লন্ডন: ব্রিটেনের প্রবীণ রাজনীতিক, অলপার্টি পার্লামেন্টারি হিউম্যান রাইটস গ্রুপের ভাইসচেয়ার, বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু লর্ড এরিক এইভবারি আর নেই।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে সাউথ লন্ডনস্থ নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
গত এক বছর ধরে দুরারোগ্য ব্লাড ক্যানসার রোগে ভুগছিলেন প্রবীণ এই ব্রিটিশ রাজনীতিক। সম্প্রতি কয়েকদিন হাসপাতালে থাকার পর চিকিৎসকরা তাকে কোনো আশা নেই বলে বাসায় ফেরৎ পাঠান।
মৃত্যুর আগে স্বেচ্ছা মৃত্যুর আইনগত বৈধতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন ব্লাড ক্যান্সার আক্রান্ত প্রবীণ এই মানবাধিকার নেতা। পার্লামেন্টসহ বিভিন্ন ফোরামে তিনি এরপক্ষে প্রায়ই কথা বলতেন। তার মৃত্যুর আগে অন্তত পক্ষে স্বেচ্ছামৃত্যু ব্রিটেনে আইনগত ভিত্তি পাবে এমনটি আশা করতেন ক্যান্সার যন্ত্রনায় কাতর এই প্রবীণ নেতা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজন খ্যাতিমান মানবাধিকার নেতা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিলেন সদ্য প্রয়াত লর্ড এইভবারি। বাংলাদেশের প্রতি তার ছিলো আলাদা একটি টান। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্রিটেনে ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠনের চেয়ারের দায়িত্ব পালন করে গেছেন প্রবীণ এই নেতা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক কমিশনের চেয়ারের দায়িত্বেও ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই মানবাধিকার নেতা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামালসহ অন্যান্যরা ছিলেন এই কমিশনের সদস্য।
বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার উত্থান, রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদি ঘটনা ব্যাপক পীড়া দিত প্রবীণ রাজনীতিক এইভবারিকে। রাজনীতিকে পার্লামেন্ট কেন্দ্রিক করতে জাতীয় সমঝোতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রায় প্রতি বছরই লন্ডনে হাউস অফ লর্ডসে ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এইভবারি আয়োজন করতেন বাংলাদেশ বিষয়ক সেমিনার। এসব সেমিনারে সরকার ও বিরোধী দলীয় নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এক টেবিলে বসানোর চেষ্টা করতেন আজীবন গণতন্ত্রের পূজারী প্রবীণ এই রাজনীতিক।
বাংলদেশের সরকার ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিকরা লন্ডন এলে অনেকেই সাক্ষাত করতেন মানবাধিকার আন্দোলনের অভিভাবকতুল্য লর্ড এইভবারির সঙ্গে।
এছাড়াও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সাম্প্রদায়িকতা, সংখ্যালঘু নির্যাতনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিভিন্ন সময় বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন লর্ড এইভবারি। বাংলানিউজে প্রকাশিত তার সম্পর্কিত অনেক নিউজ নিজ ব্লগেও বিভিন্ন সময় প্রচার করেছেন তিনি।
সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক প্রচেষ্টার কারণে বাংলাদেশের সাংবাদিক, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবীসহ ব্যাপক জনগোষ্ঠির কাছেও পরিচিত ছিলেন ব্রিটিশ হাউস অব লর্ডসের প্রবীণ এই সদস্য।
লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ১৯৬০ সালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিতে (লিবডেম) যোগদানের পর ৬২ সালে গ্রেটার লন্ডনের অরপিংটন এলাকার উপনির্বাচনে তিনি প্রথম পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। ৭ হাজার ৮৫৫ ভোটের ব্যবধানে বিজয় ছিনিয়ে আনায় ওই সময় তিনি ‘অরপিংটন ম্যান’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পান। হাউস অব লর্ডসের সদস্য মনোনীত হওয়ার এক বছর আগে ১৯৭০ সালের পার্লামেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হন আলোচিত এই লিবডেম দলীয় রাজনীতিক। সেই থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাউস অব লর্ডসের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন লর্ড এইভবারি।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসএইচ