হংকং থিয়েটার, এলএসসি, লন্ডন থেকে: ব্রিটেনের এথনিক-মাইনরিটি ঐক্য গড়তে বঙ্গবন্ধুকে অনুপ্রেরণা মানছে শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয় লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স (এলএসই) স্টুডেন্ট ইউনিয়ন (এলএসইএসইউ)।
সোমবার (৭ মার্চ) এলএসই’র হংকং থিয়েটারে সংগঠনটির ব্লাক অ্যান্ড এথনিক মাইনরিটি সিরিজ লঞ্চ নাইটে ‘শেখ মুজিবুর রহমান- দ্য পয়েট অব পলিটিকস’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী বক্তৃতায় এলএসইএসইউ’র বিএমই অফিসার মাহাথির পাশা এ কথা জানান।
মাহাথির পাশা বলেন, আজ থেকে ৪৫ বছর আগে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ভাষণ দিয়ে গিয়েছিলেন তা আমাদের এখনও প্রেরণা যোগায়। একজন মানুষের অঙ্গুলি হেলনে একটি পুরো জাতি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়, এটি বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা।
তার উদ্বোধনী বক্তৃতার পর প্রদর্শিত হয় চিত্রনির্মাতা মঈনুল হোসেন মুকুল নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘বিজয়ের মহানায়ক’র ইংরেজি সাবটাইটেল ভার্সন ‘ভিক্টোরি’স গ্রেট হিরো’। এরপর আয়োজন করা হয় প্যানেল আলোচনার।
এলএসই’র সাবেক পোস্ট গ্রাজুয়েট চৌধুরী রেজা জুলফিকার মাহমুদের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের গ্রাজুয়েট বঙ্গবন্ধুর নাতনী আজমিনা সিদ্দিক রুপন্থি, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান, ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) নাদিম কাদির ও গ্রেটার লন্ডন অ্যাসেম্বলি’র মেম্বার মুরাদ কোরেশী।
আলোচনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার আব্দুল হান্নান। এলএসইসহ লন্ডনের বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীসহ এথনিক কমিউনিটির বিপুলসংখ্যক মানুষ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ রেহানার কন্যা আজমিনা সিদ্দিক রুপন্থি তার বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, নানাকে স্বচক্ষে দেখার সুযোগ হয়নি। ইতিহাসের পাতা ও মা-খালার কাছ থেকে তাকে জেনেছি।
এসময় তিনি নানী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান। রুপন্থি বলেন, বঙ্গবন্ধু হওয়ার পেছনে আমার নানীর অবদানের কথা শুনেছি মা ও খালার কাছে। ৭ মার্চের সেই ঐতিহাসিক ভাষণেও নাকি নানীর অনুপ্রেরণা ছিলো। ভাষণের আগে নানাকে রিলাক্সড থাকার পরামর্শ দিয়ে নানী বলেছিলেন, নিজে যা ভালো বুঝবে তাই বলবে, কারও কোনো পরামের্শর প্রয়োজন নেই। আসলে প্রত্যেক খ্যাতিমান পুরুষের পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে। আমার নানীও সেরকমই ছিলেন।
শিক্ষা-দীক্ষাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্রিটিশ-বাঙালি নতুন প্রজন্ম ব্যাপকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন রুপন্থি। এসময় তিনি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিন বাংলাদেশি কন্যার কথাও তুলে ধরেন। বলেন, সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন হাউস অব কমন্সে বাংলাদেশি পুরুষও ঢুকবেন।
আত্মপরিচয় সংকট থেকে বেরিয়ে এসে গর্বের সঙ্গে নিজেদের ব্রিটিশ-বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে নতুন প্রজন্মের প্রতি অনুরোধ জানান বঙ্গবন্ধুর এ নাতনী।
তিনি বলেন, আমি আমার মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমাদের বাংলা শিখিয়েছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি রুপন্থি তার বক্তৃতায় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি বিষয়ই উল্লেখ করেন।
সৈয়দ বদরুল আহসান তার বক্তৃতায় বাঙালিদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন।
নাদিম কাদির বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করেন। এসময় তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
মুরাদ কোরেশী মেধাবী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রজন্মের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাইকমিশনার আব্দুল হান্নান বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৬
এইচএ/