ হয়ে আবার জঙ্গলে ছেড়ে দেন। যেহেতু শিশুকাল থেকে এরা খাঁচায় আবদ্ধ, সেহেতু জঙ্গলের জীবনযাপন সম্পর্কেও তারা থাকে অনভিজ্ঞ। ভয়ংকর সব জন্তু-জানোয়ারের হাত থেকে কীভাবে বাঁচতে হবে, খাবারই বা কেমন করে যোগাড় করতে হবে এরা কিছুই জানে না।
ফলে জঙ্গলেও এসেও এরা পড়ে আরও অসহায় অবস্থায়। মারকোর ‘দ্যা লিভিং রেইনফরেস্ট ফাউন্ডেশন’ এসব অসহায় বানরদেরই ট্রেনিং দিয়ে জঙ্গল জীবনের উপযোগী করে ছেড়ে দেয় আবার জঙ্গলে।
সম্পূর্ণ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ ফাউন্ডেশন পর্যটকদের দানের অর্থে পরিচালিত হয় জানিয়ে মারকো বাংলানিউজকে বলেন, ইউরোপ ও এশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি আছেন যারা বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়ে বানর কিনতে চান।
কিন্তু বদ্ধ খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসা এসব বানরদের ফের মানুষের বদ্ধ খাঁচায় ফেরত পাঠানোর ঘোর বিরোধী তিনি।
আমাজন জঙ্গলের মধ্যেই অবস্থান ইকোপার্ক জঙ্গল লজ’র। এ লজেই কেটেছে সফরের চারদিন। লজে ঢুকতেই প্রথম এসে স্বাগত জানায় লাল রঙের একটি টিয়ে। পর্যটকদের অনেকটা কাছে এসে এটি কথা বলে, কথা শোনে।
ইকোপার্ক কর্মচারীরা জানান, এটি তাদের পালিত কোনো টিয়ে নয়, জঙ্গল থেকেই আসে, আবার ফিরে যায়। নতুন পর্যটক দেখলেই কাছে এসে নিজের ভাষায় কথা বলে, পর্যটকদের কথা শোনে। মেরিন বায়োলজিস্ট মারকো জানান, এই প্রজাতির অসংখ্য টিয়ে আছে আমাজনে। এরা মানুষের কাছাকাছি আসতে খুব একটা ভয় পায় না।
রেইনফরেস্ট আমাজনের নিজ অংশের সংরক্ষণ যেভাবে করছে ব্রাজিল তা সত্যিই শিক্ষনীয়। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটক আসছেন আমাজন দেখতে। দেখছেন আমাজন ও নিও নিগ্র নদীর অপরূপ সৌন্দর্য। প্রকৃতির এতো কাছাকাছি এসে বিচিত্র ধরনের পশুপাখি, গাছপালা দেখে অসম্ভব ভালো লাগা নিয়ে তারা ফিরছেন নিজ আবাসভূমিতে।
প্রকৃতি ও বনের পশুপাখিরও যে বেঁচে থাকার অধিকার আছে আমাজন সংরক্ষণে ব্রাজিলসহ সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সংরক্ষণ পন্থা যেন সেই অধিকারেরই স্বীকৃতি। যেহেতু পর্যটকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়েই মূলত সংরক্ষণ করা হচ্ছে আমাজনকে, সেহেতু বিশ্ব পরিবেশ রক্ষায় ভ্রমণপিপাসু এ পর্যটকরাও রাখছেন বিশেষ ভূমিকা- এমনটাই বলতে পারি আমরা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এএ