লন্ডন: ১৯৯২ সালে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, সেই আন্দোলনের মাধ্যমে সঞ্চিত সাহস নিয়েই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতে পেরেছিলেন। কেবল শুরুই নয়, বিচারের রায়ে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড একে একে কার্যকরের মাধ্যমে নির্মূল কমিটির দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন সফলতার দ্বারপ্রান্তেও নিয়ে গেছেন প্রধানমন্ত্রী।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের যুক্তরাজ্য শাখা আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলছিলেন। মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে পূর্ব লন্ডনের মন্টিফিউরি সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সুলতান শরীফ, বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কবির, নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসহাক কাজল, সহ-সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম ও সহ-সাধারণ সম্পাদক জামাল খান কেক কেটে কমিটির ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এর আগে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, মহান ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টসহ বিভিন্ন সময় স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তির হাতে নিহত শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
অনুষ্ঠানে সুলতান শরীফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত বলেই বাংলাদেশে আজ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্ভব হচ্ছে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম নির্মূল কমিটি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন, একাত্তরের ঘাতকদের বিচারের আওতায় আনতে সেই আন্দোলন শেখ হাসিনাকে নিঃসন্দেহে সাহস যুগিয়েছে।
শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুলতান শরীফ বলেন, এই মহিয়সী নারী আরেক মহিয়সী নারী কবি সুফিয়া কামালকে সঙ্গে নিয়ে জিয়াউর রহমানের ‘বদান্যতায়’ বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত গোলাম আযমসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আজ সেই আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছেন, আমরা এজন্য এই তিন নারীর কাছে কৃতজ্ঞ।
হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম কবির বলেন, চব্বিশ বছর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সেটা আজ সফলতার দ্বারপ্রান্তে। আর এটি সম্ভব হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় বলেই।
তিনি বলেন, আজকের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পেছন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়েছিলেন বলেই তৎকালীন সরকারের প্রবল বাধার মুখেও জাহানারা ইমামের গণআদালত সফল হয়েছিলে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- নির্মূল কমিটির যুক্তরাজ্য শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইসহাক কাজল, কোষাধ্যক্ষ সাংবাদিক শাহ মোস্তাফিজুর রহমান বেলাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামাল খান ও নির্বাহী সদস্য শাহ তোফায়েল প্রমুখ।
তারা বলেন, বহু বাধা-বিপত্তি, জেল-জুলুম-হত্যার বন্ধুর পথ অতিক্রম করে গত ২৪ বছরে নির্মূল কমিটির আন্দোলন আজ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত ২১ জন শীর্ষস্থানীয় যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে, যা শহীদ জননীর আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় বলেই আমরা মনে করি।
তবে, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার বানচালের জন্য ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির সরকার উৎখাতের অপচেষ্টা হচ্ছে অভিযোগ করে বক্তারা এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
আলোচনা ছাড়াও আয়োজিত কর্মসূচির মধ্যে ছিলে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী শাহনাজ সুমি, বাপিতা, মুজিবুল হক মনি, রুবি হক এবং শিশু শিল্পী রাফা হক, নাহিয়ান পাশা ও আনভিতা।
অনুষ্ঠানে ব্রিটেনে বসবাসরত মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০১৬
এইচএ/