লন্ডন: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে প্রবাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ২ ব্রিটিশ ও ৩ ব্রিটিশ-বাংলাদেশিকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।
স্বাধীনতার মাস মার্চে ‘জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা-২০১৬’ শীর্ষক এ সম্মাননা দেওয়া হয় তাদের।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭টায় ‘জয় বাংলা ফাউন্ডেশন’ এর উদ্যোগে পূর্ব লন্ডনের অক্সফোর্ড হাউসে প্রথমবারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যা রাত ৯টা পর্যন্ত চলে।
অনুষ্ঠানে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় দুই ব্রিটিশ নাগরিক ডোনাল্ড চেসওয়ার্থ (মরনোত্তর) ও ভ্যালেন্টাইন হার্ডিং এবং তিনজন ব্রিটিশ বাঙালি মিসেস কলসুম উল্লা, দবির আহমেদ ও নুরুদ্দিন আহমেদকে বিশেষ সম্মাননা জানানো হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক আবদুল গাফফার চৌধুরী এবং লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার (প্রেস) নাদিম কাদির।
সাংবাদিক বুলবুল হাসানের উপস্থাপনায় শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’২০১৬ এর অন্যতম উদ্যোক্তা আনসার আহমেদ উল্লা।
এ সময় জয় বাংলা ফাউন্ডেশনের আরও দুই সংগঠক সৈয়দ আনাস পাশা ও সালিমা শারমিন হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন এলএসই স্টুডেন্ট মাহাথির পাশা। আলোচনা শেষে সংগীত পরিবেশন করেন কন্ঠশিল্পী আলাউর রহমান, ফজলুল বারী বাবু ও শিশু শিল্পী নাহিয়ান পাশা।
সম্মাননাপ্রাপ্তদের মঞ্চে ফুল দিয়ে বরণ করেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার প্রেস নাদিম কাদির, উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রধান অতিথি আবদুল গাফফার চৌধুরী।
ডোনাল্ড চেসওয়ার্থের পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী মার্ক টেডল।
প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ডোনাল্ডের মতো একজন মানবদরদীর সঙ্গে কাজ করতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে চেসওয়ার্থের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
বিদেশে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে চেসওয়ার্থের ভূমিকা প্রসঙ্গে টেডল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে চেসওয়ার্থকে দেওয়া ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ পদক গ্রহণ করতে আমি বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। এটি আমার জন্য অন্য এক অনুভূতি।
ডোনাল্ড চেসওয়ার্থকে ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ পদক দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
১৯৭১ সালে ভারতের শরনার্থী শিবিরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন নার্স ভ্যালেন্টাইন হার্ডিং। জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা গ্রহণ করে তিনি বলেন, আমি নিজে কখনও আশা করিনি এমন সম্মাননা পাবো।
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে জন্ম নেওয়া একটি সাহসী জাতির পক্ষ থেকে এমন সম্মাননা পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত।
এ সময় তিনি আদো বাংলায় বলেন, ‘আজ এখানে আসার সুযোগ পেয়ে আমি খুব খুশি। ’
মুক্তিযুদ্ধের শুরু লগ্নেই প্রকাশ্য সমাবেশে পাকিস্তানি পাসপোর্ট জ্বালিয়ে ব্যতিক্রমী নজির সৃষ্টি করেছিলেন তখনকার তরুণ দবির আহমেদ।
আজকের ৬৫ বছর বয়সী এই প্রৌঢ় বলেন, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো তাহলে ওইদিন আমরা যারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলেছিলাম, তাদের কি অবস্থা হতো? আজ তা চিন্তা করলেই কৃতজ্ঞতায়, শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে সেই মহামানবের প্রতি, যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক দেশটি আমরা পেতাম না।
বয়সের ভারে নুজ্য কলসুম উল্লা, আবেগে কিছুই বলতে পারেননি, অনেক স্মৃতি ভুলেও গেছেন। শুধু বললেন, আমাদের স্মৃতি প্রজন্মান্তরে বাঁচিয়ে রাখার এই উদ্যোগের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। ’
১৯৭১ সালের তরুণ নুরুদ্দিন আহমেদ, অভিভূত। তিনি সম্মাননা পাচ্ছেন বিষয়টি তার স্ত্রী সন্তানরা জানলেও জানতেন না নিজে। সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছিলো।
সম্মাননা গ্রহণ শেষে তিনি বলেন, চেতনার তাগিদে নিজ দায়িত্ববোধ থেকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সংগ্রহের কাজে নেমেছিলাম। কোনো একদিন এ জন্য যে সম্মানিত হবো তা ভাবিনি, আশাও করিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, এমন একটি উদ্যোগ বিস্তৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠকদের খুঁজে বের করতে সহযোগিতা করবে।
জয় বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রতিনিধি নাদিম কাদির বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার যে সংগ্রাম শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জয় বাংলা ফাউন্ডেশনের আজকের এ উদ্যোগ সেই সংগ্রামেই ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানের আয়োজকরা জানান, ‘জয় বাংলা মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এখন থেকে প্রতিবছরই আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রবাসী সংগঠকদের পর্যায়ক্রমে এ সম্মাননা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০১৬
এমএ/