লন্ডন: নিজের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের সিলেটি কমিউনিটির প্রশংসা করতে গিয়ে ফের মৌলবাদী শক্তির অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের শীর্ষ কলম সৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী।
শনিবার পূর্ব লন্ডনে ‘আমরা সিলেটবাসী’ নামে একটি সংগঠন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে আয়োজিত গাফফার চৌধুরীর জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত একটি লাইভ অনুষ্ঠানে প্রবীণ এই সাংবাদিকের মন্তব্য নিয়ে একটি গোষ্ঠী ধারাবাহিক অপপ্রচার শুরু করে।
এর প্রতিবাদে ‘আমরা সিলেটবাসী’ নামে এ সংগঠনটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়েজন করে।
এসময় আর বলা হয়, আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার পক্ষের শীর্ষ কলম সৈনিক। বাংলা, বাঙালি ও বাংলাদেশের পক্ষে বিরামহীন লেখনী তাকে বাঙালির ‘বাতিঘর’এ পরিণত করেছে, যে বাতিঘর অবিরত আলো ছড়াচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশের। আর এ কারণেই তিনি বার বার আলোর শত্রু , অন্ধকারের কীটদের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রবীণ কমিউনিটি নেতা নুর উদ্দিন আহমদ।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল সম্প্রতি লন্ডনের একটি বাংলা টেলিভিশনে বিশিষ্ট সাংবাদিক সাহিত্যিক অমর একুশে গানের রচয়িতা আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর ৮১তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরল মনে দেওয়া তার বক্তব্যের কিছু অংশের অপব্যাখ্যা করে বিভিন্ন মাধ্যমে অপপ্রচার করছে। ”
“এই মিথ্যাচারের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবাই একটি বিশেষ রাজনৈতিক চিন্তাধারায় বিশ্বাসী যা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি। যারা নিছক রাজনীতির স্বার্থে একটি অঞ্চলের সাধারণ মানুষের অনুভূতিকে রাজনৈতিক দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে তাদের আমরা ধিক্কার জানাই। ”
টিভি চ্যানেলের ওইদিনের অনুষ্ঠানে আয়োজক সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন-জানিয়ে তারা বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় সিলেট অঞ্চলের ব্রিটেন প্রবাসী সর্বস্তরের ভাইবোনদের জানাতে চাই, উক্ত অনুষ্ঠানে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তার বক্তব্যে অত্যন্ত খোলা মনে এবং কৃতজ্ঞচিত্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে ব্রিটেনে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রচার প্রসার ও রক্ষণাবেক্ষনের জন্য প্রবাসী সিলেটবাসীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ”
“প্রকৃত অর্থে এই অনুষ্ঠানে তিনি বাঙালি কমিউনিটির উন্নয়ন সংগ্রামে শিক্ষিত সমাজের নানা ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে এ ব্যাপারে তার হতাশা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেছেন, চার যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি ব্রিটেনে বসবাস করছেন। এই দীর্ঘ সময়ে তার দুর্দিনে যারা তাকে রাজনৈতিক এবং আর্থিকভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তারা সবাই ব্রিটেন প্রবাসী সিলেট অঞ্চলের মানুষ। সাধারণ সিলেটবাসীরাই ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং প্রসারে ভূমিকা রেখেছেন, আজও রাখছেন। ”
তিনি তথাকথিত শিক্ষিত একটি গোষ্ঠির তীব্র সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন, আমাদের সমাজে এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত এবং সংস্কৃতিবান মানুষ আছেন, যারা এই সাধারণ প্রবাসীদের কটাক্ষ করে বলেন ‘লাঙল টু লন্ডন’। যারা এ ধরনের কথা বলে ব্রিটেন প্রবাসী সহজসরল সাধারণ মানুষকে নিয়ে হাসি-তামাশা করেন তাদের নিন্দা জানানোর উদ্দেশ্যেই মূলত গাফ্ফার চৌধুরী এ বক্তব্যের অবতারণা করেন বলে ব্যাখ্যা দেয়া হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, “আমরা লক্ষ্য করছি যে, কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠী রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য গাফ্ফার চৌধুরীর বক্তব্যের অপব্যাখ্যা করছে। এই সুযোগে তারা নিজেরা ‘অতি সিলেট দরদী’ সাজার চেষ্টা করছে। এই স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী প্রবাসী সিলেটবাসীকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। সিলেটের ব্রিটেন প্রবাসীরা ভালো করেই জানেন, দেশের মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে আবদুল গাফফার চৌধুরী সব সময় ছিলেন সম্মুখ সারির যোদ্ধা। তার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার এবং মিথ্যাচার সুপরিকল্পিত। এই অপপ্রচারের মূল লক্ষ্য কোনো ব্যক্তি নন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং এর ধারকদের কণ্ঠরোধই এই অপপ্রচারের আসল লক্ষ্য।
সিলেটের সর্বস্থরের মানুষের প্রতি স্বাধীনতা বিরোধীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয় সংবাদ সম্মেলন থেকে।
এ সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রবীণ সাংবাদিক ইসহাক কাজল, সাংবাদিক সৈয়দ আনাস পাশা ও সাংবাদিক জুয়েল রাজ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন জামাল খান, সাংবাদিক আনসার আহমেদ উল্লাহ ও সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৬
এটি